সাকিব আল হাসানকে নিয়ে তারকা ও গুণীজনদের ভাবনা

আমি, তুমি, সে, আপনি; আমরা সবাই তো সাকিবের ভক্ত। তাই না? মজার ব্যাপার হলো, সাকিবের এই ভক্ত-তালিকায় দেশ-বিদেশের অনেক নামজাদা তারকাও আছেন।
কীভাবে দেখেন তাঁরা সাকিবকে? এটা জানতে দেবব্রত মুখোপাধ্যায় মুখোমুখি হয়েছিলেন বিশ্বের সেরা সব তারকা এবং সাকিবের বন্ধু ও পরিবারের লোকজনের। এই দেশ-বিদেশের সাকিবভক্ত গুণীজনেরা কী বলছেন, তারই কিছুটা বরং আমরা দেখে ফেলি এখন। সাক্ষাৎকারগুলো নেওয়া হয়েছে অক্টোবর ২০১৩ থেকে মার্চ ২০১৪ সময়কালে

মানুষ হিসেবেও সাকিব অসাধারণ

জ্যাক ক্যালিস, দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি অলরাউন্ডার

আমি সাকিবের বিপক্ষে যেমন খেলেছি, কেকেআরে পক্ষে তার চেয়েও বেশি খেলেছি। আমি তাকে খুব কাছ থেকে চিনি বলতে পারি। সাকিবের বিপক্ষে আপনি যখনই খেলবেন, আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে, সে যেকোনো ভূমিকায় ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে। ব্যাটে ও বলে একই রকম কার্যকর ও অসাধারণ এক ক্রিকেটার!

আমার মনে আছে, ও দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে আমাদের বিপক্ষে পর পর দুই টেস্টে ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছিল। এটা বিরাট একটা ব্যাপার। বড় বড় স্পিনারও দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে এত সাফল্য পায় না; এখানকার উইকেট স্পিনারদের জন্য নয়।

আমার সৌভাগ্য যে কেকেআরে আমরা একসঙ্গে খেলেছি। আমি দেখেছি, ও ম্যাচ জেতাতে কী অসাধারণ পারফর্ম করতে পারে। যেমন খেলোয়াড় হিসেবে, তেমনি মানুষ হিসেবে ও আমাকে মুগ্ধ করেছে সব সময়।

সাকিবকে এখানে থামলে চলবে না

মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাবেক অধিনায়ক ও ফাস্ট বোলার, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল

সাকিব এখনই বাংলাদেশ ক্রিকেটের লিজেন্ড হয়ে গেছে। আর যদি একটা ম্যাচ নাও খেলে, তাও ওর নাম বাংলাদেশের ইতিহাসে লেখা থাকবে। কিন্তু এটা ওর লক্ষ্য হতে পারে না। আমি আশা করি, ও নিজেকে বিশ্বক্রিকেটের সর্বকালের সেরাদের তালিকায় তুলে নিয়ে যাবে। ধরেন, নামের পাশে ১০ হাজার ওয়ানডে রান, ৪০০ ওয়ানডে উইকেট। টেস্ট আমরা খুব খেলি না, ১০ হাজার রান হয়তো করা কঠিন। ওকে! ওর গড়টা টেস্টেও ৪৫-৫০ থাকবে। টেস্টেও ৩০০ উইকেট নেবে। এ রকম একটা পারফর্মার মানে সে সেরাদের একজন। এ রকম একটা ছেলের সঙ্গে ওয়াসিম আকরামও ভেবে কথা বলবে। ভেবে কথা বলা মানে কী...আমি কল্পনা করি, সাকিবের সঙ্গে পৃথিবীর আরেকটা গ্রেট যখন কথা বলছে; যেন দুজন গ্রেটের আলাপচারিতার মতো হয় সেটা। আমি ওকে সেই গ্রেট হিসেবে কল্পনা করি। ওকে নিয়ে যেন আরও গর্ব করতে পারি।

সাকিব জানে কীভাবে সেরা হতে হয়

মুশফিকুর রহিম, সাবেক অধিনায়ক, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল

আমি সাকিবের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে একই দলে খেলেছি বলেই নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। এটুকু বলতে পারি, সাকিব যে মাপের খেলোয়াড়, তাতে বাংলাদেশে না জন্মে অন্য কোনো টেস্টখেলুড়ে দেশে জন্মালে আরও অনেক বেশি মূল্যায়ন হতো তার। এক হচ্ছে, বাংলাদেশের হয়ে তার সর্বোচ্চ বিকাশ করা এখনো কঠিন। আর বাংলাদেশ দল হিসেবেই যেহেতু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অত মূল্যায়িত না, তাই একজন খেলোয়াড় হিসেবে সাকিবের প্রাপ্য মূল্যায়ন করা হয় না বলেই আমার মনে হয়।

ওর মতো প্রতিভা বাংলাদেশের ক্রিকেটে খুব কমই এসেছে। কিন্তু ওর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ওর প্রতিভা নয়, এই প্রতিভার কীভাবে কোন পরিস্থিতিতে সেরা ব্যবহার করতে হবে, কী করলে প্রতিভা অনুযায়ী পারফরম করা যাবে, এটা বাংলাদেশে সাকিবের চেয়ে ভালো কেউ জানে না। ও খেলাটাকে খুব সহজভাবে নেয়। অনেকেই এটা পারে না।

ভাইয়া সব সময় চ্যাম্পিয়ন

জান্নাতুল ফেরদৌস রিতু, সাকিবের ছোট বোন

ছোটবেলায় মনে হতো, কবে ছুটি হলে ভাইয়া বাড়ি ফিরবে। ও বাড়ি ফিরলে খুব মজা হতো। ভাইয়া বাড়িতে এলে একটা উৎসব লেগে থাকত। ও চুপচাপ থাকত। কিন্তু সবাই খুব মজা করত। আর আমার সুবিধা হতো, ওর সঙ্গে খুব লুডু খেলতাম। এখনো আমরা লুডু খেলি। ওর লাক দেখেন না? ও যে জায়গায় হাত দেয়, চ্যাম্পিয়ন। ভাইয়া লুডুতেও চ্যাম্পিয়ন। হা হা হা...। আমরা এখনো বাসায় খুব মজা করি। এখন তো একসঙ্গে থাকা হয় অনেক। আমার খালাতো ভাই আছে, ভাইয়া আছে। আর আমি। আমরা সময় পেলেই লুডু খেলি। গল্প করি।

মানুষ হিসেবে ভাইয়া এক কথায় অসাধারণ! আমার ভাই বলে বলছি না, ভাইয়ার মতো ভালো মানুষ আপনি খুব একটা পাবেন না। ভাই হিসেবে বলেন, পরিবারের ছেলে হিসেবে বলেন, এত দায়িত্বশীল, এত ভালো মনের একটা মানুষ আপনি কল্পনাই করতে পারবেন না। আমি মনে করি, আমার ভাইয়া সেরা ভাইয়া।

সাকিবের মূল্যবোধ অনেক উঁচু

সঞ্জয় মাঞ্জরেকার, সাবেক ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটার ও ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ

সাকিব সম্পর্কে আমার প্রথম ধারণাটাই ছিল, এই ছেলে বিশ্বের যেকোনো প্রথম সারির টেস্ট দলে জায়গা করে নিতে পারে। আমার কাছে মনে হয়, সাকিব অনেক উঁচু মূল্যবোধসম্পন্ন একজন খেলোয়াড়। সাকিবের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, দল যখনই চাপে পড়ে যায়, তখনই সে কিছু না কিছু ভূমিকা রাখার চেষ্টা করে; এ সময়ই সম্ভবত তার সেরাটা বেরিয়ে আসে। সাকিবের বোলিংটা খুব বিচিত্র। ওর বোলিং অ্যাকশনটাকে আমি একটু ভুতুড়েই বলি। তার পরও দেখেন, সেটা দিয়েই দারুণ কার্যকর কিন্তু সে! ব্যাটসম্যান সাকিবকে আমার বরং অনেক ত্রুটিমুক্ত অ্যাকশনের মনে হয়। অবশ্যই সে বিশ্বসেরাদের একজন। তবে একটা ব্যাপার, অন্য সব বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারদের চেয়ে প্রকৃতিপ্রদত্ত ব্যাপারটা সম্ভবত ওর মধ্যে একটু কম।

