দশের সেরা, সেরা দশ!

অলংকরণ:
খেলার মাঠে জার্সির প্রচলন শুরু হয়েছিল খেলোয়াড়দের সহজে চেনার জন্য। তখনো জার্সিতে নাম লেখার প্রথা শুরু হয়নি; বরং বড় করে লেখা সংখ্যা দিয়ে দূরের গ্যালারি থেকেও সহজে খুঁজে পাওয়া যেত পছন্দের খেলোয়াড়কে। জার্সি নম্বরের প্রাথমিক উদ্দেশ্য খেলোয়াড়দের চেনা হলেও, কালক্রমে এর পেছনে চলে আসে আরও অনেক নিগূঢ় অর্থ। যেমন ফুটবলে গোলকিপারের জন্য ধ্রুবকের মতো ধরা হয় ‘১’ -নম্বর জার্সিকে, স্ট্রাইকারের জার্সির নম্বর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই থাকে ‘৯’। অবশ্য এ রকম নির্দিষ্ট পজিশন বা খেলোয়াড়ের জন্য নির্দিষ্ট জার্সির প্রচলন শুরু হয়েছিল ‘১০’ নম্বর জার্সির হাত ধরে। আমাদের আজকের লেখা ‘১০’ নম্বর জার্সি পরে জগদ্বিখ্যাত হওয়া খেলোয়াড়দের নিয়ে।

এদসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো

‘১০’ নম্বর জার্সির প্রথম সুপারস্টার বলা হয় তাঁকে। খটমটে নাম দেখে কি ভ্রু কুঁচকে গেছে? তাহলে তাঁর এক শব্দের নাম বললে মুহূর্তেই চিনে ফেলবে—পেলে। ব্রাজিলের ফুটবল তো বটেই, বিশ্ব ফুটবলে পেলে এক কিংবদন্তির নাম। তাঁর নাম শুনে থেমে গিয়েছিল নাইজেরিয়ার গৃহযুদ্ধও। ১৯৬৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি পেলের আগমনের কারণে থেমে যায় দীর্ঘ দুই বছর ধরে চলা ‘বিয়াফ্রা ওয়ার’ নামে পরিচিত এই গৃহযুদ্ধ। কেবল জনপ্রিয়তা দিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে এতটা প্রভাব রাখতে পারেননি আর কোনো ফুটবলার।

ব্রাজিলের ত্রেস কোরাসয়েসের বস্তি থেকে উঠে আসা পেলে তাঁর ক্লাব ক্যারিয়ারে প্রায় পুরো সময় কাটিয়েছেন সান্তোসে। দক্ষিণ আমেরিকার ক্লাব ফুটবলের প্রায় সব ট্রফিই জিতেছেন তিনি দলটির হয়ে। ক্লাবের হয়ে ৬৫৯টি অফিশিয়াল ম্যাচ খেলে গোল করেছিলেন ৬৪৩টি। তবে বিশ্ব তাঁকে স্মরণ করে বিশ্বকাপের কীর্তির জন্য। ১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০-এর বিশ্বকাপ জয়ে ব্রাজিলের হয়ে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছিলেন পেলে। জাতীয় দলের জার্সিতেও ৯২ ম্যাচে ৭৭ গোল করে ব্রাজিলের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার গৌরব নিজের করে নিয়েছিলেন। পেলে যে শুধু গোলই করতেন, তা নয়। বরং গোল করানোতেও তিনি ছিলেন সমান দক্ষ। ক্যারিয়ারের ৩৬৯টি অ্যাসিস্ট ফুটবল ইতিহাসের দ্বিতীয় সেরা। তাই তাঁর পরা ‘১০’ নম্বর জার্সি হয়ে ওঠে আলাদা এক ব্র্যান্ড। যেটা পরে কেবল দলের সেরা খেলোয়াড়ই খেলবেন। যুগ যুগ ধরে এই ধারাবাহিকতা চলে আসছে এখনো।

