ক্রিকেটের ভূত!

ক্রিকেটের সবচেয়ে জটিল নিয়ম ডাকওয়ার্থ লুইস মেথড সংক্ষেপে ডিএল মেথড। যদিও ক্রিকেটকে সহজ করতেই এই নিয়মের শুরু, তবু ডিএল মেথড এখনো অনেকের কাছে কেবলই গোলকধাঁধা।

১৯৯২ বিশ্বকাপের কথা, দক্ষিণ আফ্রিকা ফাইনালের হাতছোঁয়া দূরত্বে, সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারাতে পারলেই  স্বপ্নের ফাইনালে কেপলার ওয়েসেলসের দল। বৃষ্টির আগেও সমীকরণটা প্রোটিয়াদের পক্ষেই ছিল। ১৩ বলে প্রয়োজন মাত্র ২২ রান। আর তখনই সিডনির আকাশে ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টি শেষ হতেই প্রোটিয়াদের মাথায় হাত! স্কোরবোর্ডের সমীকরণ অনুযায়ী ১ বলে প্রয়োজন ২২ রান!  এমন অদ্ভুত সমীকরণে প্রোটিয়াদের হটিয়ে ইংল্যান্ড ফাইনালে।

ক্রিকেটে বৃষ্টি সব দলের জন্যই অভিশাপ। বৃষ্টির এই দুর্ভোগ দূর করতেই পরবর্তী সময়ে ডিএল পদ্ধতির সৃষ্টি। ইংলিশ পরিসংখ্যানবিদ ফ্রাঙ্ক ডাকওয়ার্থ ও টনি লুইস এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। প্রথম ১৯৯৬-৯৭ সালে ইংল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে সিরিজে ব্যবহার করা হয় এই পদ্ধতি। তবে এতেও যে বৃষ্টির দুর্ভোগ একেবারে কমে গেছে তা নয়।

সাধারণত বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচেই ডিএল পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হলে প্রত্যেক দলকে ন্যূনতম ২০ ওভার খেলতেই হবে। তার আগে বৃষ্টি শুরু হলে ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতির মধ্যে পড়বে না। তখন ম্যাচ পরিত্যক্ত হবে অথবা  রিজার্ভ ডে-তে পুনরায় খেলা হবে। টিটোয়েন্টির ক্ষেত্রে অবশ্য সমীকরণটা ভিন্ন। টিটোয়েন্টিতে ৫ ওভারের পর বৃষ্টি শুরু হলেই ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। তবে এর আগে বৃষ্টি শুরু হলে যথারীতি ম্যাচ পরিত্যক্ত হবে অথবা রিজার্ভ ডের ব্যবস্থা থাকলে পুনরায় ম্যাচ হবে।

তবে ডিএল মেথডের হিসাবেই যত সমস্যা, একটু ভেঙে বলি। ৫০ ওভারে যদি কোনো দল ২০০ রান করে আর এরপরই বৃষ্টি শুরু হয়, তাহলে প্রতিপক্ষ দলের ২৫ ওভারে টার্গেট কত হতে পারে? অনেকেই হয়ত ভাবছ ২০০ রানের অর্ধেক রান নিশ্চয়ই ১০১। কিন্তু ডিএল মেথড ধাঁধার থেকেও বেশি জটিল!

ডিএল মেথডে মূলত দুটি বিষয়ে প্রাধান্য দেওয়া হয়। ওভারসংখ্যা এবং উইকেট। কার্টেল ওভার হয়ে গেলেও উইকেট কিন্তু প্রতিপক্ষের হাতে দশটাই রয়েছে। সুতরাং প্রতিপক্ষ এদিক থেকে কিছুটা হলেও সুবিধা পাবে। বাংলাদেশের সর্বশেষ ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালের উদাহরণটাই দেওয়া যাক। উইন্ডিজ ২৪ ওভারে করল ১৫২। আর সেটাই কিনা বৃষ্টি নিয়মে বাংলাদেশের টার্গেট হলো ২১০! এতক্ষণে এর কারণটা নিশ্চয়ই পরিষ্কার। উইন্ডিজ কিন্তু ২৪ ওভারে ১৫২ রান করেছিল এক উইকেটে। আর এর সুবিধাই পেয়েছিল ওরা। যদিও টাইগারদের সামনে এই সুবিধাটুকুও কোনো কাজে দেয়নি।

আইসিসির সর্বশেষ নিয়মানুসারে আরেকটি ব্যাপার যোগ করা হয়েছে। ইনিংসের শেষ দিকে যে দল বেশি রান করবে এবং যাদের হাতে বেশি উইকেট থাকবে, একটু বাড়তি সুবিধা পাবে তারা৷ ৫০ ওভারের ম্যাচের ক্ষেত্রে ইনিংসের শেষ ২০ ওভারের রান রেট বেশি গুরুত্ব পাবে৷

বৃষ্টি আইনটা যে শুধু সাধারণ মানুষের কাছেই জটিল তা কিন্তু নয়, ভারতের সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি নিজেই একবার বলেছিলেন, ‘আসলে এই আইনটা আমি খুব একটা ভালো বুঝি না!’