দুই হাজার ডিজাইনকে পেছনে ফেলে সেরা হলো যে অলিম্পিক মাসকট

১৯৩২ সাল থেকে অলিম্পিকে নিয়মিত দেখা মেলে মাসকটদের। বিপন্নপ্রায় প্রাণী থেকে শুরু করে রূপকথার জীবসহ বহু মাসকট উৎসব সাজিয়েছে অলিম্পিকের ইতিহাসজুড়ে। নানা ধাঁচের-নানা রঙের হাসিখুশি চরিত্ররাই মূলত মাসকট হিসেবে জায়গা করে নেয়। কিন্তু টেলিপোর্টেশনের মতো অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার মাসকট? উহু, ২০২০ টোকিও অলিম্পিকসের মিরাইতোয়া এদিক থেকে সবার ব্যতিক্রম। প্রায় ২০০০ ডিজাইনের মধ্য থেকে কীভাবে অলিম্পিকসের মাসকট হয়ে উঠল অতিপ্রাকৃত ক্ষমতাধারী মিরাইতোয়া, সে গল্পই জানব আজ।

সহজ ভাষায়, মাসকট হলো আয়োজনের মুখপাত্র। অলিম্পিকজুড়ে দেখা মেলে এই চরিত্রের। খেলার সরঞ্জাম, প্রচারসামগ্রী এমনকি টিম বাসেও জায়গা করে নেয় এটি। এই মাসকটরা নিজের বৈশিষ্ট্য, ডিজাইনের সাহায্যে আয়োজক দেশের ঐতিহ্য তুলে ধরে। পাশাপাশি অলিম্পিককে তরুণদের মাঝে জনপ্রিয় করতেও ভূমিকা রাখে। মাসকটের মাধ্যমে হওয়া বিভিন্ন প্রচার–প্রচারণা মার্চেন্ডাইজ আয়োজনের খরচ তুলতে কিছুটা সাহায্য করে। সাধারণত মাসকট হিসেবে রাখা হয় কোনো প্রাণী বা কাল্পনিক চরিত্রকে।

টোকিও অলিম্পিকসের মাসকট মিরাইতোয়া

এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের শেষ দিকে ২০২০ টোকিও অলিম্পিকস কর্তৃপক্ষ মাসকট ডিজাইনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। জাপানের বিভিন্ন শিল্পী অলিম্পিকস ও প্যারাঅলিম্পিকসের জন্য একটি করে দুই মাসকটের ডিজাইন করেন। শেষমেশ মোট জমা পড়ে ২০৪২ সেট ডিজাইন। এত্ত এত্ত মাসকট থেকে সেরা বাছাই করার প্রক্রিয়া শেষে ডিজাইনের সংখ্যা নামে তিনে।

এরপর জাপানের ১৬৭৬৯টি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের ভোটে বাছাই করা হয় সেরা মাসকটকে। আশ্চর্যের বিষয় হলো জাপানের প্রাথমিক স্কুলে পড়া ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থীই এই ভোটে অংশ নিয়েছিল। সংখ্যাটা কিন্তু অনেক বড়।

শিল্পী রিও তানিগুচি

ভোটের ফলাফলে জাপানি শিল্পী রিও তানিগুচির ডিজাইন করা একজোড়া মাসকট নির্বাচিত হয় টোকিও অলিম্পিকস ও প্যারালিম্পিকসের জন্য। যাদের নাম মিরাইতোয়া ও সমেইতি।

এবার বলা যাক অলিম্পিক আসরের মাসকটদের কথা। প্রতিটি মাসকট নিজের নাম ও বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে বিশেষ বার্তা পৌছায় বিশ্বকে, নিজের চরিত্রের মধ্যে ফুটিয়ে তোলে অলিম্পিকসের আসর।

টোকিও প্যারালিম্পিকসের মাসকট সমেইতি

যেমন মিরাইতোয়া অর্থ ‘চিরস্থায়ী আশা’। টোকিও অলিম্পিকস মানুষকে আশাবাদী করে তুলবে, সেই ইচ্ছা থেকেই এমন নাম। মিরাইতোয়ার ডিজাইনের নীল দাগকাটা প্যাটার্ন অলিম্পিক লোগোর প্রতীক। চরিত্র বিচারে মাসকটটির ন্যায়বোধ অত্যন্ত প্রবল। হাসিখুশী মিরাইতোয়ার অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা হলো, টেলিপোর্টেশনের মাধ্যমে যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় পৌছে যেতে পারা। মিরাইতোয়া তুলে ধরে একটি জাপানি লোককথাকে। যার অর্থ, ‘অতীত থেকে শেখো, নতুন ভাবনা গড়ে তোলো’। আর প্যারাঅলিম্পিকসের মাসকট সমেইতির ডিজাইনের ধারণা এসেছে জাপানের চেরি ফুল থেকে। ফলে চারিত্রিক দিক থেকে মাসকটটি বেশ নরম স্বভাবের। প্রয়োজন হলে আবার প্রচণ্ড শক্তিশালী। নিজের গায়ে জড়ানো চাদরের সাহায্যে সমেইতি উড়তে পারে আকাশে। চেরি ফুলের মতো অ্যানটেনা দিয়ে যেকোনো বার্তা টেলিপোর্ট করতে পারে যেকোনো স্থানে। ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের হলেও মাসকট মিরাইতোয়া এবং সমেইতি আদতে বন্ধু।

কিন্তু সমেইতি হোক বা মিরাইতোয়া, প্রতিটি মাসকট অলিম্পিককে করে তোলে আরও জমজমাট। সেই আমেজেই শুরু হয়েছে এবারের টোকিও আসর। মাসকটদের উচ্ছ্বাস কতটা স্পর্শ করে বিশ্ববাসীকে, সেটাই দেখার অপেক্ষা।