ওয়ানডে বিশ্বকাপ বিবর্তনের গল্প

ক্লাইভ লয়েড নামটি শুনে ছোটবেলায় মনে হতো ব্রিটিশ শাসনামলের কোনো সাহেব, ছড়ি ঘুরিয়ে মানুষকে শোষণ করছেন। এ রকম দৃশ্যের সঙ্গে লয়েড নামটি কেন যেন খুব যায়। বড় হয়ে যখন নামটির সঙ্গে ভালোভাবে পরিচিত হলাম, বোঝা গেল, প্রায়ই আমার মাথায় খেলে যাওয়া সেই দৃশ্যে তেমন বড় কোনো ভুল নেই। লয়েডকে সাহেবই বলা যায়, তবে ব্রিটিশ শাসন নয়, ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান শাসনের। ছড়ির জায়গায় ব্যাট আর নিরীহ মানুষের জায়গায় গোবেচারা বোলারদের কল্পনা করো, এবার তোমার কাছেও সত্যই মনে হবে দৃশ্যটি।

ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান শাসনের সেই স্মৃতি ঘাঁটলে লয়েডকেই সবচেয়ে বড় সাহেব মনে হয়। অনেকে ভিভ রিচার্ডসের কথা বলবেন। ভিভ একদমই আলাদা লিগের ক্রিকেটার ছিলেন, কিন্তু তা–ও লয়েডকে বেশি মহিমান্বিত মনে হওয়ার কারণ তাঁর নেতৃত্ব। শুরুর দুটি বিশ্বকাপ লয়েড নিজের দেশে নিয়ে যাওয়ার পর সেই ঔদ্ধত্য ফোলা গালের এক অস্ট্রেলিয়ান ছাড়া আর কেউ দেখানোর সাহস করেননি।

১৯৭৫ বিশ্বকাপের শুরুর সঙ্গে ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান উত্থানের মিলটা চমকপ্রদ। ১৯৭৪ সালে বিশ্বকাপ হবে, এমন কথাবার্তা যখন শোনা যাচ্ছে, সে বছরই স্যার গ্যারি সোবার্সের আমল থেকে ক্লাইভ লয়েডের আমলে পা দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেট। লয়েড দায়িত্ব নেওয়ার পর ধীরে ধীরে যে দলটা শেষ পর্যন্ত দাঁড়াল, কে নেই সে দলে? ভিভ রিচার্ডস, গর্ডন গ্রিনিজ থেকে শুরু করে ব্যাটসম্যানদের হাঁটু কাঁপানো অ্যান্ডি রবার্টস, মাইক হোল্ডিংদের সেই বিখ্যাত বা কুখ্যাত পেস কোয়াট্রেটও এই দলেরই অংশ।

দলটি আশির দশকের প্রায় শেষ পর্যন্ত যা করল, তাকে একচ্ছত্র আধিপত্য বললেও কম বলা হয়। এতটাই যে তাদের তুলনা করতে টানতে হলো ১৯৪৮ সালের ব্র্যাডম্যানের অধীনের অস্ট্রেলিয়াকে। ক্রিকেটে টাচ অব গ্রেটনেসের প্রায় সমার্থক হয়ে যাওয়া ব্র্যাডম্যানের সেই দলটিকে হারানো এতই কঠিন ছিল যে তাদের ডাকাই হতো ‘দ্য ইনভিন্সিবলস’ নামে।

