বিশ্বকাপে বাংলার মেয়েরা

রুমানা আহমেদ কাঁদছেন। তাঁর কান্না বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাওয়ার আনন্দে।

গত বছর নভেম্বরে জিম্বাবুয়েতে হচ্ছিল বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব। করোনাভাইরাসের নতুন ধরন অমিক্রন আসার পর মাঝপথেই বাতিল হয়ে গেল সেটি। এমনিতে টুর্নামেন্টটা তখন পর্যন্ত ছিল চমকে ভরা। একদিকে বাংলাদেশ হারিয়েছে পাকিস্তানকে, অন্যদিকে হেরে গেছে থাইল্যান্ডের কাছে। গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে সুপার সিক্স, সেখান থেকে শীর্ষ তিনটি দলের সুযোগ পাওয়ার কথা ছিল নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে।

করোনাভাইরাসের আঘাতে বদলে গেল সে হিসাব-নিকাশ। তখন র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকার সুবাদে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেল বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সে সংবাদ যখন নিশ্চিত করল আইসিসি বা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল, বাংলাদেশ দল তখন টিম হোটেলে। বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাওয়ার আনন্দ ভাগ করতে রুম থেকে বেরিয়ে এলেন সবাই, পেসার জাহানারা আলমের ফেসবুকে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেল অমন।

কেউ ‘ওয়ার্ল্ড কাপ, ওয়ার্ল্ড কাপ’ বলে চিৎকার করছিলেন, কেউ কাঁদছিলেন রুমানার মতো করে। হয়তো রুমানার তখন মনে পড়ছিল এ লম্বা ভ্রমণটা, যেটি পেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশের মেয়েদের ক্রিকেট।

মেয়েদের ক্রিকেটের ওয়ানডে স্ট্যাটাস বা মর্যাদা বাংলাদেশ পেয়েছিল ২০১১ সালে। সেবারও বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব খেলছিল তারা। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টুর্নামেন্টে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ, নিজেদের প্রথম ওয়ানডেও সেটি। তার আগপর্যন্ত ওয়ানডে স্ট্যাটাস ছিল না তাদের। সে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন রুমানা। খেলেছিলেন শারমিন আখতার, ফারজানা হক, সালমা খাতুন, জাহানারা।

সেবার নিয়ম ছিল, বাছাইপর্বের শীর্ষ চারটি দল সুযোগ পাবে দুই বছর পর ভারত বিশ্বকাপে। আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ হয়েছিল পঞ্চম। ১০ বছর পর যখন বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলছে, দলে আছেন শারমিন, ফারজানা, সালমা, জাহানারা, রুমানারা।

রুমানা তো কাঁদবেনই!

বাংলাদেশের কাছে এক দিক দিয়ে বিশ্বকাপ নতুন নয়। ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত চারটি বিশ্বকাপ খেলে ফেলেছে তারা। তবে সেটি টি-টোয়েন্টি বা ২০ ওভারের বিশ্বকাপ। একসময় ২০ ওভারের বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের নাম ছিল ‘ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি’, মানে সরাসরি ‘ওয়ার্ল্ড কাপ’ বলা হতো না। তবে এখন সেটিকে ‘টি-টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপ’ই বলা হয়।

২০ ওভারের বিশ্বকাপে সাধারণত খেলে ১০টি দল। ওয়ানডে বা ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে এখন থাকে সাধারণত আটটি দল। শুধু কম দলে বলে নয়, দল বাছাই করার প্রক্রিয়ার কারণেও ওয়ানডে বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া বাংলাদেশের মতো দলের জন্য তুলনামূলক কঠিন।

এবার যেমন বাছাইপর্বের আগে থেকেই বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ নিশ্চিত হয়ে গেছে পাঁচটি দলের। স্বাগতিক হিসেবে আছে নিউজিল্যান্ড। সঙ্গে ‘উইমেনস চ্যাম্পিয়নশিপ’ নামে একটা লিগের ফলের ভিত্তিতে আছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত।