ডিয়েগো ম্যারাডোনা

বিংশ শতাব্দীর সেরা দুই ফুটবলারের তালিকা করলে পেলের সঙ্গে সঙ্গেই যাঁর নাম উচ্চারিত হবে, তিনি ম্যারাডোনা। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাপিয়ে ম্যারাডোনাও ছিলেন বিশ্ব ফুটবলের জনপ্রিয়তম কিংবদন্তি। প্রায় রূপকথার মতো ক্যারিয়ারে ম্যারাডোনার কারণে ফুটবলকে ভালোবাসতে শিখেছেন কোটি কোটি মানুষ। বল পায়ে এমনই এক জাদুকর ছিলেন তিনি!

আর্জেন্টিনার লানুস থেকে ফুটবলে আসা ম্যারাডোনা ছিলেন সত্যিকারের নাম্বার টেন। মানে ফুটবলে নাম্বার টেন বলতে বোঝানো হয় দলের যে খেলোয়াড় প্লেমেকিং করবেন, তাঁকে। ছোটখাটো গড়নের ম্যারাডোনা বল পায়ে যেন উড়ে বেড়াতেন মাঠের মধ্যে। ফাউল না করে তাঁকে আটকানো প্রতিপক্ষের কোনো ডিফেন্ডারের সাধ্য ছিল না। ফুটবল একটা দলগত খেলা, অথচ ম্যারাডোনা প্রথমবারের মতো দেখিয়ে দেন দল যেমনই হোক, একক নৈপুণ্যে একটা দলকে বিশ্বকাপ জেতানো সম্ভব। আর্জেন্টিনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয়ের একক কৃতিত্ব যদি ১০ নম্বর জার্সি পরা ম্যারাডোনাকে দেওয়া, হয় তাতে বিন্দুমাত্র ভুল নেই। ১৯৯০-এর বিশ্বকাপেও তাঁর জাদুতে ফাইনালে ওঠে আর্জেন্টিনা, কিন্তু ভাগ্যদেবী সেবার সহায় ছিলেন না। কিন্তু এতে ম্যারাডোনার মাহাত্ম্য একটুও কমে না। ক্লাব ক্যারিয়ারেও আর্জেন্টিনা জুনিয়রস, বোকা জুনিয়রস, বার্সালোনা, নাপোলি—যেখানেই খেলেছেন, সেখানেই ভক্তদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। এর মধ্যে নাপোলির মানুষ তো তাঁকে ‘ঈশ্বর’-এর মর্যাদায় তুলে রেখেছেন। ইতালির নেপলস শহরের পিছিয়ে পড়া মানুষদের ক্লাব নাপোলিকে লিগ শিরোপা, ইউরোপিয়ান শিরোপা জেতানোর নায়ক ছিলেন ম্যারাডোনা। ‘১০’ নম্বর জার্সির মর্যাদা তাই আরও বেড়েছে তাঁর কারণে।

মিশেল প্লাতিনি

ইউরোপিয়ান ফুটবলের অন্যতম কিংবদন্তি হিসেবে ধরা হয় প্লাতিনিকে। ক্রুইফের পর মাত্র দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে তিনবার ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন তিনি। ফ্রান্সের জার্সি গায়ে যেমন সফল ছিলেন, তেমনই সফল ছিলেন ক্লাব ক্যারিয়ারেও। জুভেন্টাসের কিংবদন্তি হিসেবে প্রথম দিকে থাকে তাঁর নাম। জুভেন্টাসের হয়ে ১৪৭ ম্যাচে ৬৮ গোল করার পাশাপাশি জিতেছেন সিরি আ এবং ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস লিগ (তৎকালীন ইউরোপিয়ান কাপ)। ফ্রান্সকে জিতিয়েছেন ১৯৮৪-এর ইউরো। সে সময় ৭২ ম্যাচে ৪১ গোল করে ফ্রেঞ্চ জাতীয় দলের সর্বোচ্চ গোলদাতাও হয়েছিলেন তিনি।