এই দল নিয়েই লয়েড ১৯৭৫-এ প্রথম বিশ্বকাপ এবং তার পরের বিশ্বকাপে উইন্ডিজের নাম লিখে দেন। তবে লয়েডের একটি সুবিধাই ছিল বলা যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের যখন হার্ডহিটার ব্যাটসম্যানদের কোনো অভাব নেই, অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ডের মতো এক–দুটি দল ছাড়া তখন অন্য দলগুলো ওয়ানডে কীভাবে খেলতে হয়, তা–ও ঠিকমতো জানে না। জানবে কী করে, ১৯৭১ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটের আবির্ভাবের পর ১৯৭৫-এ প্রথম বিশ্বকাপ। তার আগে মাত্র ১৮টি ওয়ানডে দেখেছে বিশ্ব। রানের পর রান করা সুনীল গাভাস্কারের মতো দুঁদে ব্যাটসম্যানও ভারতের প্রথম ম্যাচে ৬০ ওভারের পুরোটা ব্যাটিং করে মাত্র ৩৬ রান করেছিলেন। তখন ওয়ানডে ৬০ ওভারেই হতো। গাভাস্কার পরে বলেছিলেন, পুরো ম্যাচে টেস্টের মতো অলআউট না হয়ে ড্রয়ের উদ্দেশ্যেই খেলেছিল ভারত। ওয়ানডে আর কী, টেস্টেরই তো ছোট সংস্করণ!

গাভাস্কার নিশ্চয়ই সেই স্মৃতি ভোলেননি। পারফরম্যান্সে ভয়াবহ খ্যাপা সর্মথকদের একজন গায়ে খাবারের বাক্স ছুড়ে মেরেছে, এমন স্মৃতি কে ভুলবে।

ইতিহাসে দলগত খেলার মধ্যে ক্রিকেটই সবচেয়ে আগে সংগঠিত হয়েছে। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই ক্রিকেট প্রায় অনেকগুলো দেশে জনপ্রিয় হওয়ার কারণটা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ। সাহেবদের দেশে জন্ম নেওয়ার পর বিশ্বের প্রায় অর্ধেকই তাদের অধীন, ফলে ক্রিকেটের নাম মানুষ জেনেছে দ্রুতই। যে সময় ক্রিকেট খুব সংগঠিতভাবে মাঠে গড়াচ্ছে এবং ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মতো দেশগুলো আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলছে, সে সময় পর্যন্ত হয়তো ফুটবল মানে মাঠে একটি বল নিয়ে লাথি মারা ছাড়া কিছুই নয়।

তবে এত আগে সংগঠিত উদ্যোগের পরও ক্রিকেটের বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে সবচেয়ে দেরিতে। ফুটবল, আইস হকি, এমনকি টেবিল টেনিসের মতো ক্রীড়াও ক্রিকেটের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ বছর আগে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পা রেখেছে। এমন প্রতিযোগিতার জন্য অনেকগুলো সংগঠিত দলের প্রয়োজন। ক্রিকেট যেসব দেশে জনপ্রিয় হয়েছিল, ইংল্যান্ড চুষে খেয়েছে বলে তাদের মধ্যে অনেক দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এতটাই বাজে ছিল যে জাতীয় দল গড়ে ওঠার মতো উদ্যোগ আসেনি অনেক দিন। পেটে ভাত না থাকলে বোর্ড চালাবে কে? সাম্রাজ্যবাদ ক্রিকেটের সঙ্গে কতটা সম্পর্কিত, তা বোঝা যায় আইসিসির আদি নাম শুনলে। ইম্পেরিয়াল ক্রিকেট কনফারেন্স!

তবে ক্রিকেটের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা শুরুর কাহিনি একদমই আলাদা হয়ে দাঁড়ানোর কারণটা চমৎকার। সম্ভবত ক্রিকেটই একমাত্র খেলা, যেটার বিশ্বকাপ নারীদের দিয়ে শুরু হয়েছিল। নারীরা যখন বিশ্বকাপ খেলতে মাঠে নেমে গেছেন, তখনো পুরুষ ক্রিকেটের হর্তাকর্তারা জানেন না, বিশ্বকাপ কাকে বলে। ১৯৭৩ সালে ইংলিশ ফুটবল ক্লাব উইলভারহ্যামটনের চেয়ারম্যান স্যার জ্যাক হেইয়ার্ড নামের এক ব্যবসায়ী ভদ্রলোকের প্রায় একক উদ্যোগে মাঠে গড়ায় নারীদের বিশ্বকাপ। এই টুর্নামেন্ট গড়াতে তিনি এতটাই উৎসাহী ছিলেন যে নিজের পকেট থেকে ৪০ হাজার ইউরো দিতেও দ্বিধা করেননি।