এই ছেলেটা তৃপ্ত হয় না

নিয়াজ মোরশেদ, দাবাড়ু, বাংলাদেশের প্রথম গ্র্যান্ড মাস্টার

একটা কথা আমি প্রায়ই বলি, প্রতিভা বা সমর্থন, শুধু এসব থাকলেই যে বিশ্বসেরা হওয়া যায়, তা নয়। সে জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার ধরাবাহিকতা ও নিজের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট না হওয়া। এর অর্থটা হচ্ছে যে অল্প সাফল্য পেয়ে খুশি হয়ে গেলাম বা থেমে পেলাম, এই জিনিসটা তার মধ্যে নেই। তার মধ্যে একটা প্রবল ভালো করার ক্ষুধা আছে। অনেক সময় দেখি, দলের সবাই খারাপ করছে, সে একা কন্ট্রিবিউট করে যাচ্ছে। সাকিব কিন্তু হাফসেঞ্চুরি পেয়ে যাচ্ছে, ২-৩টি করে উইকেট পাচ্ছে। এটা অন্য রকম একটা ব্যাপার। ভালো করার ইচ্ছা মনের ভেতর থেকে না থাকলে এটা হয় না। এ জিনিসটা এক্সট্রা অর্ডিনারি মনে হয় তার মধ্যে। অনেক ক্রীড়াবিদ এই চাকচিক্যময় জীবনের মধ্যে আটকা পড়ে যায়। সহজে তৃপ্ত হয়ে যায়। ভাবে, বাকিরা পারছে না, আমার দরকার কী। এই খেলোয়াড়ের মধ্যে সেটা নেই। এ জন্য ও আজকে এত দূর এসেছে।

আমাদের নতুন যুগে নিয়ে যাচ্ছে সাকিব

মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, সাকিবের মেন্টর ও কোচ

সাকিবকে আমি শুধু ওর পারফরম্যান্স দিয়ে বিচার করি না, ওর কারণে আমাদের পরবর্তী জেনারেশন কিন্তু একটা স্বপ্ন দেখতে পারছে—বাংলাদেশ টিমের যদি একজন পারে, তাহলে আমি কেন পারব না? এটাতে আমাদের আসলে পুরো প্রজন্মের মানসিকতা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। এই পথটা দেখিয়েছে সাকিব। আগে যারা খেলেছে, সবাই ভাবত ইমরান খান হব, ওয়াসিম আকরাম, গাভাস্কার হব; কিন্তু এখন আমাদের একটা নিজেদের রোল মডেল তৈরি হয়েছে। ছাত্র হিসেবে সাকিবের একটা বাড়তি গুণ হলো, অন্য যেকোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে আপনি সাকিবকে একটা ব্যাপার দ্রুত বোঝাতে পারবেন। একটা জিনিস যদি একবার বলেন, তাহলে দ্বিতীয়বার তাকে আর বলতে হবে না। ও যে খুব বেশি পরিশ্রমী, এটা আমি বলব না। আমি চাই, ও যখন ক্রিকেট ছাড়বে, তখন যেন বাংলাদেশের ক্রিকেট বিশ্বের প্রথম দু-একটি দলের মধ্যে থাকে।

সাকিব ভাই আমাদের আদর্শ

সালমা খাতুন, সাবেক অধিনায়ক, জাতীয় প্রমীলা ক্রিকেট দল

সে হচ্ছে আমাদের এই সময়ের আদর্শ একজন খেলোয়াড়। ব্যাটে-বলে প্রায় প্রতিটি ম্যাচে সে ডমিনেট করে। সাকিব ভাই কেমন খেলোয়াড়, এটা বোঝার জন্য শুধু পরিসংখ্যান দেখাই যথেষ্ঠ। আমি শুধু একজন ক্রিকেটার হিসেবে নয়, দেশের একজন মানুষ হিসেবেও সাকিব ভাইয়ের খেলা খুব পছন্দ করি।