প্লাতিনি খেলতেন মিডফিল্ডার হিসেবে। ভালো পাস দিতে পারার সুনাম ছিল তাঁর। সেই সঙ্গে ভালো আক্রমণ তৈরি করতে পারতেন। গোল করতেও জানতেন। ফ্রি-কিক, কর্নার কিক নিতেন দারুণ, মাঠে বলের নিয়ন্ত্রণ এবং খেলার সুতা ধরে রাখার ভালো ক্ষমতা ছিল তাঁর। ক্রিয়েটিভ মিডফিল্ডার হিসেবে ছিলেন দলের অন্তঃপ্রাণ। তাই ফ্রান্স ও জুভেন্টাসের ‘১০’ নম্বর জার্সিকে প্রায় নিজের করে ফেলেছিলেন তিনি।

জিনেদিন জিদান

ফ্রান্সের ফুটবলে প্লাতিনিকেও ছাড়িয়ে যাওয়া প্রথম ফুটবলারের নাম জিনেদিন জিদান। সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার হিসেবে অনেকেই তাঁকে সেরা দশে রাখেন। সতীর্থরা তাঁকে আদর করে ডাকতেন অলস জাদুকর বলে। মাঠে তাঁকে খেলতে দেখলেও এ রকম মনে হতো। যেন অলস, আয়েশি এক মানুষ দৌড়ে বেড়াচ্ছেন বল পায়ে, ফুটবল খেলা যেন সহজ একটা কাজ। অথচ এভাবেই প্রতিপক্ষকে নাকানিচুবানি খাইয়েছেন বহুবার।

ফুটবলার হিসেবে জিদান ছিলেন দারুণ প্রতিভাবান। খেলার মাঠে তাঁর মতো ভীষণ টেকনিক্যাল স্কিল খুব কম খেলোয়াড়ের ছিল। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে খেলার কারণে পাসিং এবং সুযোগ তৈরি করার দক্ষতা ছিল দারুণ। সেই সঙ্গে ড্রিবলিং এবং দূরপাল্লার শটও ছিল নিখুঁত। জুভেন্টাস ও রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ক্লাব ক্যারিয়ারের প্রায় সব শিরোপা জেতার পাশাপাশি ফ্রান্সকে জিতিয়েছেন ১৯৯৮ বিশ্বকাপ। দারুণ খেলার পুরস্কার হিসেবে সেবার ব্যালন ডি’অরও জিতেছেন জিজু। ২০০৬ সালে একক নৈপুণ্যে বিশ্বকাপ জেতার খুব কাছে গেলেও জিততে পারেননি এক বিতর্কিত ঘটনার কারণে। ক্লাব ক্যারিয়ারে কখনো ১০ নম্বর জার্সি না পরলেও, ফ্রান্স জাতীয় দলে ‘১০’ নম্বর জার্সির আরেক নাম ছিল জিনেদিন জিদান।