নারীদের বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচের তিন দিন আগে আমাদের ইম্পেরিয়াল ক্রিকেট কাউন্সিলের হর্তাকর্তাদের মনে হলো, এবার কিছু একটা করা দরকার। তত দিনে ইম্পেরিয়াল থেকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কনফারেন্স হয়েছে। তাঁরা একসঙ্গে বসলেন এবং ভোটের মধ্যে দিয়ে শেষ পর্যন্ত একটি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন, যা অনুষ্ঠিত হবে আরও দুই বছর পরে।

বিশ্বকাপ এত দেরিতে শুরু হওয়ার অবশ্য আরও কারণ ছিল। ক্রিকেট শুধু টেস্ট ম্যাচের মধ্য দিয়েই চলেছে এক শ বছরের বেশি সময় ধরে। ওয়ানডের আনুষ্ঠানিক উদ্ভাবন হয় ১৯৭১ সালে। টেস্ট ক্রিকেটের মতো এমন জটিল এবং লম্বা সময়ের খেলাকে কীভাবে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার ফরম্যাটে ফেলা হবে, সেটা মেলাতে পারেননি কেউই।

শেষ পর্যন্ত যে আনুষ্ঠানিক ওয়ানডের শুরু, সেটাও দুর্ঘটনার মাধ্যমে। ১৯৬৩ থেকেই এক দিনের ক্রিকেট ম্যাচ জনপ্রিয় হয়ে ওঠা শুরু করে, তবে আনুষ্ঠানিক কোনো স্বীকৃতি ছাড়া। ক্রিকেটের অভিজাত মোড়লেরা তখন ওয়ানডেকে ক্রিকেট বলে মনেই করতেন না। ১৯৭১ সালে একটি অ্যাশেজ ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে গেলে ক্ষতি কমাতে একটি এক দিনের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। সেই শুরু।

৭৫-এর গ্রীষ্মকালে শেষ পর্যন্ত যখন বিশ্বকাপ মাঠে গড়াল, তখনো মিঁয়াদাদরা জানেন না, এটি আসলে কী হতে চলেছে। সবগুলো দেশ একসঙ্গে খেলবে, তাই দেশকে জেতাতে হবে- এটাই মাথায় নিয়ে খেলতে গিয়েছিলেন তাঁরা। তাঁদের কাছে সেটা অবশ্য বিশ্বকাপ নয়, স্পনসর প্রুডেনশিয়াল ইনস্যুরেন্সের নামে প্রুডেনশিয়াল কাপ। বিশ্বকাপ নামটির উদ্ভাবন আরও পরে।

হাঁটি হাঁটি পা পা করে বিশ্বকাপ শুরু তো হলো, তবে তাতে লাভ হয়নি তেমন। ওয়ানডে ক্রিকেট কিংবা বিশ্বকাপের প্রতি না মানুষের খুব একটা আগ্রহ বেড়েছে, ক্রিকেটারদের তো নয়ই। সাবেক ইংলিশ ব্যাটসম্যান জন রাইটের ভাষায়, তাঁরা এমন একটি যুগে বিশ্বকাপ খেলেছেন, যা কাউন্টির মৌসুমে একটা বাধা ছাড়া অন্য কিছু বলে গণ্য হতো না। বিশ্বকাপ তখনো খেলা শুধু আনন্দের জন্য , গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়।

তবে ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বকাপের বছরে হঠাৎ করেই বেড়ে যায় বিশ্বকাপের গুরুত্ব। তার কারণ অস্ট্রেলিয়ান ব্যবসায়ী কেরি প্যাকার।

প্যাকার পরিবারের ব্যবসা মিডিয়া ঘিরেই ছিল। ‘কনসোলিডেটেড প্রেস হোল্ডিংস’ নামের এই কোম্পানির আওতায় ছিল বিশ্ববিখ্যাত চ্যানেল নাইন নেটওয়ার্ক। এখনো আছে। এই চ্যানেল নাইন থেকেই মূলত প্যাকারদের আয় হতো সবচেয়ে বেশি। ১৯৭৪ সালে কেরি প্যাকারের বাবা স্যার ফ্র্যাঙ্ক প্যাকারের মৃত্যুর পর সবকিছুর দায়িত্ব আসে কেরির কাছে। ক্ষয়িঞ্চু চ্যানেল নাইনকে বাঁচাতে কেরি বিনোদনের দিকে মন দেন। আর তাঁর সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায় খেলা।

