কাতারের স্টেডিয়ামের নাম কেন ৯৭৪

প্রথমবারের মতো ফুটবল বিশ্বকাপের দামামা বেজে ওঠে ১৯৩০ সালে। এরপর প্রায় ৮০ বছর কেটে গেলেও মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ আয়োজন করতে পারেনি ফুটবল বিশ্বকাপ। অবশ্য এর পেছনে কারণও রয়েছে। ফুটবল খেলার জন্য খুব একটা পরিচিত নয় এ অঞ্চলের দেশগুলো। শুধু কাতারের লিগেরই যা একটু নাম ডাক শোনা যায়। ইউরোপের ফুটবলাররা ক্যারিয়ারের শেষ সময়টায় কিছু টাকা উপার্জনের আশায় কাতারের লিগে খেলে থাকেন। পাশাপাশি প্রচণ্ড গরম আবহাওয়াও এই অঞ্চলে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত না হওয়ার অন্যতম একটি কারণ।

কিন্তু নিজেদের দেশে একটি বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে গেছে কাতারের ফুটবল ফেডারেশন। এর ফল তারা পায় ২০১০ সালের ১০ ডিসেম্বর। সেদিন ফিফা ঘোষণা দেয়, ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করবে কাতার। ফিফার আশা, এই বিশ্বকাপের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের ২২টি দেশে আরও জনপ্রিয় হবে ফুটবল।

দায়িত্ব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তোড়জোড় শুরু করে দেয় কাতার। যে স্টেডিয়ামগুলো আছে, সেগুলোর সংস্কার করা, নতুন স্টেডিয়াম তৈরি করা—বিশাল সব কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে যায় দেশটিতে। শুধু স্টেডিয়াম বানালেই তো হবে না, কাতারের অত্যধিক গরমে যেন দর্শক ও খেলোয়াড়েরা কাবু হয়ে না যান, নজর দিতে হবে সেদিকেও। ফলে স্টেডিয়ামগুলো বানানোর জন্য নেওয়া হয় বিশেষ ব্যবস্থা। যেসব স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে, তার সব কটিই শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বলে ঘোষণা দেয় কাতার ফুটবল ফেডারেশন। সব স্টেডিয়ামেই অত্যাধুনিক সব ব্যবস্থা রেখে ফুটবল বিশ্বকে চমকে দিচ্ছিল দেশটি। কিন্তু আসল চমকটা আসে যখন কাতার বিশ্বকাপের সপ্তম ভেন্যু হিসেবে ঘোষণা করা হয় ‘স্টেডিয়াম ৯৭৪’ –এর নাম।

বেশ কয়েকটি কারণে ‘স্টেডিয়াম ৯৭৪’  কাতার বিশ্বকাপের অন্যতম জনপ্রিয় একটি ভেন্যু হিসেবে ইতিমধ্যেই পরিচিতি পেয়েছে। ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটিই প্রথম স্টেডিয়াম, যা ব্যবহারের পরপরই সম্পূর্ণভাবে খুলে ফেলা যাবে। অর্থাৎ বিশ্বকাপ শেষে এই স্টেডিয়াম সরিয়ে এই জায়গা অন্য যেকোনো কাজে ব্যবহার করতে পারবে কাতার। এ রকম বৈশিষ্ট্যের পেছনে হাত রয়েছে এর নির্মাণশৈলির। স্টেডিয়ামটি তৈরি করার সময় ব্যবহার করা হয়েছে শিপিং কনটেইনার, যা সহজে বহনযোগ্য এবং ব্যবহারের পর দ্রুতই সরিয়ে ফেলা যায়। এ রকম পোর্টেবল স্টেডিয়াম দেখা যায়নি আগের কোনো বিশ্বকাপেই।

এই স্টেডিয়াম তৈরি করতে প্রয়োজন হয়েছে মোট ৯৭৪টি শিপিং কনটেইনার

পাশাপাশি কথা ছিল, যে স্টেডিয়ামগুলোয় কাতার বিশ্বকাপের খেলা অনুষ্ঠিত হবে, সব কটিতেই থাকবে অত্যাধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা। কিন্তু ‘স্টেডিয়াম ৯৭৪’ কাতার বিশ্বকাপের একমাত্র স্টেডিয়াম, যেটিতে এমন কোনো ব্যবস্থা নেই। কারণ, স্টেডিয়ামটি বানানোই হয়েছে এমনভাবে যেন কোনো শীতাতপ নিয়ন্ত্রক ছাড়াই এর তাপমাত্রা সাধারণ তাপমাত্রার চেয়ে কম থাকে। পাশাপাশি সমুদ্রের একদমই কাছে হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই স্টেডিয়ামটির আবহাওয়া তুলনামূলক কম গরম থাকবে।

কিন্তু এসব ছাপিয়ে সবার কৌতূহল জাগিয়ে তোলে স্টেডিয়ামটির নাম। কাতারের অন্য স্টেডিয়ামের নামগুলো বেশ রাশভারিই বটে। ‘আল জানৌব স্টেডিয়াম, আহমাদ বিন আলি স্টেডিয়াম’—কাতারের নামগুলো এমনই। এসবের পাশে ‘স্টেডিয়াম ৯৭৪’ নামটা বেশ বেমানানই শোনায়। তবে এই নামের পেছনেও রয়েছে অন্য ব্যাপার। আগেই বলেছি, স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করা হয়েছে শিপিং কনটেইনার দিয়ে। এই স্টেডিয়াম তৈরি করতে প্রয়োজন হয়েছে মোট ৯৭৪টি শিপিং কনটেইনার। আবার কাতারের আন্তর্জাতিক ডায়ালিং কোডও ৯৭৪। এ দুই বিষয় মাথায় রেখেই এই স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয় ‘স্টেডিয়াম ৯৭৪’।

ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটিই প্রথম স্টেডিয়াম, যা ব্যবহারের পরপরই সম্পূর্ণভাবে খুলে ফেলা যাবে

এ স্টেডিয়ামটির আরও বেশ কিছু তাৎপর্য রয়েছে। শিপিং কনটেইনারের পাশাপাশি এই স্টেডিয়াম তৈরিতে স্টিলেরও ব্যবহার করা হয়েছে। আর যে স্টিলগুলো এতে ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো রিসাইকেল স্টিল অর্থাৎ এই স্টিলগুলো আগে ব্যবহার করা হয়েছে এমন স্টিল থেকে আবার উৎপাদন করা।

সবকিছু মিলিয়েই কাতারের এই ‘স্টেডিয়াম ৯৭৪’ বেশ ঐতিহাসিক এক স্টেডিয়ামই বটে।