রোনালদিনহো

ব্রাজিলিয়ানদের বিখ্যাত সাম্বা ফুটবলের আধুনিক আইকন ধরা হতো রোনালদিনহোকে। লম্বা কোঁকড়া চুল, মাথায় হেডব্যান্ড এবং সদা অমলিন হাসিমুখের রোনালদিনহো প্রায় অর্ধযুগ মাতিয়ে রেখেছিলেন ফুটবল বিশ্বকে। পায়ের জাদুতে একের পর এক বোকা বানাতেন ডিফেন্ডারদের আর মুগ্ধ করতেন প্রতিপক্ষের দর্শকদেরও! ২০০৫ সালের নভেম্বর মাসে ঘটে সেই বিরল ঘটনা। এল ক্ল্যাসিকোতে দারুণ খেলার সুবাদে বার্নাব্যুর মাঠে রিয়াল মাদ্রিদ–ভক্তরা দাঁড়িয়ে করতালির মাধ্যমে সম্মান জানান বার্সেলোনার ‘নাম্বার টেন’ রোনালদিনহোকে। এ রকম ঘটেছে আরও অনেক অনেকবার! জাতীয় দল কিংবা ক্লাবের জার্সি গায়ে রোনালদিনহো নিজের সেরা সময়ে ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। বার্সেলোনার জার্সি গায়ে লা লিগা, চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার পাশাপাশি এসি মিলানের হয়ে জিতেছেন সিরি আ। ব্রাজিলের জার্সিতে কোপা আমেরিকা, কনফেডারেশনস কাপের পাশাপাশি ২০০২ বিশ্বকাপ জয়ের কৃতিত্বও রয়েছে তাঁর।

রোনালদিনহো কয়েকটা পজিশনে খেলতে পারতেন, তবে সবচেয়ে ভালো খেলতেন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে। যেখানে ইচ্ছেমতো খেলার স্বাধীনতা দেওয়া হতো তাঁকে। ড্রিবলিং ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় অস্ত্র, বল যেন তাঁর পায়ের সঙ্গে আঠার মতো লেগে থাকত। সঙ্গে ছিল জোরে দৌড়ানো এবং নিখুঁত শট নেওয়ার ক্ষমতা। তাই জাতীয় দলে এবং বার্সেলোনায় ‘১০’ নম্বর জার্সি বরাদ্দ ছিল তাঁর জন্য। জার্সির সম্মানও বাড়িয়েছেন ২০০৫ সালে ব্যালন ডি’অর জয়ের মাধ্যমে।

লিওনেল মেসি

বর্তমানে ১০ নম্বর জার্সির সবচেয়ে বড় প্রতীক বলা যায় আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসিকে। রোনালদিনহো বার্সেলোনা ছাড়ার পর সেই ২০০৮ সালে ১০ নম্বর জার্সি পেয়েছিলেন মেসি। বার্সেলোনার সেই সর্বজয়ী দল থেকে হাল আমলে আর্জেন্টিনার ২০২২ বিশ্বকাপ জয়—১০ নম্বর জার্সি ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই জার্সিকে অনন্য উচ্চতায় তুলে নিয়েছেন তিনি।

ছোটখাটো গড়নের মেসিকে শুরুতে সবাই বলতেন ডিয়েগো ম্যারাডোনার উত্তরসূরি। কালক্রমে সেই তকমা ফেলে দিয়ে নিজের নামেই উজ্জ্বল হয়ে উঠতে শুরু করেন। লা মাসিয়া (বার্সেলোনার একাডেমি) থেকে উঠে আসা মেসি ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন কাতালান ক্লাবটিতে। দলটির হয়ে ৭৭৮ ম্যাচে ৬৭২ গোল করেছেন, জিতেছেন ক্লাব ফুটবলের সব ধরনের শিরোপা। জাতীয় দলের মেসিও একই রকম সফল। ১৭৬ ম্যাচে ১০৪ গোল করার পাশাপাশি জিতেছেন কোপা আমেরিকা এবং বিশ্বকাপ ট্রফি।

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে রাইট উইঙ্গার হিসেবে খেললেও, পরবর্তী সময়ে খেলেছেন ফরোয়ার্ড এবং অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে। বাঁ পায়ে ছোট ছোট ড্রিবলিং করে ভেঙে ফেলেন প্রতিপক্ষের ডিফেন্স, তারপর কখনো নিজে গোল করেন, নয়তো সতীর্থকে দিয়ে গোল করিয়ে নেন। গোল করার সঙ্গে সঙ্গে করানোর ক্ষেত্রেও তিনি সমান পটু, ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টের রেকর্ড (৩৬১) সেই সাক্ষ্য দেয়। এ জন্য উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম—পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তেই রয়েছে ছোট্ট জাদুকরের ভক্ত।