অস্ট্রেলিয়ান গলফকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বাঁচিয়ে তোলার পর কেরির নজর যায় ক্রিকেটের দিকে। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে যখন ক্রিকেট ধীরে ধীরে আরও ভালোভাবে সংগঠিত হচ্ছে, তখনই সেটাকে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন কেরি। ১৯৭৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার সব টেস্ট ম্যাচ প্রচারের স্বত্ব কিনে নেন। এক বছর পর সেটা নবায়ন করতে অস্ট্রেলিয়ান বোর্ডকে পরের তিন বছরে দেড় মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার দেওয়ার প্রস্তাব জানান তিনি।  

কিন্তু সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। নাটকের শুরু সেখান থেকেই। বোর্ডের পছন্দ ছিল এবিসি নেটওয়ার্ক। প্যাকারের চেয়ে অনেক কম টাকার প্রস্তাব দিলেও এবিসিকেই সম্প্রচারের সুযোগ দিয়েছিল বোর্ড। তার পেছনে কারণও আছে। কোনো টেলিভিশন যখন ক্রিকেট সম্প্রচারে রাজি নয়, তখন এবিসি টেলিভিশন এগিয়ে এসেছিল। কেরি প্যাকার এগিয়ে আসার আগে প্রায় ২০ বছর অস্ট্রেলিয়াতে অনুষ্ঠিত সব আন্তর্জাতিক ম্যাচ সম্প্রচার করেছে তারা।

কেরি হাল ছাড়ার মানুষ নন। ক্রিকেটকে নিজের চ্যানেলে আনবেনই তিনি। তাঁর কিছু অস্ট্রেলিয়ান ব্যবসায়ী বন্ধু তাঁকে বলেন প্রদর্শনী ম্যাচের আয়োজন করতে। ধারণাটি মাথায় গেঁথে যায় কেরির। তিনি অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলের বড় ক্রিকেটারদের সঙ্গে বিশ্বের অন্য দলের ক্রিকেটারদের প্রদর্শনী সিরিজ উদ্যোগের সিদ্ধান্ত নেন। নাম দেন ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেট। তবে বোর্ডের সঙ্গে সুসম্পর্ক না থাকায় পুরো বিষয়টিই গোপন রাখেন তিনি।

তার সঙ্গে যোগ দেন সদ্য সাবেক হওয়া অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক ইয়ান চ্যাপেল। কাকে কাকে এই সিরিজে খেলানো যায়, সে তালিকা কেরিকে দেন চ্যাপেল। চ্যাপেলের তালিকা অনুযায়ী প্রায় সবাইকেই নিজের এই সিরিজে খেলানোর জন্য রাজি করান কেরি। তাঁর কাজ সহজ হয়ে যায় যখন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক টনি গ্রেগ ক্রিকেটার হিসেবে এই সিরিজে খেলার পাশাপাশি অন্য বড় ক্রিকেটারদের দলে টানার কাজটি করতে রাজি হয়ে যান। গোপনে বিষয়টি এতটাই এগিয়ে যায় যে ১৯৭৭ সালে ইংল্যান্ড সিরিজের আগে অস্ট্রেলিয়ার ১৭ জনের মাঝে ১৩ জনই কেরির হয়ে খেলতে রাজি। ইমরান খান, গ্রেগ চ্যাপেল, ক্লাইভ লয়েডের মতো ক্রিকেটাররা তখনই এই সিরিজের অন্তর্ভুক্ত।

