খুদে ক্রিকেটারদের লড়াই

১৩ জুন নারায়ণগঞ্জের শামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে হয়ে গেল প্রাইম ব্যাংক স্কুল ক্রিকেটের ফাইনাল। এবার সারা দেশের ৩৫০ স্কুলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় খুদে ক্রিকেটারদের এ আয়োজন। শেষ পর্যন্ত রংপুর শিশুনিকেতন উচ্চবিদ্যালয় ও মেহেরপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় শিরোপার লড়াইয়ে অংশ নেয়। দুই স্কুলের লড়াইয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে শিশুনিকেতন উচ্চবিদ্যালয়ের ক্রিকেটাররা।

করোনার কারণে গত দুই বছর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) এ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ২০২০ সালে করোনার থাবায় সবকিছু থমকে যাওয়ার আগে স্কুল ক্রিকেটের জেলা পর্যায়ের খেলা শেষ হয়েছিল। বাকি ছিল বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ের ম্যাচগুলো। পরে সেই টুর্নামেন্ট আর হয়নি। ২০২১ সালে স্কুল ক্রিকেট হয়নি করোনার কারণে।

দুই বছর পর এবার স্কুল ক্রিকেটের প্রত্যাবর্তনটা ছিল জমকালো। দুই দলের ফাইনাল ম্যাচটি টিভিতে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। শামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে সেদিন ছিল উৎসবের আবহ। তবে দিন শেষে ‘উৎসব’ শব্দটা শুধু শিশুনিকেতনের সঙ্গেই মানানসই মনে হচ্ছিল। ফাইনাল ম্যাচে আগে ব্যাট করা শিশুনিকেতনের ১০২ রানের জবাবে মেহেরপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় অলআউট হয় মাত্র ৪৩ রানে। ৫৯ রানের সহজ জয়ে স্কুল ক্রিকেটের চ্যাম্পিয়ন হয় রংপুর শিশুনিকেতন উচ্চবিদ্যালয়।

জয় নিশ্চিত হতে না হতেই শিশুনিকেতনের খুদে ক্রিকেটারদের উল্লাস, চিৎকার-চেঁচামেচিতে কেঁপে ওঠে শামসুজ্জোহা স্পোর্টস কমপ্লেক্স। ওদিকে হারের হতাশায় মুষড়ে পড়ে মেহেরপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের খুদে ক্রিকেটাররা। কয়েকজন ক্রিকেটার তো কাঁদছিল হারের দুঃখে। কেউ কেউ মলিন মুখে দেখছিল ট্রফি হাতে শিশুনিকেতনের ক্রিকেটারদের উল্লাস। তবে মাঠের হার–জিত ছাপিয়ে স্কুল ক্রিকেটের ফাইনালের জমজমাট আয়োজনের সমাপ্তিটা হয় দারুণ এক প্রতিশ্রুতি দিয়ে। এ আয়োজন জাগিয়েছে স্কুল ক্রিকেটকে আবারও জনপ্রিয় করে তোলার সম্ভাবনাও।

জয়ের আনন্দে উদ্ভাসিত রংপুর শিশুনিকেতন উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

সেদিন আবার মাঠে খেলা দেখতে এসেছিলেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার ও সাবেক পেসার হাসিবুল হোসেন। হাবিবুল জাতীয় দলের নির্বাচক। হাসিবুলের কাজটা আবার স্কুল ক্রিকেটকে ঘিরেই। বিসিবির ইয়ুথ ক্রিকেটের নির্বাচক তিনি। আসরজুড়েই হাসিবুলের জহুরি চোখ খুঁজেছে নতুন প্রতিভা। ফাইনালেও তাঁর চোখ ছিল কে কেমন খেলছে সেদিকে।

ওদিকে খেলাটি সরাসরি সম্প্রচার করার বিষয়টি ভালো লেগেছে হাবিবুলের। এতে ভবিষ্যতের খুদে ক্রিকেটাররা অংশগ্রহণের উৎসাহ পাবে বলে তাঁর বিশ্বাস। প্রতিবছর এ আয়োজন এমন জমজমাটভাবে করতে পারলে স্কুল ক্রিকেট হয়ে উঠবে ক্রিকেট সংস্কৃতির একটা অংশ। কে জানে, ভবিষ্যতে স্কুল ক্রিকেটও হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম ক্রিকেটার সরবরাহের উপায়।

এই যেমন স্কুল ক্রিকেটের ফাইনালে রংপুর শিশুনিকেতন উচ্চবিদ্যালয়ের অধিনায়ক শাইখ ইমতিয়াজ কী দারুণ পারফরম্যান্সই না করল! এই কিশোর লেগ স্পিনার ১৪ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ফাইনালে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছে। ৩৩ উইকেট নিয়ে সে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিও। সঙ্গে ২০০ ছুঁই ছুঁই রান নিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ও ইমতিয়াজ। চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফি, বিজয়ী মেডেল—এ দুটি পুরস্কার তো আছেই। সঙ্গে ফাইনালে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছে এই ১৬ বছর বয়সী খুদে ক্রিকেটার। সেদিন ইমতিয়াজের ট্রফির ভারে নুয়ে পড়ার অবস্থা হয়েছিল।

জয়ের আনন্দে উদ্ভাসিত রংপুর শিশুনিকেতন উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

এবারের স্কুল ক্রিকেটের পারফরম্যান্স দেখে এর মধ্যেই প্রায় ১০০ ক্রিকেটার বাছাই করেছেন নির্বাচকেরা। সেখান থেকে ১৫ জনের অলস্টার দল গঠন করা হবে। যে দলটির ক্রিকেটাররা বিসিবির স্কলারশিপের আওতায় থাকবে। সঙ্গে বিশেষ অনুশীলন ক্যাম্পের মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বাড়ানোর পরিকল্পনাও আছে বিসিবির। এ বছরই স্কুল ক্রিকেটের অলস্টার দলটি কলকাতায় সেখানকার স্কুল ক্রিকেটের দলের সঙ্গে ম্যাচ খেলবে। অংশগ্রহণকারী ক্রিকেটারদের ডেটাবেজ তৈরি করা হবে। সবার পৃথক শনাক্তকরণ নম্বর থাকবে। তাদের তদারকি করা হবে স্নাতক পাস পর্যন্ত।