ওপরের তালিকা ছাড়াও ইতিহাসের সেরা ‘১০’ নম্বর জার্সিধারীর তালিকায় রয়েছে জিকো, রবার্তো ব্যাজিও, রুদ খুলিত, লোথার ম্যাথিউস, রিভালদো, আলেসান্দ্রো দেল পিয়েরো, ডেনিস বার্গক্যাম্প, ফ্রান্সেসকো টট্টি, ক্লারেন্স সিডর্ফ, লুইস ফিগো, রিকুয়েলমের মতো তারকাদের নাম। গত এক দশকের ফুটবলারদের মধ্যে জনপ্রিয় নাম্বার টেন ফুটবলাররা হচ্ছেন মেসুত ওজিল, নেইমার, লুকা মদরিচ, ওয়েইন রুনি, ওয়েসলি স্নাইডার, হ্যারি কেইন।

শচীন টেন্ডুলকার

কেবল যে ফুটবলের ১০ নম্বর জার্সি জনপ্রিয় তা নয়, ক্রিকেটেও এই জার্সির রয়েছে আলাদা গুরুত্ব। কেননা, ‘ক্রিকেট ঈশ্বর’ শচীন টেন্ডুলকার যে খেলেছেন এই জার্সি পরে! ক্যারিয়ারের শুরুতে ‘৯৯’ নম্বর জার্সি পরলেও, পরবর্তী সময়ে বেছে নিয়েছিলেন ‘১০’ নম্বর জার্সিটি। ক্রিকেটে ফুটবলের মতো জার্সির আলাদা গুরুত্ব না থাকলেও, শচীন যে দলের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে এই জার্সি পরতেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পরিসংখ্যানের বিচারে টেস্ট ও এক দিনের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান তাঁর দখলে। ধারাবাহিকতা আর দীর্ঘদিন একই ছন্দে খেলে যাওয়া শচীনকে নিয়ে গেছে সবার ওপরে। তাই তাঁকে সর্বকালের সেরা বলতে বেশির ভাগ মানুষেরই তেমন কোনো আপত্তি নেই।

শচীন মূলত ডানহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। ওপেনিং নয়তো ওয়ান ডাউনে ব্যাট করা তাঁর পছন্দের ছিল। সাধারণত সামান্য ধীরগতিতে দেখেশুনে ইনিংসের সূচনা করতেন, তবে ধীরে ধীরে বাড়াতেন রানের গতি। স্ট্রেট ড্রাইভকে সব সময় নিজের পছন্দের শট বললেও স্কয়ার কাট, কভার ড্রাইভ, অন ড্রাইভ, ফ্লিক, পুল, সুইপ, হুক এমনকি আপার কাটের মতো অভিনব শটও খুব ভালো খেলতেন। উপমহাদেশের ধীরগতির নিচু উইকেটে যেমন বুঝেশুনে খেলতে পারতেন তেমনি ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার বাউন্সি উইকেটেও একই রকম ভালো ব্যাটিং করতেন। যে কারণে সেঞ্চুরি করা যেন ডালভাত হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার জন্য। ওয়ানডে ও টেস্ট মিলিয়ে ১০০ সেঞ্চুরি করার একমাত্র রেকর্ড তাই তাঁরই দখলে। এ ছাড়া ৯০ থেকে ৯৯ রানের ঘরে আউট হয়েছেন ২৮ বার! ক্যারিয়ারে শেষ সময়ে এসে জিতেছেন অধরা ওয়ানডে বিশ্বকাপের ট্রফি। শচীন টেন্ডুলকারের সম্মানে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড তাই ‘১০’ নম্বর জার্সিকে রিটায়ারমেন্টে পাঠিয়েছেন অর্থাৎ আর কোনো ভারতীয় খেলোয়াড় এই জার্সি পরে খেলতে পারবেন না।