এত বড় হয়ে যাওয়ায় বিষয়টিকে আর চাপা যায়নি। বিশ্ব ক্রিকেটের প্রথম বড় কেলেঙ্কারি ফাঁস হয় সে বছরই। ক্রিকেট বিশ্ব কেরি প্যাকারের এই উদ্যোগ মেনে নিতে পারেনি। যাঁরা কেরির এই সিরিজে খেলতে রাজি হয়েছিলেন, তাঁদের সবাইকে সর্বত্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। আইসিসি সিদ্ধান্ত নেয়, কেরির ওয়ার্ল্ড সিরিজে যাঁরা খেলতে রাজি হয়েছেন, তাঁদের জাতীয় দল থেকে নিষিদ্ধ করবে। ভয়ে অনেক ক্রিকেটারই নিজেকে সিরিজ থেকে সরিয়ে নেন। তা ঠেকাতে আইসিসির বিরুদ্ধে মামলা করেন কেরি।

তবে বেশির ভাগ ক্রিকেটাররাই অটল ছিলেন তাঁদের জায়গাতেই। ক্লাইভ লয়েড একটি ইন্টারভিউতে বলেন, দেশের হয়ে খেলার বদলে তিনি এ রকম সিরিজেই খেলতে রাজি, কারণ জাতীয় দলের চেয়ে এখানে টাকা অনেক বেশি। ক্রিকেট খেলেই তাঁরা জীবন ধারণ করেন এবং সহজে টাকা কামানোর সুযোগ কেই–বা ছাড়তে চায়। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ এবং অনান্য ক্রিকেটীয় গ্ল্যামারের শুরুটা ধরতে পারছ?

শেষ পর্যন্ত অবশ্য কেরিই জিতেছেন আদালতে। আদালতের রায়ে বলা হয়, ক্রিকেটারদের টাকা কামানোর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার অধিকার আইসিসির নেই। দেশের প্রতি আনুগত্যকে এভাবে উপস্থাপন করতেও নিষেধ করা হয়। আদালতে জিতলেও নিজের সিরিজ দিয়ে দর্শকের মন জয় করতে পারেননি কেরি। এমন নব্য উদ্যোগকে স্বাগত জানানোর মতো মানসিকতা তখনো দর্শকদের হয়ে ওঠেনি। তাঁদের মন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দিকেই ছিল।

তবে এই ঘটনা আইসিসি এবং ক্রিকেটের ভেতর–বাহির বদলে দেয়। ক্রিকেটকে নিজের হাত থেকে সরে যেতে দিতে চায়নি আইসিসি। তাই দর্শক টানতে এবং ক্রিকেটের নতুনত্বের স্বাদ আনতে শুরু হয় ডে-নাইট ম্যাচ, ফিল্ডিংয়ে ৩০ গজ বৃত্ত, ডিজিটাল স্কোরবোর্ড, সব খেলার বাধ্যতামূলক সম্প্রচার। বেড়ে যায় ওয়ানডে ম্যাচের সংখ্যা এবং অবধারিতভাবেই বেড়ে যায় ক্রিকেটারদের বেতন।

ওয়ানডেকে নতুনভাবে গুছিয়ে আনার চেষ্টায় বিশ্বকাপই সবচেয়ে বড় পন্থা হয় আইসিসির। মানুষের কাছে ওয়ানডেকে পরিচিত করার উপায় হিসেবে সামনে আসে বিশ্বকাপ। পৃথিবীর মাটিতে সবচেয়ে মহান টুর্নামেন্টগুলোর একটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ, এমন প্রচারণা শুরু হয় সে বছরেই। বিশ্বকাপের ফরম্যাটেও বদল আসে। শুরু হয় কোয়ালিফাইয়ার রাউন্ড, যেখানে খেলার পর বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায় দলগুলো।

১৯৬৩ সালে জন্ম নিলেও ১৯৭৯-তে এসে যেন ওয়ানডের পুনর্জন্ম ঘটে। অনেক ক্রিকেট তাত্ত্বিকই এ বছরকে ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্ম সাল বলে গণ্য করেন।

ওয়ানডে দিয়ে বিশ্বকাপের শুরু, নাকি বিশ্বকাপ দিয়ে ওয়ানডের, এই ধাঁধাটা কি এখন একটু জটিল হয়ে গেল?

(কিশোর আলোর জুন ২০১৯ সংখ্যায় প্রকাশিত)