বাংলাদেশ যেহেতু এবার বিশ্বকাপে খেলছে, ফলে সে হিসাবেই ২০২২ থেকে ২০২৫ সালের পরের চক্রের ‘চ্যাম্পিয়নশিপ’-এ খেলার সুযোগও নিশ্চিত। বিশ্বকাপে সুযোগ না পেলেও পরেরবারের চ্যাম্পিয়নশিপে থাকবে আয়ারল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কাও। চ্যাম্পিয়নশিপে থাকা মানে কিছু নির্দিষ্টসংখ্যক ম্যাচ ও সিরিজ খেলার নিশ্চয়তা। একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সে চ্যাম্পিয়নশিপের শুরুর দিকে থাকতে পারলে মিলবে পরের বিশ্বকাপেও সরাসরি খেলার সুযোগ।

অবশ্য আপাতত রোমাঞ্চ এবারের বিশ্বকাপকে ঘিরেই। এমনিতে এ বিশ্বকাপটি হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে আরও অনেক কিছুর মতো পিছিয়ে যায় এ টুর্নামেন্টটিও।

নিউজিল্যান্ডের ছয়টি ভেন্যুতে হবে এবারের বিশ্বকাপ—ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভাল, ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভ, অকল্যান্ডের ইডেন পার্ক, হ্যামিল্টনের সেডন পার্ক, ডানেডিনের ইউনিভার্সিটি ওভাল ও মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভালে। আটটি দল প্রথমে সবাই খেলবে সবার সঙ্গে। এরপর পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ চারটি দল যাবে সেমিফাইনালে। ৪ মার্চ শুরু হওয়া বিশ্বকাপের ফাইনাল হবে ৩ এপ্রিল, ফাইনালের ভেন্যু ক্রাইস্টচার্চ।

মেয়েদের বিশ্বকাপের এটি ১২তম আসর।

এ বিশ্বকাপের শুরুর গল্পে অবশ্য মিশে আছে এক নারীর নিবেদন, দৃঢ়প্রতিজ্ঞা আর বদলে দেওয়ার কঠিন মানসিকতার পরিচয়। তাঁর নাম র‌্যাচেল হেহো ফ্লিন্ট। শুধু বিশ্বকাপ নয়, মেয়েদের ক্রিকেটের সঙ্গেই তাঁর নামটা আদতে অবিচ্ছেদ্য।

ছোটবেলায় ভাই-বন্ধুদের সঙ্গে বাড়ির সামনে ক্রিকেট খেলতেন হেহো ফ্লিন্ট।

অমনই এক টান টান উত্তেজনার এক ম্যাচে এসে একবার বাগড়া বাধালেন এক পুলিশ। বললেন, খেলার কারণে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এরপর তাদের নাম-ঠিকানা লিখে নিলেন। সবারই নিলেন, শুধু হেহো ফ্লিন্টেরটি ছাড়া। তাকে গ্রাহ্যই করলেন না! গিয়ে জিজ্ঞাসা করাতে পুলিশের ওই সদস্য বললেন, ‘মেয়েরা ক্রিকেট খেলে না’। মানে, এ কারণে হেহো ফ্লিন্টের নাম না লিখে নিলেও চলবে তাঁর।

হেহো ফ্লিন্ট সে ব্যাপারটা ঠিক মানতে পারলেন না। ছোট হলে কী হবে, এমন কথা বেশ আঘাত করল তাঁকে।

ওই সেদিনের ঘটনার পর থেকেই কি না কে জানে, মেয়েদের ক্রিকেটকে সামনে আনতে বলতে গেলে তিনি এক জীবন ব্যয় করলেন। সে সময় ছেলেদের মধ্যে যারা ‘পেশাদার’, তাঁরা ক্রিকেট খেলে টাকা পেতেন। মেয়েদের খেলতে গেলে উল্টো খরচ করতে হতো। পত্রিকায় কোনো সংবাদ থাকত না, আয়োজনের কোনো তাগিদও তেমন ছিল না কারও মধ্যে।

