রিয়াল, বার্সা, সিটি— কার গ্রুপ সহজ হলো, কার হলো কঠিন

আজ মাঠে গড়াতে যাচ্ছে ইউরোপিয়ান আভিজাত্যের লড়াই, চ্যাম্পিয়নস লিগ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবারই শেষবারের মতো দেখা যাবে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্ব। গত ৩১ আগস্ট সেই ভাগ-বাটোয়ারা করতেই মোনাকোতে বসেছিলেন ইউরোপিয়ান ক্লাবের হর্তাকর্তারা। কেমন হলো উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ গ্রুপ পর্ব? কারাই ফেবারিট, আর কাদের কপালই বা পুড়লো?

ইউরোপিয়ান ফুটবল মৌসুমের পর্দা উঠেছে সপ্তাহ কয়েক আগে। দলবদলের মৌসুমের পর্দাও নেমে গেল আজ। ইউরোপের ফুটবলকে জমিয়ে তুলতে বাকি ছিল একটামাত্র জিনিস। সেটার দামামাও বাজল গত বৃহস্পতিবার। ইউরোপের ক্লাবগুলোর হর্তাকর্তারা বসেছিলেন চ্যাম্পিয়নস লিগের দল ভাগ-বাঁটোয়ারা করতে। সেখানেই শেষবারের মতো তৈরি হলো উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্ব। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এই মৌসুমের পর থেকে আর দেখা মিলবে না গ্রুপ পর্বের। চলো, দেখে নিই কেমন হলো উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ গ্রুপ পর্ব।

গ্রুপ ‘এ’: বায়ার্ন মিউনিখ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, কোপেনহেগেন, গালাতাসারাই

একদিকে বুন্দেসলিগাজয়ী বায়ার্ন মিউনিখ, অন্যদিকে ইংলিশ জায়ান্ট ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। চ্যাম্পিয়নস লিগের যতগুলো ঐতিহাসিক লড়াই রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম ‘বাভারিয়ান-রেড ডেভিল ডার্বি’। ১৯৯৯ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের গল্প মানুষের মুখে মুখে ফেরে এখনো। প্রায় ১০ বছর পর আবারও চ্যাম্পিয়নস লিগে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে দুই লিগের দুই জায়ান্ট। কাগজে-কলমে গ্রুপের বাকি দুই দল শক্তিশালী না হলেও ‘জায়ান্ট কিলার’ হিসেবে সুনাম আছে গালাতাসারাইয়ের। প্রথম দেখায় সহজ মনে হলেও রোমাঞ্চ লুকিয়ে আছে গ্রুপ ‘এ’র পরতে পরতে।

গ্রুপ ‘বি’: আর্সেনাল, সেভিয়া, পিএসভি, লাঁস

ছয় মৌসুমের খড়া কাটিয়ে আবারও চ্যাম্পিয়নস লিগে ফিরেছে আর্সেনাল। আর্সেন ওয়েঙ্গারের সঙ্গে চ্যাম্পিয়নস লিগকেও বিদায় বলেছিল গানাররা। কোচ মিকেল আরতেতার হাত ধরে ইউরোপের শীর্ষ লিগে আবারও ফিরেছে আর্সেনাল। তাদের প্রতিপক্ষ ইউরোপা লিগ জায়ান্ট সেভিয়া। তাদের মৌসুম শুরু হয় চ্যাম্পিয়নস লিগ দিয়ে, অতঃপর গ্রুপে তৃতীয় স্থান, গন্তব্য ইউরোপা লিগ। সেই ট্রফি জিতে আবারও চ্যাম্পিয়নস লিগে। শেষ ১০ বছরে পাঁচবার ইউরোপা জয় সেদিকেই ইঙ্গিত দেয়। ডাচ লিগের পিএসভি ও ফ্রেঞ্চ লিগের লাঁস আপাতদৃষ্টিতে খুব একটা কঠিন প্রতিপক্ষ নয়। তবে নামটা চ্যাম্পিয়নস লিগ, এখানে যেকোনো দলই মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে।

গ্রুপ ‘সি’: রিয়াল মাদ্রিদ, নাপোলি, ব্রাগা, ইউনিয়ন বার্লিন

চ্যাম্পিয়নস লিগের তৃতীয় গ্রুপকে তুলনা করা যায় গালিভার আর লিলিপুটের সঙ্গে। একদিকে ১৪ বার চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী রিয়াল মাদ্রিদ। অন্যদিকে বাকি তিন দলের কেউ কোনো দিন সেমিফাইনালেও উঠতে পারেনি। জার্মান দল ইউনিয়ন বার্লিন তো প্রথমবারের মতো পা রাখল চ্যাম্পিয়নস লিগে। চ্যাম্পিয়নস লিগের তুলনামূলক সহজ গ্রুপ এটি। তবে ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে নাপোলি।