শহীদ আফ্রিদি

ক্রিকেটে ১০ নম্বর জার্সি পরে খেলা আরেক তারকা খেলোয়াড় পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদি। ক্যারিয়ারের শুরুতে ওপেনিং ব্যাটসম্যান থাকলেও ধীরে ধীরে বোলিংয়ে মনোযোগ দেওয়ায় তাঁকে দেওয়া হয় অলরাউন্ডারের দায়িত্ব। বল হাতে লেগ স্পিন এবং ব্যাট হাতে ফিনিশারের ভূমিকা নেন তিনি। ওয়ানডেতে ৩৯৫ ম্যাচ খেলে ৩৯৮ উইকেট এবং ৮০৬৪ রান অলরাউন্ডার হিসেবে অন্যতম সেরা বলা যায়। একসময় ওয়ানডের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড (৩৭ বলে ১০২) ছিল তাঁর দখলে। যদিও মারকুটে ব্যাটিং করতে গিয়ে ‘ডাক’ মারার অর্থাৎ শূন্য রানে আউট হওয়ার অনেক উদাহরণ আছে তাঁর ক্যারিয়ারে। এ কারণে টেস্ট ম্যাচও বেশি খেলা হয়নি তাঁর। তবে ক্রিকেটের আধুনিকতম সংস্করণ টি-টোয়েন্টি ইন্টারন্যাশনালে বল হাতে বেশ সফল ছিলেন। ৯৯ ম্যাচ খেলে ৯৮ উইকেট নিয়ে অবসর নিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০০৯-এর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা আছে তাঁর ক্যারিয়ারে।

অ্যালান ডোনাল্ড

১০ নম্বর জার্সিধারী আরেক তারকা ক্রিকেটার অ্যালান ডোনাল্ড। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলা ডোনাল্ড ছিলেন ফাস্ট বোলার। বিখ্যাত ছিলেন দ্রুতগতিতে বল করার জন্য। যে কারণে তাঁর নামও হয়ে যায় ‘হোয়াইট লাইটনিং’ বা সাদা বিদ্যুৎ। লাল বল এবং সাদা বল—ক্রিকেটের তৎকালীন দুই ফরম্যাটে সেরা ছিলেন তিনি। ৭২ টেস্ট খেলে ৩৩০ উইকেট এবং ১৬৪ ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ২৭২ উইকেটের পরিসংখ্যান ছিল সে সময়ের অন্যতম সেরা। বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় দলের বোলিং কোচের দায়িত্বে আছেন অ্যালান ডোনাল্ড।

ডেভিড মিলার

ডোনাল্ডের পর আরেক দক্ষিণ আফ্রিকান তারকা হিসেবে ‘১০’ নম্বর জার্সি পরতে দেখা যায় ডেভিড মিলারকে। ব্যাটসম্যান হিসেবে খেললেও বেশির ভাগ সময় ফিনিশার হিসেবে দেখা গেছে ডেভিড মিলারকে। তাই মারকুটে ইনিংস খেললেও খুব বেশি বড় ইনিংস খেলার সুযোগ পান না তিনি। তবু ওয়ানডেতে পাঁচটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি রয়েছে ২৩টি হাফ সেঞ্চুরি এবং ৪০৯০ রান, স্ট্রাইক রেট ১০৩.৩৩। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দুটি সেঞ্চুরির সঙ্গে রয়েছে ২২১৬ রান, যেখানে স্ট্রাইক রেট ১৪৪.৬৪।

ক্রিকেটে ‘১০’ নম্বর জার্সি পরা তারকা ক্রিকেটারদের মধ্যে আরও রয়েছেন ড্যারেন লেহম্যান, ক্রেইগ ম্যাকমিলান, স্টুয়ার্ট ল, পিটার সিডল এবং বর্তমান সময়ের শাহিন শাহ আফ্রিদি।