হেহো ফ্লিন্ট খেলতে খেলতেই সাংবাদিকতাও শুরু করে দিলেন। এমনও হয়েছে, নিজে একটু আগে যে ম্যাচে খেলেছেন, সেটিরই ম্যাচ রিপোর্ট লিখতে বসে গেলেন একটু পর। শুরুতে স্থানীয় এক পত্রিকা, পরে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত পত্রিকা টেলিগ্রাফ, বিশ্বের অন্যতম বড় সংবাদ সংস্থা রয়টার্সেও কাজ করেছেন হেহো ফ্লিন্ট। সাংবাদিকতার সঙ্গে করেছেন ক্রিকেট সংগঠক বা আয়োজকের কাজও। এমনও হয়েছে, হয়তো রাস্তায় দাঁড়িয়ে গেলেন, মেয়েদের ক্রিকেটের জন্য অর্থ জোগাড় করতে।

বিশ্বকাপ বলে যে ব্যাপার, সেটি আয়োজন করার পেছনেও বলতে গেলে সবচেয়ে বড় অবদানটা ওই ভদ্রমহিলার। জ্যাক হেওয়ার্ড নামের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাঁর কোনো এক আড্ডার সময়ই আসে বিশ্বকাপ আয়োজনের পরিকল্পনা। হেওয়ার্ড সে টুর্নামেন্ট করতে ৪০ হাজার পাউন্ড দিয়েছিলেন।

১৯৭৩ সালে আয়োজিত হলো ক্রিকেটের প্রথম বিশ্বকাপ, যেটিতে খেলেছিলেন মেয়েরা। ছেলেদের প্রথম যে বিশ্বকাপ, সেটি হয়েছিল এর দুই বছর পর, ১৯৭৫ সালে।

হেহো ফ্লিন্ট

২০ জুন শুরু হওয়া মেয়েদের বিশ্বকাপে ছিল সাতটি দল—ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোব্যাগো, জ্যামাইকা, ইয়াং ইংল্যান্ড ও আন্তর্জাতিক একাদশ। লন্ডনে প্রথম ম্যাচটি হওয়ার কথা ছিল নিউজিল্যান্ড ও জ্যামাইকার। বৃষ্টিতে খেলাই হতে পারল না, কোনো দর্শকও এলেন না কিউ গ্রিনের মাঠে।

তবে হেহো ফ্লিন্টরা দমেননি। বিশ্বকাপ চলল ঠিকই, শেষ পর্যন্ত জিতল ইংল্যান্ড। হেহো ফ্লিন্ট এবার তাঁর পরের মিশনে নামলেন। লর্ডসে মেয়েদের ক্রিকেট আয়োজনের মিশন।

এমনিতে লর্ডসকে বলা হয় ক্রিকেটের মক্কা। ক্রিকেটের আইনকানুন প্রণয়ন করে যে সংস্থা, সেটির নাম মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব বা এমসিসি। এমসিসির সদর দপ্তর ওই লর্ডসে, এ ভেন্যুকে তাই ডাকা হয় ‘হোম অব ক্রিকেট’। তবে লর্ডস বা এমসিসি এক দিক দিয়ে ছিল কঠোর রক্ষণশীল।

সে ভেন্যুর মূল স্থাপত্যের নাম ওল্ড প্যাভিলিয়ন। ড্রেসিংরুম, ড্রেসিংরুমের নিচে ঐতিহ্যবাহী এক করিডর বা ‘লং রুম’ সে বিল্ডিংয়েই। তবে খেলা চলার সময় একমাত্র ব্রিটেনের রানি ছাড়া কোনো মেয়ে ওল্ড প্যাভিলিয়নে ঢুকতে পারতেন না। লর্ডসের মাঠেও খেলার সুযোগ ছিল না মেয়েদের।