গ্রুপ ‘ডি’: ইন্টার মিলান, বেনফিকা, সালজবুর্গ, রিয়াল সোসিয়েদাদ

গ্রুপ ‘ডি’কে সব সময়ই ধরা হয় ‘গ্রুপ অব ডেথ’। কমবেশি প্রতিটি টুর্নামেন্টেই একটা না একটা রোমাঞ্চ হয়েই থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম কিছু হয়নি। কাগজে–কলমে গ্রুপ ‘ডি’র চারটি দলই সমানে সমান। যদিও নামের ভারে ইন্টার আর বেনফিকা একটু এগিয়ে আছে বৈকি, কিন্তু বাকি দুই দলও পিছিয়ে নেই। হট ফেবারিটদের সরিয়ে রাখলে এই গ্রুপের খেলা দেখেই সবচেয়ে আনন্দ পাবে যে কেউ।

গ্রুপ ‘ই’: আতলেতিকো মাদ্রিদ, ফেইনুর্দ, লাৎসিও, সেল্টিক

বড় কোনো চমক না থাকলে এই গ্রুপের হট ফেবারিট আতলেতিকো মাদ্রিদ। অভিজ্ঞতার দিক দিয়েও সবচেয়ে এগিয়ে তারা। কিন্তু দ্বিতীয় অবস্থান নিয়েই লড়াই হবে তিন দলের মধ্যে। গ্রুপে চমক না থাকলেও দ্বিতীয় অবস্থান নিতে পারে যে কেউ।

গ্রুপ ‘এফ’: পিএসজি, বরুসিয়া ডর্টমুন্ড, এসি মিলান, নিউক্যাসল ইউনাইটেড

এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের সত্যিকারের ‘গ্রুপ অব ডেথ’ হলো গ্রুপ ‘এফ’। একদিকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার জন্য চাতক পাখির মতো বসে থাকা পিএসজি, অন্যদিকে জার্মান জায়ান্ট বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। এসি মিলান তো চ্যাম্পিয়নস লিগের রাজা। রিয়ালের পর তাদের ক্যাবিনেটেই সবচেয়ে বেশি শিরোপা। গত দশকের দুর্দশা কাটিয়ে অবশেষে চ্যাম্পিয়নস লিগে ফিরেছে মিলান। লক্ষ্যটাও তাই বড় তাদের। গ্রুপের শেষ দল নিউক্যাসল ইউনাইটেড চ্যাম্পিয়নস লিগে ফিরেছে ২০ বছর পর। নব্বইয়ের দশকে প্রিমিয়ার লিগের ত্রাস আবারও ফিরেছে ইউরোপের সর্বোচ্চ টুর্নামেন্টে। নতুন দল বলে হেলাফেলা করার সুযোগ নেই কিন্তু। নতুন সৌদি মালিকেরা দলকে নতুন ধাঁচে সাজাচ্ছেন, খেলোয়াড় কিনতে বিন্দুমাত্র কৃপণতা করছেন না। এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের লড়াইয়ে চার দলই নেমেছে আঁটঘাঁট বেঁধে। এই গ্রুপের একটি খেলাও যে হতাশ করবে না, সে আশা করাই যায়।

গ্রুপ ‘জি’: ম্যানচেস্টার সিটি, লাইপজিগ, রেড স্টার বেলগ্রেড, ইয়াং বয়েজ

একটা কথা চ্যাম্পিয়নস লিগ ভক্তদের মধ্যে খুবই প্রচলিত। সব সময় গ্রুপ পর্বে সহজ ড্র পায় ম্যানচেস্টার সিটি। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বর্তমান চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী দলের ড্র তুলনামূলক সহজই হয়েছে। এক লাইপজিগ ছাড়া সিটিকে টেক্কা দেওয়ার কেউই নেই এই গ্রুপে।

গ্রুপ ‘এইচ’: বার্সেলোনা, পোর্তো, শাখতার দোনেৎস্ক, রয়্যাল অ্যান্টওয়ার্প

বার্সেলোনার সমর্থকদের জন্য গত দুই মৌসুম ছিল ‘হরর শো’। চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ে খেলতে হয়েছে ইউরোপা লিগ। এবার বার্সা সমর্থকেরা একটু হাঁপ ছেড়ে বাঁচতেই পারেন, বড় কোনো দলের মুখোমুখি হতে হচ্ছে না এবার। যদিও পোর্তো আর শাখতার, দুই দলেরই ‘জায়ান্ট কিলার’ হিসেবে পরিচয় আছে। কিন্তু সব ঠিক থাকলে বার্সা এই বাধা উতরে যেতে পারবে সহজেই।

প্রায় ২০ বছর পর মেসি, রোনালদো, বেনজেমাদের ছাড়া প্রথমবারের মতো উঠতে চলেছে চ্যাম্পিয়নস লিগের পর্দা। গত দুই দশক ইউরোপিয়ান ফুটবলের রাজত্ব করা তারকাদের ছাড়া চ্যাম্পিয়নস লিগ, শুনতে হয়তো খারাপই লাগছে। কিন্তু ইউরোপিয়ান ফুটবলের জৌলুশ এখানেই, রোনালদিনিয়ো-জিদানকে অতীত করে যেভাবে নায়ক হয়েছিলেন মেসি-রোনালদো, সেভাবে নায়ক হয়ে উঠবেন ভিনিসিয়ুস-হল্যান্ডরাও। শুধু একটু সময়ের অপেক্ষা।