৭-১ গোলের ম্যাচে ব্রাজিলের বিপক্ষে কি ইচ্ছা করেই আরও গোল করেনি জার্মানি?

ম্যাটস হামেলস

২০১৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিল ও জার্মানির মধ্যকার সেই সেমিফাইনালের কথা মনে আছে নিশ্চয়। জার্মানি বা ব্রাজিল—দুই দলের কোনো সমর্থকেরই ৭-১ গোলের সেই ম্যাচের কথা অজানা নয়। সেদিন খেলা শুরু হওয়ার ১১ মিনিটের মাথায় প্রথম গোল করেছিলেন টমাস মুলার। এরপর ২৩, ২৪, ২৬ ও ২৯ মিনিটের মাথায় পরপর ৪টা গোল করেন মিরোস্লাভ ক্লোসা, টনি ক্রুস ও সামি খেদিরারা। খেলার ৩০ মিনিটের আগেই ইওয়াখিম লুভের জার্মানি ৫-০ গোলে এগিয়ে যায়। প্রথমার্ধে এত গোল করলেও দ্বিতীয়ার্ধে জার্মানি গোল করেছিল মাত্র ২টি, হজমও করেছিল ১টি গোল।

জার্মানির সেই বিজয়ী দলের খেলোয়াড় ম্যাটস হামেলস পরে জানিয়েছিলেন, তাঁরা ইচ্ছা করেই বিরতির পর আর কোনো জাদুকরি খেলা খেলতে চাননি। তাঁরা শুধু চেয়েছিলেন ম্যাচটি শেষ করতে। ম্যাটস হামেলস বলেন, ‘আমরা শুধু চেয়েছি খেলায় মনোযোগী থাকতে। খেলার মধ্যে সেলেসাওদের কোনোভাবেই অপমান করতে চাইনি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, খেলার মধ্যে সিরিয়াস থাকতে হবে। তবে ব্রাজিলকে অপমান করা হয়, এমন কিছু থেকে বিরত থাকব। খেলার মধ্যে জয়-পরাজয় থাকবে। তবে প্রতিপক্ষকে সম্মান দেখাতে হবে। আমরা সে কাজ করেছি। দ্বিতীয়ার্ধের পর আমরা কোনো জাদুকরি খেলা দেখাইনি।’

বিবিসির নিক সাটনের মতে, জার্মানরা তাদের প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করে ফেলেছিল। সেলেসাওরা সেখানে স্বাগতিক ছিল। ক্লাব ফুটবলে অনেক ব্রাজিলিয়ান ও জার্মান একসঙ্গে খেলেন। হয়তো সে কারণেও তাঁরা নিজেদের সতীর্থদের অপমান করতে চাননি।

পুরো ম্যাচটাই যেন অবিশ্বাস্য ছিল ব্রাজিল সমর্থকদের কাছে

২০১৪ বিশ্বকাপে জার্মানির ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলেন অলিভার বেয়ারহফ। তিনি জার্মান টিভি নেটওয়ার্ক এআরডিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘অন্তত কিছু সময়ের জন্য এটি অপমানজনক ছিল। বিরতির সময় আমরা খেলোয়াড়দের বলেছিলাম, ফলাফলের দিকে শ্রদ্ধাশীল হতে। কোনোভাবেই ব্রাজিলকে উপহাস না করতে। আমরা খেলোয়াড়দের বলেছিলাম, শুধু মাঠে থেকে খেলা শেষ করতে। আমাদের খেলোয়াড়েরা তা–ই করেছে। স্বাগতিক হওয়ার চাপ কী, সেটা আমরা দেখেছি ২০০৬ বিশ্বকাপে। সেই চাপ আমরা ব্রাজিলিয়ানদের মধ্যে দেখতে পাচ্ছিলাম। দর্শকেরাও নিশ্চয়ই সেই চাপ দেখেছে।’

৯০ মিনিটের খেলা শেষে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৭-১। খেলার শেষে জার্মানিরা সেলেসাওদের সান্ত্বনা দিয়েছিল। বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে জার্মানির জয়টি ছিল সর্বকালের সবচেয়ে বড় জয়। ব্রাজিলের হয়ে একমাত্র গোলটি করেছিলেন অস্কার। অবশ্য অস্কারের গোলটির কিছুক্ষণ আগেই মেসুত ওজিল ১টি গোল মিস করেন। ওই গোল হলে ব্যাপারটি আরও খারাপ হতে পারত।

ম্যাচ শেষে হতাশায় ভেঙে পড়া ব্রাজিলের খেলোয়াড়দের সান্ত্বনা দিয়েছিল জার্মানির খেলোয়াড়েরা

ম্যাটস হামেলস আরও বলেছিলেন, ‘আমি ব্রাজিলের জন্য করুণা করিনি। তবে আমি তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছিলাম। আমরা ঠিকভাবে খেলা চালিয়ে গেলেও তাদের ঠাট্টা করিনি।’

বিরতির পরও ৬৯ ও ৭৯ মিনিটে ২টি গোল দিয়েছিল জার্মানি। আরও ১টি গোলও অল্পের জন্য হয়নি। ফলে আসলেই এমন চিন্তাভাবনা জার্মানরা করেছিল কি না, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে। তবে অন্যভাবে চিন্তা করলে দেখা যায়, বিরতির আগে ৫ গোল খেয়েছিল ব্রাজিল। ম্যাচের ফলাফল তখন প্রায় নিশ্চিতই। তাই হয়তো অমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জার্মানি। আর এ জন্য বেশি আক্রমণ করেনি তারা। তবে যাচ্ছেতাই খেললে আবার মনে হতে পারত তারা ব্রাজিলকে করুণা করছে। সে জন্য খুব জাদুকরি কিছু না করলেও স্বাভাবিক খেলাটাও চালিয়ে গেছে তারা। আর সে জন্যই এসেছিল ওই ২ গোল।

এ ম্যাচ জিতলেই ফাইনালে চলে যেত ব্রাজিল, তার বদলে স্বাগতিকদের বাড়ি ফিরতে হয় হতাশা নিয়ে

২০১৪ বিশ্বকাপের দুর্দশা সঙ্গী করে পরের বিশ্বকাপে মাঠে নেমেছিল ব্রাজিল। ২০১৮ সালের সেই বিশ্বকাপে খুব বেশি ভালো না করলেও এবারের বিশ্বকাপে তারা দারুণ ছন্দে আছে। যদিও ব্রাজিল স্কোয়াডে অনেকেই ইনজুরির কবলে পড়েছে, কিন্তু তাঁদের বেঞ্চের খেলোয়াড়েরাও দারুণ শক্তিশালী। ব্রাজিলের এই দল তাই ষষ্ঠবারের মতো শিরোপা জিতলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।

সূত্র: ইএসপিএন, ব্লিচার রিপোর্ট