১৯৭৩ সালের বিশ্বকাপ সাফল্য কাজে লাগিয়ে হেহো ফ্লিন্ট লেগে পড়লেন লর্ডসে মেয়েদের ক্রিকেট আয়োজনে। নাছোড়বান্দা হেহো ফ্লিন্টের জয় হলো, ১৯৭৬ সালে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মেয়েদের দলের বিপক্ষে খেলতে নামল ইংল্যান্ডের মেয়েদের দল। ইংল্যান্ডের অধিনায়কত্ব করলেন হেহো ফ্লিন্ট।

ছোটবেলায় রাস্তায় তাঁকে ‘ক্রিকেটার’ স্বীকৃতি দিতে আপত্তি জানিয়েছিলেন এক পুলিশ সদস্য। হেহো ফ্লিন্ট ‘ক্রিকেটার’ স্বীকৃতি আদায় করলেন ‘হোম অব ক্রিকেট’-এর কাছ থেকে।

১৯৯৩ সালে মেয়েদের বিশ্বকাপের ফাইনাল হয়েছিল সেই লর্ডসে। ২০১৭ সালে, বিশ্বকাপের সর্বশেষ আসরের ফাইনালও হয়েছিল সেখানেই। ভারতকে হারিয়ে সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইংল্যান্ড।

এ বছর লর্ডসের সবচেয়ে ‘ব্যবহৃত’ গেটটার আনুষ্ঠানিক নামকরণ করা হবে র‌্যাচেল হেহো ফ্লিন্টের নামে।

কেউ বলেন ৫০ হাজার, কেউ বলেন ৮০ হাজার। কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে সেদিন ঠিক কতজন দর্শক ছিলেন, নিশ্চিত করা যায়নি। মোটামুটি ৫০ থেকে ৬০ হাজার—এমন একটা সংখ্যার পক্ষে মতটা বেশি।

১৯৯৭ সালের মেয়েদের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের ফাইনালের সময় ইডেন কাঁপছিল, এটি অবশ্য নিশ্চিতই। বেলিন্ডা ক্লার্ক জীবনে কখনো এত দর্শকের সামনে খেলেননি। নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়ে সেবার চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপে সবচেয়ে সফল দলটির নাম অস্ট্রেলিয়াই। সব মিলিয়ে তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ছয়বার। এরপরই আছে ইংল্যান্ড, তারা শিরোপা জিতেছে চারবার।

তবে ১৯৯৭ সালের ওই টুর্নামেন্ট স্মরণীয় আরেকটি কারণেও। ১৬ ডিসেম্বর মুম্বাইয়ের বান্দ্রার মিডল ইনকাম গ্রুপ গ্রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ ছিল ডেনমার্কের বিপক্ষে। ক্লার্ক ওপেনিংয়ে নেমে ১৫৫ বল খেলে অপরাজিত ছিলেন ২২৯ রান করে।

টেস্ট ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি নিয়মিত ঘটনা, তবে ওয়ানডে ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি ছিল সেটিই প্রথম। ছেলেদের ওয়ানডে ক্রিকেট প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি দেখেছিল ২০১০ সালে। ক্লার্কের ওই ইনিংসের প্রায় ১৩ বছর পর এসে প্রথম ২০০ করেছিলেন ভারতের শচীন টেন্ডুলকার, গোয়ালিয়রে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।

মেয়েদের বিশ্বকাপে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটি ক্লার্কেরই। মেয়েদের ওয়ানডেতেও সে রেকর্ড টিকে ছিল প্রায় ২১ বছর। ২০১৮ সালে এসে ক্লার্কের রেকর্ড ভেঙে দেন নিউজিল্যান্ডের অ্যামেলিয়া কার। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ডাবলিনে করেন ১৪৫ বলে অপরাজিত ২৩২ রান। শুধু তা–ই নয়, সে ম্যাচে লেগ স্পিন বোলিংয়ে ১৭ রানে ৫ উইকেট নেন তিনি। এমন অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সের দিনে কারের বয়স ছিল মাত্র ১৭।

