যে কারণে মার্চ মাসে আইসিসির সেরা খেলোয়াড় হলেন সাকিব আল হাসান

সাকিব আল হাসানছবি: শামসুল হক

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল বা আইসিসির মার্চ মাসের সেরা পুরুষ খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ১২ এপ্রিল এ খবর জানিয়েছে আইসিসি। নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের আসিফ খানকে পেছনে ফেলে মার্চের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন সাকিব।

মার্চ মাসে সাকিবের পারফরম্যান্স ছিল এককথায় দুর্দান্ত। পয়লা মার্চ থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চলে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ সিরিজ হারলেও সাকিবের ব্যাট হেসেছে। পেয়েছেন উইকেটও। প্রথম ওডিআইতে সাড়ে চার ইকোনমিতে তুলে নিয়েছেন এক উইকেট। এদিন অবশ্য ব্যাট হাসেনি সাকিবের। রান করেন মাত্র ৮।

দ্বিতীয় ওডিআইতে সাকিব এক উইকেট নিলেও হেসেছে তাঁর ব্যাট। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৯ বলে ৫৮ করেও জয়ের দেখা পায়নি তাঁর দল। চট্টগ্রামে গিয়ে অবশ্য ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। সাকিবের ঝুলিতে যায় চারটি উইকেট। বল করতে গিয়ে করেছেন আরও কিপটেমি। ইকোনমি রেট মাত্র ৩ দশমিক ৫। তাঁর ব্যাটের হাসি এদিন আরও চওড়া হয়েছে। আবারও বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭১ বলে ৭৫ রানের ইনিংস খেলেন। ম্যাচটি বাংলাদেশ জেতে ৫০ রানে।

সব মিলিয়ে ওডিআই সিরিজে সাকিব ব্যাক টু ব্যাক অর্ধশতক হাঁকিয়ে রান করেছেন ১৩৭। সঙ্গে উইকেট ৬টি। অবশ্য ২০১৬ সালের পর এই প্রথম ঘরের মাটিতে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের পর টানা ৭ সিরিজে ঘরের মাঠে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।

যা হোক, টি-টোয়েন্টিতে ফিরে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ায়। সাকিবের নেতৃত্বে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জেতে। টি-টোয়েন্টি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করে টাইগাররা। প্রথম ম্যাচে ১ উকেটের পাশাপাশি সাকিবের অবদান ২৪ বলে অপরাজিত ৩৪।

দ্বিতীয় ম্যাচে সাকিবের বোলিং আরও ক্ষুরধার। ৩ ওভারে ১৩ রানের বিনিময়ে তুলে নেন এক উইকেট। এদিন অবশ্য ব্যাটে রান পাননি সাকিব। শেষ ম্যাচে ৪ রানে নট আউট থেকে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয়। বোলার সাকিব এদিনও এক উইকেট ঝুলিতে ভরেন। তিনটি উইকেট শিকারের পাশাপাশি করেন ৩৮ রান।

একনজরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিবের পারফরম্যান্স

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ শেষ হতে না হতেই শুরু হয় আয়ারল্যান্ড বধের কাব্য। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩৩৮। সাকিবের সর্বোচ্চ রান ৯৩। বল হাতেও নিয়েছেন এক উইকেট। বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া দিনে বাংলাদেশ ৫০ ওভারে করে দলীয় ৩৪৯ রান। সাকিবের ব্যাট অবশ্য ম্লান ছিল এদিন। ১৭ রান করেই ফিরে গেছেন সাজঘরে।

তৃতীয় ওডিআইতে সাকিবের করার জন্য কিছুই ছিল না। আয়ারল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করে ১০১ রানেই গুটিয়ে যায়। ২৮ ওভার ১ বল খেলা চললেও সাকিবের হাতে একবারের জন্যও বল দেননি তামিম। ১০ উইকেট নিয়েছেন তিন পেসারই।

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ সিরিজ জেতে ২-১ ব্যবধানে। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের রান ১৯.২ ওভারে ২০৭। সাকিব ১৩ বলে ২০ রান করে অপরাজিত ছিলেন। বৃষ্টির কারণে খেলা নেমে আসে ৮ ওভারে। এক ওভার বল করে ছিলেন উইকেটশূন্য। দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের দলীয় রান ২০২। সাকিবের ২৪ বলে ৩৮ রানের ইনিংস। বল হাতে সাকিব নাকানিচুবানি খাইয়েছেন আয়ারল্যান্ডের ৫ ব্যাটসম্যানকে। তৃতীয় ম্যাচটি বাংলাদেশ হেরে যায়। সাকিব এদিন ৬ রান করার পাশাপাশি ছিলেন উইকেটশূন্য।

একনজরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিবের পারফরম্যান্স

মার্চে সাকিব মোট ১২ ম্যাচ খেলে রান করেছেন ৩৫৩। সঙ্গে উইকেট ১৫টি। এ ছাড়া তাঁর নেতৃত্বে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয় তো আছেই।

মাসসেরা হয়ে সাকিব জানিয়েছেন, ‘আমি এ পুরস্কার পেয়ে সম্মানিত বোধ করছি। যে বিশেষজ্ঞ প্যানেল আমাকে ভোট দিয়েছে, তাদের ধন্যবাদ দিতে চাই। এ স্বীকৃতির মূল্য আমার কাছে অনেক। কারণ, গত মাসে দুর্দান্ত কিছু ক্রিকেটার বেশ ভালো পারফরম্যান্স করেছিল।’

এবার চলো সাকিবের দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর পারফরম্যান্সে একটু চোখ বুলিয়ে আসা যাক। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক তিন ইনিংস খেলে একটি সেঞ্চুরি ও একটি ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। প্রথম টেস্টে জয়ের জন্য কিউইদের দরকার ছিল ২৮৫ রান। সেঞ্চুরি করে দলের হাল ধরেন উইলিয়ামসন। এরপর দ্বিতীয় টেস্টের পঞ্চম দিনে নিউজিল্যান্ডের দরকার ৫২ ওভারে ২৫৭ রান। শেষ ৯ ওভারে দরকার ৫৫ রান। উইলিয়ামসন তখনো মাঠে। বৃষ্টির কারণে পিচ স্লো হয়ে যাওয়ায় বিপদে পড়ে কিউইরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ৮ রান। ৩ বলে ৫। অধিনায়ক চার মেরে ম্যাচে সমতা আনেন। খেলা গড়ায় শেষ বল পর্যন্ত। যা হোক, টেস্টের এই টান টান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে অবশেষে জয় পায় নিউজিল্যান্ড। দুই ম্যাচেই জয়ের জন্য বড় অবদান রেখেছিলেন কিউই অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন।

আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী সংযুক্ত আরব আমিরাতের আসিফ খান। অনেকেই হয়তো এই মারকুটে ব্যাটসম্যানকে চিনবে না। আইসিসি পুরুষ ক্রিকেট বিশ্বকাপের লিগ ২ বাছাইপর্বে আসিফ দুটি অর্ধশতকের পাশাপাশি একটি সেঞ্চুরি করেছেন। ৪২ বলে অপরাজিত ১০১ রানের ঝোড়ো ইনিংসে ছিল ৪টি চার ও ১১টি ছয়। তাঁর কৃতিত্বেই আরব আমিরাত সরাসরি বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব খেলার সুযোগ পাচ্ছে।

মূলত ২০২১ সাল থেকে চালু হয়েছে আইসিসির মাসসেরা পুরস্কার। প্রতি মাসে একজন করে নারী ও পুরুষ ক্রিকেটারকে সেরা ঘোষণা করা হয়। এর আগে ২০২১ সালের জুলাই মাসে সাকিব সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন। সেবার জিম্বাবুয়ে সফরে ওয়ানডেতে ১৪৫ রানের পাশাপাশি নিয়েছিলেন ৮ উইকেট। টি-টোয়েন্টিতে ৩ ও টেস্টে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট।

বাংলাদেশের হয়ে এর আগে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। ২০২১ সালের মে মাসে পাকিস্তানের হাসান আলী ও শ্রীলঙ্কার প্রভিন জয়াবিক্রমাকে পেছনে ফেলে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন আইসিসির প্লেয়ার অব দ্য মান্থ। ওই মাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে মুশি একটি শতক ও অর্ধশতকে করেছিলেন ২৩৭ রান।

মার্চ মাসে আইসিসির সেরা নারী ক্রিকেটার হয়েছেন রুয়ান্ডার ১৯ বছর বয়সী অলরাউন্ডার হেনরিয়েট ইশিময়ে। ঘানার বিপক্ষে ২২ বলে ৩২ রান করার পর ৪ রানে নেন ৪ উইকেট। এ ছাড়া ক্যামেরুনের বিপক্ষে ৩৩ বলে ৪৩ রান করার পর বল হাতে নেন প্রথম ৫ উইকেট। ক্যামেরুনের পাঁচ ব্যাটারকে প্যাভিলিয়নে ফেরাতে খরচ করেছিলেন মাত্র ৬ রান।

সূত্র: আইসিসি-ক্রিকেট ডটকম