কোনো দিন হলুদ কার্ড দেখেননি যে ফুটবলার

কাতার বিশ্বকাপের অন্যতম আলোচিত ম্যাচ বলা যায় আর্জেন্টিনা বনাম নেদারল্যান্ডসের ম্যাচটিকে। দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে শুক্রবার দিবাগত রাত একটায় মুখোমুখি হয়েছিল তারা। কী হয়নি এই ম্যাচে? ম্যাচের ৮২ মিনিট পর্যন্ত ২-০ গোলে পিছিয়ে ছিল নেদারল্যান্ডস। কিন্তু বদলি নামা ভাউট ভোগহোর্স্টের ঝলকে ৮৩ আর যোগ করা সময়ের ১১ মিনিটের মাথায় পরপর দুই গোল করে ম্যাচে ফিরে আসে ডাচরা। শেষ পর্যন্ত পেনাল্টিতে ৪-৩ গোলে আর্জেন্টিনা জিতে চলে যায় সেমিফাইনালে। তবে পরতে পরতে উত্তেজনা ছড়ানো এই ম্যাচ আলোচিত হয়েছে ভিন্ন আরেকটি কারণে।

আর্জেন্টিনা বনাম নেদারল্যান্ডস ম্যাচে দুই দলে মোট ১৮টি হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন লাওস

ম্যাচটি পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছিলেন স্প্যানিশ রেফারি আন্তনিও মাতেও লাওস। আর দায়িত্ব পেয়েই হাত খুলে দুই দলকেই হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন। মূল ম্যাচ থেকে শুরু করে অতিরিক্ত সময়—এমনকি পেনাল্টি শুটআউটের সময়ও হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন তিনি। ডাচ ডিফেন্ডার ড্যানজেল ডামফ্রিসকে তো দুবার হলুদ কার্ড দেখিয়ে বের করে দিয়েছেন মাঠ থেকে। দুই দলের ১৫ জন খেলোয়াড় ও ২ জন কোচিং স্টাফ, মোট ১৭ জনকে ১৮টি হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন লাওস। বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচে হলুদ কার্ড প্রদর্শনের সংখ্যা এবং হলুদ কার্ড দেখা খেলোয়াড়ের সংখ্যা—উভয় ক্ষেত্রেই রেকর্ড হয়েছে এই ম্যাচে।

এই ম্যাচে বাড়াবাড়ি সংখ্যক হলুদ কার্ড দেখানো হলেও, ফুটবল খেলায় হলুদ কার্ড প্রদর্শন খুবই সাধারণ একটি ঘটনা। ট্যাকল করার সময় ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত হোক, ফাউল হতেই পারে। আবার ট্যাকল ছাড়াও বেশ কিছু কারণে ফাউল হয় খেলায়। ফলে সব খেলোয়াড়ই তাঁদের ক্যারিয়ারে কখনো না কখনো হলুদ কার্ড দেখে থাকেন।

কিন্তু কেমন লাগবে, যদি বলি এমন একজন ফুটবলার আছেন, যিনি সর্বোচ্চ পর্যায়ে বছরের পর বছর খেলে গেছেন, কিন্তু কোনো দিন একটি হলুদ কার্ডও দেখেননি?

গ্যারি লিনেকার

শুনে অবাক লাগলেও এমনই অসাধারণ এক রেকর্ড করে গেছেন ইংলিশ স্ট্রাইকার গ্যারি লিনেকার। ১৯৭৮ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত ক্লাব ও দেশের হয়ে লিনেকার খেলেছেন ৫৪১টি ম্যাচ। গোল করেছেন ২৩৮টি। কিন্তু হলুদ কার্ড দেখেননি একটি ম্যাচেও। ফুটবলের এমন এক বিরল রেকর্ডের একমাত্র মালিক লিনেকার।

একটা কথা অবশ্য ঠিক, যে সময়ে লিনেকার খেলেছেন, তখন খুব সহজেই কার্ড দিতে চাইতেন না রেফারিরা। কিন্তু তাও ম্যাচের পর ম্যাচ, বছরের পর বছর কার্ড না দেখে থাকা অসম্ভবই বটে।

ফাউল ছাড়াও মাঠে অনেক সময় মেজাজ হারানোর কারণেও কার্ড দেখেন খেলোয়াড়েরা। গ্যারি লিনেকার ব্যতিক্রম সেখানেও।

ম্যারাডোনার সঙ্গেও খেলেছেন গ্যারি লিনেকার

এই নিষ্ঠার পেছনে মূল ভূমিকা তাঁর বাবার—এমনটাই জানিয়েছিলেন টটেনহাম হটস্পারের সাবেক এই স্ট্রাইকার। একদম ছোটবেলা থেকেই বাবার কাছে শিখেছেন, মাঠে যা কিছুই হোক না কেন, রেফারিকে দিতে হবে পূর্ণ সম্মান। কোনো অবস্থাতেই রেফারির সঙ্গে বাজে আচরণ করা যাবে না। ছোটবেলায় ফুটবল মাঠে লিনেকার একবার রেফারির সিদ্ধান্ত মানতে না পেরে গালি দিয়ে বসেছিলেন। সে মুহূর্তে মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর বাবা। ছেলের এমন আচরণ মানতে না পেরে সঙ্গে সঙ্গে মাঠ থেকে তুলে নেন তিনি। এ ঘটনা লিনেকার মনে রেখেছেন এখনো। কারণ, এখান থেকেই শিখেছিলেন, খেলার মাঠে কাউকে অসম্মান করার সুযোগ নেই।

গ্যারি লিনেকারের কার্ডবিহীন এমন ক্যারিয়ার থেকে শুধু খেলোয়াড়ই নয়, শেখার আছে আমাদেরও।