আমাদের দেশে কিন্তু কোনো খেলাতেই আর এ রকম বিশ্বসেরাদের কাউকে আপনি পাবেন না। সেখানে ক্রিকেটে আমাদের চোখের সামনে ছেলেদের দলে যখন বিশ্বসেরা একজন খেলোয়াড় থাকে, সেটা অনেক বড় একটা অনুপ্রেরণার ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। শুধু আমার জন্য নয়, আমার ধারণা, আমাদের সবার জন্যই সাকিব ভাইয়ের এই সাফল্য অনেক বড় উৎসাহের কারণ। সাকিব ভাইকে দেখে একটা সাহস তো তৈরি হয়ই। মনে হয়, আমাদের দেশের একজন, সাকিব ভাই যদি সেরা হতে পারে, আমরাও পারতে পারি।

আমার আর কিছু চাওয়ার নেই

গোর্কি, সাকিবকে খুঁজে বের করা কোচ

ওর বাড়ির পাশে ছোট্ট একটা মাঠ ছিল। সেই মাঠে ওরা নিজেরা ক্রিকেট খেলছিল। একদিন আমি প্র্যাকটিস শেষে রিকশা দিয়ে ওদের বাসার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমার চোখে লাগে যে ছেলেটা তো অনেক সুন্দর খেলে। ছোটবেলায় আমার মনে হয়েছিল ও খুব লম্বা হবে না। তাই ওকে বললাম, বামহাতি পেস বল না করে স্পিন বল করলে ভালো হয়। পরে একটা ম্যাচে স্পিন করল। ওই ম্যাচে স্পিন বল করে ও ৩টি উইকেট নেয়। এর পর থেকে সব সময় ওকে স্পিন বল করাই। লোকে যখন মনে করে, আমি সাকিবের কোচ ছিলাম, মনে হয় আর কিছু চাই না। মনে হয়, আমার জীবনে আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমি শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবেই নিজেকে মনে করি, যখন সাকিবকে নিয়ে মানুষ মাতামাতি করে। এটা আমার খুব আনন্দের।

বাংলাদেশের সেরা সম্পদ

সাকলায়েন মুশতাক, পাকিস্তানের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ও সাকিবের কোচ

আমার কোচিং-জীবনে আমি সাকিবের মতো প্রতিভাধর ছেলে খুব কম দেখেছি। যেমন স্কিলফুল খেলোয়াড়, তেমনই ব্যাটিং ও বোলিংয়ে শৃঙ্খলাপরায়ণ। ব্যাটিং, বোলিং তো আছেই, সে কিন্তু অসাধারণ ফিল্ডারও বটে। মানুষ হিসেবে সে আমার খুবই পছন্দের।

আমি এক বাক্যে বলি, সাকিব বাংলাদেশে জন্মানো সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার। ওর পারফরম্যান্সই এই কথা বলে। আমি এটাও মনে করি, ও পর্যাপ্ত খেলার সুযোগ পেলে ক্যালিসদের মতো রেকর্ড নিয়ে অবসরে যেত। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সাকিব খুব একটা টেস্ট খেলার সুযোগ পায় না। বাংলাদেশ বছরে ২-৩টা টেস্ট খেলে। এই স্বল্প টেস্ট খেলে নিজের সেরাটা দেখানো খুব কঠিন।

সাকিব সম্পর্কে সবার শ্রদ্ধা আছে

আতাহার আলী খান, জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার, নির্বাচক ও ধারাভাষ্যকার

২০০৪ বা ২০০৫ সালে আমরা একটা অনূর্ধ্ব-১৭ দল নিয়ে মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলাম। আমি ওই টিমের ম্যানেজার হিসেবে ছিলাম। ওখানেই প্রথম সাকিবকে সেভাবে দেখি আমরা। আগেও দেখেছি, তবে এভাবে চোখে লাগেনি। একটা ম্যাচে ও সেঞ্চুরি করেছিল। অসাধারণ একটা ইনিংস; মানে ওই রকম ইনিংস কিন্তু আসলে খুব একটা দেখিনি। অত কম বয়সে ও রকম খেলা, আমার চোখে এখনো ভাসছে। সাকিবকে আমি সব সময়ই খুব বড় বলে মূল্যায়ন করি। আমি নানা ভূমিকায় তাকে সেই শুরু থেকে দেখছি। আমরা খুব ভাগ্যবান, এ রকম একজন খেলোয়াড় পেয়েছি।

