তারুণ্য ও অভিজ্ঞতায় যত আশা

ছবি: শামসুল হক

বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজের চিত্র কল্পনা করতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে কিছু নাম। আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান, নাসুম আহমেদ—এই নতুন তারকারা দারুণ ভূমিকা রাখেন অস্ট্রেলিয়ার মতো বড় প্রতিপক্ষকে হারাতে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে যোগ হয় নতুন মাত্রা।

বাংলাদেশ ক্রিকেটে সর্বশেষ এমন নতুনের উত্থান ঘটেছিল ২০১৫ সালে। সেবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশ খেলেছিল কোয়ার্টার ফাইনালে। এরপর একে একে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তানকে হারায় লাল-সবুজের দল। মোস্তাফিজুর রহমান, সৌম্য সরকাররা তারকা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন সে বছর। বাংলাদেশ ক্রিকেটও দেয় বিরাট একটা লাফ।

এরপর বাংলাদেশ ক্রিকেটের অগ্রগতি এলেও সেটা প্রত্যাশিত গতিতে নয়। এই এক পা এগোয় তো আরেক পা পিছিয়ে যায়। জয় যা আসছিল তাতে অভিজ্ঞদের অবদানই ছিল বেশি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কম অভিজ্ঞ, দলে এমন যাঁরা আছেন তাঁদের কাছ থেকে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স তেমন পাচ্ছিল না বাংলাদেশ দল।

নতুন জুটি মুস্তাফিজ-শরীফুল
ছবি: শামসুল হক

এরপর এল ২০২১ সালের জিম্বাবুয়ে সিরিজ। যেখানে আফিফ হোসেন, শরীফুল ইসলাম, শামীম হোসেনরা দেখালেন সামর্থ্যের ঝলক। জিম্বাবুয়ে সিরিজের সেই নতুন নামগুলোই অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে হারিয়ে দিয়ে গড়ল ইতিহাস। এই লেখা যখন পড়ছ, তত দিনে বাংলাদেশে এসে গেছে আরেক বড় দল নিউজিল্যান্ড। দুই দল নিজেদের মধ্যে তিনটি ম্যাচও খেলে ফেলার কথা। আর নিজের ঘরের মাঠের খেলায় নিউজিল্যান্ডকেও হারিয়ে দেওয়ার শক্তি যে আছে বাংলাদেশের, সেটি তো অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজে হারিয়েই প্রমাণ করেছে মাহমুদউল্লাহর দল।

মেহেদী হাসান
ছবি: শামসুল হক

যদি শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডকে বাংলাদেশ দল সিরিজে হারাতে পারে, তাহলে ২০১৫ সালের মতো বিরাট ঘটনা ঘটে যাবে। সেবার টানা তিন বড় দলকে হারিয়ে বাংলাদেশ দল এক লাফে উঠে আসে ওয়ানডে ক্রিকেটের র‌্যাঙ্কিংয়ের সাত নম্বরে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে সাতের নিচে নামতে হয়নি। বরং একবার র‌্যাঙ্কিংয়ে ছয়েও উঠেছিল বাংলাদেশ। এবার অস্ট্রেলিয়ার পর যদি নিউজিল্যান্ডকেও বাংলাদেশ হারিয়ে দেয়, তাহলে টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ উঠে আসবে ছয়ে! আর পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে ধবলধোলাই করলে তো কথাই নেই, বাংলাদেশের জায়গা হবে পাঁচ নম্বরে। সে ক্ষেত্রে ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার সুযোগও পাবে বাংলাদেশ দল।

আফিফ হোসেন
ছবি: শামসুল হক

এ বছরও আরেকটি বিশ্বকাপ আছে। নিউজিল্যান্ড সিরিজের শেষ ম্যাচটির পর বাংলাদেশের পরের টি-টোয়েন্টি ম্যাচটিই হবে বিশ্বকাপে। ১৭ অক্টোবর বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের খেলায় বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড। প্রথম রাউন্ডে বাংলাদেশের বাকি দুই প্রতিপক্ষ ওমান ও পাপুয়া নিউগিনি। খেলাগুলো হবে ওমানে। প্রথম রাউন্ডের দুই গ্রুপের শীর্ষ দুই দল যাবে দ্বিতীয় রাউন্ডে। যেখানে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকবে ভারত, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, আফগানিস্তানের মতো দল।

বড় দলের বিপক্ষে বড় মঞ্চের লড়াইয়ের আগে যে আত্মবিশ্বাসটা দরকার ছিল, সেটার সঙ্গে বাংলাদেশ দলের সন্ধি করিয়ে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সিরিজের জয়। কারণও আছে। যে দলটাকে মনে হতো শুধু সাকিব-তামিমদের, সেখানে এখন অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্কের মতো বোলারের গতিময় বলে সপাটে চার মারার মতো আফিফ আছেন। মোস্তাফিজের মতো বিশ্বমানের বোলারের সঙ্গে সঙ্গে জুটি বাঁধার জন্য জন্য আছেন আরেক বাঁহাতি পেসার শরীফুল।

নাসুমই–বা কম কী। এই তো গত মার্চেই প্রথম বাংলাদেশের হয়ে খেললেন এই বাঁহাতি স্পিনার। নিউজিল্যান্ডের মতো স্পিন–বিরুদ্ধ কন্ডিশনে দেখালেন প্রতিভার ঝলক। এরপর যখন দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজের প্রথম সিরিজটা খেললেন, তখন সেই নাসুমই প্রথম ম্যাচটা জেতাতে সাহায্য করলেন একাই ৪ উইকেট নিয়ে।

ছবি: শামসুল হক

অফ স্পিনে এত দিনের নির্ভরতা ছিল শুধু মেহেদী হাসান মিরাজের ওপর। অস্ট্রেলিয়া সিরিজে মিরাজ ছিলেন না। কিন্তু আরেক মেহেদী হাসান এসে ঠিকই ভেল্কি দেখিয়ে দিলেন। অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের হিমশিম খেতে হয়েছে তাঁর বৈচিত্র্যে। আর শামীম হোসেন? অস্ট্রেলিয়া সিরিজে খুব ভালো না করলেও জিম্বাবুয়ে সিরিজে শামীম দেখান ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং কাকে বলে। অফ সাইড, লেগ সাইড, সোজা—সবদিকে সপাটে চলে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের এই তরুণদের ব্যাট।

সঙ্গে ক্রিকেট কাননে বাংলাদেশের একেকটি প্রস্ফুটিত ফুল—সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, তামিমরা তো আছেনই। মোস্তাফিজ, তাসকিন, লিটন, সৌম্য, নুরুলরাও খুঁজে পাচ্ছেন ধারাবাহিকতা। বিশ্বকাপকে ঘিরে আশার আকাশটা এই নামগুলোর কারণেই ক্রমেই পরিচ্ছন্ন মনে হচ্ছে। আর সাকিব তো বলেছেনই, ‘আমরা এবারের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালও খেলতে পারি।’