এবারের বিশ্বকাপেও খেলবেন অ্যামেলিয়া। আছেন দারুণ ফর্মেও। বিশ্বকাপের ঠিক আগে ভারতের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের সিরিজে অ্যামেলিয়া একাই করেছেন ৩৫৩ রান, সঙ্গে নিয়েছেন ৭ উইকেট।

শুধু অ্যামেলিয়া কেন, বিশ্বকাপে চোখ রাখতে হবে আরও অনেকের দিকেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্টেফানি টেইলর, ডিয়ান্ড্রা ডটিন বা আনিসা মোহাম্মদের সঙ্গে ইংল্যান্ডের হেদার নাইট, ন্যাট সিভার ও অভিজ্ঞ ক্যাথরিন ব্রান্ট, দক্ষিণ আফ্রিকার শবনিম ইসমাইল বা লরা ভলভার্ট, অ্যামেলিয়ার সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের সোফি ডিভাইন বা অ্যামেলিয়ার বড় বোন জেসিকা কার, পাকিস্তানের বিসমাহ মারুফ, নিদা দার, ভারতের মিতালি রাজ, হারমানপ্রিত কৌরের সঙ্গে শাফালি ভার্মারা ছড়াতে পারেন আলো। আর অস্ট্রেলিয়ার মেগ ল্যানিং, এলিস পেরি, অ্যালিসা হিলিরা তো আছেনই।

মাশরাফি বিন মুর্তজা বাচ্চাদের মতো করে নাচছেন। তামিম ইকবাল, মেহেদী হাসান মিরাজ, সৌম্য সরকার, মোস্তাফিজুর রহমানরাও তা–ই। যেন নিজেরাই কিছু একটা জিতে ফেলেছেন!

বাংলাদেশের ছেলেদের জাতীয় ক্রিকেট দলের ড্রেসিংরুম, ২০১৮ সালের ১০ জুন। একটু আগে সবার চোখ ছিল টিভি পর্দায়। শেষ বলে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ২ রান। স্ট্রাইকে জাহানারা, নন-স্ট্রাইকে সালমা।

ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রিত কৌরের বলটা ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মিড উইকেটে খেললেন জাহানারা। ২ রান পূর্ণ করতে শেষ পর্যন্ত ডাইভ দিলেন। বাংলাদেশ হয়ে গেল এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন, যেটি হয়েছিল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে।

যে ভারত আগের বছরই খেলে এসেছে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল, তাদেরই হারিয়ে দিল বাংলাদেশ। মাশরাফিরা নাচছিলেন সেটি দেখেই।

তখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ছেলেদের দল দুইয়ের বেশি দল খেলেছে, এমন সিরিজ জেতেনি। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও তখনো চ্যাম্পিয়ন হয়নি বাংলাদেশ। সে দিক থেকে এ দেশের ক্রিকেটের ‘সর্বোচ্চ’ সাফল্যটা এসেছিল মেয়েদের হাত ধরেই।

এবার বিশ্বকাপেও অমন কিছু হবে, সেটি ‘চাওয়া’ একটু বেশি হয়ে যায়। তবে হয়তো একদিন হবে অমন কিছু। যেদিন রুমানা বা তাঁর মতো কারও বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সে উল্লাসে মাতবেন কেউ।

হয়তো আনন্দের চোটে কেউ কেঁদেই দেবেন। রুমানা যেমন কেঁদেছিলেন, প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলার খবরটা নিশ্চিত হওয়ার পর।

(কিশোর আলোর মার্চ ২০২২ সংখ্যায় প্রকাশিত)