জাপান দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠায় কার লাভ, কার ক্ষতি

সাতবার বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে এই নিয়ে চারবার দ্বিতীয় রাউন্ডে পৌঁছাল জাপান

বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয় হয়েছিল বিভিন্ন ‘বিশ্বকাপ প্রেডিক্টর’। যেখানে ফেসবুকসহ অন্য বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা অনুমান করছিলেন দ্বিতীয় রাউন্ডে কে যাবে, কার সাথে কার খেলা পড়বে কিংবা কোয়ার্টার বা সেমিতে উঠবে কোন দল। এসব অনুমান বা প্রেডিকশনে একটা বিষয় খুব দেখা যাচ্ছিল, সেটা হলো ব্রাজিল বনাম স্পেন অথবা জার্মানির কোয়ার্টার ফাইনাল। কিন্তু গ্রুপ ‘ই’-এর শেষ দুই ম্যাচের নাটকীয়তা বদলে দিল সবকিছু। এখন ফাইনালের আগে স্পেনের কোনো সম্ভাবনাই নেই ব্রাজিলের মুখোমুখি হওয়ার। কোয়ার্টারে বরং ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ হতে পারে জাপান।

সাতবার বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে এই নিয়ে চারবার দ্বিতীয় রাউন্ডে পৌঁছাল জাপান। তবে দ্বিতীয় রাউন্ডের বাধাটা এখনো পার হওয়া হয়নি তাদের। বিশেষ করে গত বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে তারা পূর্বাভাস দিচ্ছিল অঘটনের, কিন্তু অভিজ্ঞ দলটির দেওয়া ৯৪ মিনিটের গোলে হেরে যায় তারা। এবার কিন্তু ঘটনা একদম উল্টো, জার্মানি আর স্পেন—দুই দলের সঙ্গেই প্রথমার্ধে পিছিয়ে থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তারা। বোঝাই যাচ্ছে, গতবারের অভিজ্ঞতা থেকে যথেষ্ট শিক্ষা নিয়েছে জাপানিরা।

অনেকেই বলছে, জাপানের এ জয়ে আদতে লাভ হলো ব্রাজিলেরই

দ্বিতীয় রাউন্ডে জাপানের প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া। গতবারের রানার্সআপরা এবারও গ্রুপে কোনো ম্যাচ না হারলেও আগের বিশ্বকাপের ধারটা তাদের খেলায় এবার অনুপস্থিত। কানাডা বাদে গ্রুপের বাকি দুই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লক্ষ্য ভেদ করতে পারেনি তারা, দুটো ম্যাচই হয়েছে গোলশূন্য ড্র। স্পেন-জার্মানিকে হারিয়ে আসা জাপানের বিরুদ্ধে যে তারা ফেবারিট, সে কথা বলতে পারবে না কেউ। ক্রোয়েশিয়া–বাধা পেরোতে পারলে কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ হতে পারে ব্রাজিল। অনেকেই বলছে, জাপানের এ জয়ে আদতে লাভ হলো ব্রাজিলেরই। নিজেদের শেষ ম্যাচে পর্তুগাল বিশাল অঘটনের শিকার না হলে দ্বিতীয় রাউন্ডে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ হতে পারে ঘানা, উরুগুয়ে অথবা দক্ষিণ কোরিয়া। সেখান থেকে কোয়ার্টারে প্রতিপক্ষ হিসেবে তারা পাবে ক্রোয়েশিয়া-জাপানের ম্যাচের বিজয়ীকে। ব্রাজিল–ভক্তরা নিশ্চয় চাইবেন দ্বিতীয় রাউন্ডে কোরিয়া বা ঘানা আর কোয়ার্টার ফাইনালে জাপানকে পেতে। তাহলেই যে ব্রাজিলের সেমিফাইনালে ওঠা অনেকটা নিশ্চিত! অন্তত ইতিহাস সে কথাই বলে। কারণ, ৯২ বছরের বিশ্বকাপ ইতিহাসে কখনো এশিয়া বা আফ্রিকার কোনো দলের কাছে হারেনি ব্রাজিল।

গ্রুপ রানার্সআপ হওয়া স্পেনের ঠাঁই হয়েছে ব্র্যাকেটের অন্য পাশে। দ্বিতীয় রাউন্ডে তাদের প্রতিপক্ষ বিশ্বকাপের আরেক সাড়াজাগানো দল মরক্কো। আশরাফ হাকিমি আর মাজরাউইয়ের মরক্কোর বাধা পার হলে কোয়ার্টারে স্পেনের প্রতিপক্ষ হতে পারে পর্তুগাল। রোনালদো, ব্রুনো, রুবেন দিয়াজের দলটি বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট হলেও স্পেনের বিপক্ষে তাদের পরিসংখ্যান কিন্তু মোটেও সুবিধার নয়। এ পর্যন্ত দুই দলের ৪০ দেখায় পর্তুগাল জিতেছে মাত্র ৬ ম্যাচ, হেরেছে ১৮ বার।  সর্বশেষ স্পেনের বিপক্ষে তাদের জয় ২০১০ সালে। পর্তুগাল–বাধা পার হতে পারলে সেমিতে তারা প্রতিপক্ষ হিসেবে পাবে ফ্রান্স অথবা ইংল্যান্ডকে। হ্যাঁ, বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলা ইংল্যান্ড আর ফ্রান্সের দেখা হয়ে যেতে পারে কোয়ার্টার ফাইনালেই। এর জন্য ফ্রান্সকে পেরোতে হবে পোল্যান্ড–বাধা আর ইংল্যান্ডের দরকার পড়বে বিশ্বকাপে সাড়াজাগানো দল সেনেগালকে হারানো। ফাইনালে না উঠলে তাই লাতিন দুই পরাশক্তির সঙ্গে দেখা হচ্ছে না ব্র্যাকেটের এই পাশে থাকা কোনো দলেরই। জাপানের সঙ্গে ম্যাচের শেষ দিকে ম্যাড়মেড়ে ফুটবল খেলাটা কি স্পেনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, সে প্রশ্ন তাই রয়েই যাচ্ছে।

গ্রুপ রানার্সআপ হওয়া স্পেনের দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রতিপক্ষ মরক্কো

তবে এই সবকিছুই শুধু অনুমান। এই বিশ্বকাপ সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের জন্য যে রোমাঞ্চের পসরা নিয়ে বসেছে, তাতে বিশ্বকাপের নকআউটেও যে বেশ কিছু চমক থাকবে, সে কথা তো বলাই যায়। বাজির দর উল্টে যাবে যেকোনো সময়, সৃষ্টি হবে নতুন ইতিহাসের।