যাদের সঙ্গে আমি ধারাভাষ্যর কাজ করি, তারাও কিন্তু ওকে শ্রদ্ধা করে এবং বলে, আসলে বাংলাদেশ টিমে যদি এ রকম আর দু-একটা খেলোয়াড় থাকত, তাহলে ভবিষ্যতে কিন্তু যেকোনো দলকে যেকোনো মুহূর্তে হারিয়ে দিতে পারে। সাকিবের উপস্থিতি দলের জন্য যেমন, আমরা যারা খেলা দেখি এবং খেলা নিয়ে কথা বলি, আমাদের জন্যও গর্বের। ওকে নিয়ে আমরা বুক ফুলিয়ে কথা বলতে পারি।

সত্যিকারের একজন ম্যাচ উইনার

ওয়াসিম আকরাম, পাকিস্তানের কিংবদন্তি পেস বোলার, কেকেআরে সাকিবের কোচ

আমি বাংলাদেশের বিপক্ষে অনেক খেলেছি, ওখানে গিয়েও খেলেছি। ধারাভাষ্যকার হিসেবে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কাছ থেকেই দেখি। বাংলাদেশে ভালো খেলোয়াড় আগেও এসেছেন অনেকে। আকরাম খান ছিলেন, আমিনুলের মতো ব্যাটসম্যান ছিলেন।

মোহাম্মদ রফিক একজন গ্রেট বোলার ছিলেন। কিন্তু আমার মতে সাকিব আল হাসান বেশ এগিয়ে থাকবে বাকিদের চেয়ে। সম্ভবত বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার সে। একজন অলরাউন্ডার হিসেবে তার পরিসংখ্যানই তাকে চেনার জন্য যথেষ্ঠ। তবে আমি তাকে দেখি একজন গেম-চেঞ্জার হিসেবে। সে হলো খাঁটি ম্যাচ উইনার। নিঃসন্দেহে এখন বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার। টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডেতে তার প্রভাব অসামান্য। আমি তার কোচ হিসেবে, সঙ্গী হিসেবে বলতে পারি, একটা অসাধারণ ভালো ছেলে। সে সব সময় দলের সেরাটা নিয়ে ভাবে বলে মনে হয়েছে। আর ছাত্র হিসেবে খুব মনোযোগী। একবারই কোনো কথা তাকে বলা যথেষ্ঠ।

সাকিবকে সবাই পেতে চাইবে

শিল্ড বেরি, সাবেক সম্পাদক, উইজডেন

আমার মনে হয়, সাকিব এমন একজন টেস্ট-ক্লাস অলরাউন্ডার, যার মতো একজন অলরাউন্ডারকে বিশ্বের যেকোনো দেশ তাদের দলে পেতে চাইবে। আমি সাকিবকে সামান্য হলেও ব্যাটসম্যানের চেয়ে বোলার হিসেবে এগিয়ে রাখব। বাংলাদেশের বাইরে বা অন্য কোনো দলে সে হয়তো একজন টেস্ট মানের বাহাতি স্পিনার হিসেবেই মূল গুরুত্বটা পাবে। একজন স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে তাকে চিহ্নিত করা হবে না। এর কারণ হলো, সে টেস্টে এখনো যথেষ্ট সংখ্যায় সেঞ্চুরি করতে পারেনি। এটা কিন্তু একটা ব্যাপার। তাকে এই সমসাময়িক টেস্ট মানের অলরাউন্ডারের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বমানের অলরাউন্ডার হয়ে উঠতে গেলে এই বাধা পার হতে হবে; অনেক টেস্ট সেঞ্চুরি করতে হবে। সর্বকালের সেরাদের তালিকায় সে যাবে কি না, সেটা সময় বলবে। তবে আমি অলরাউন্ডার হিসেবে সাকিবের সঙ্গে এমন একজন গ্রেটের তুলনা করতে চাই, যাকে আমি নিজে কখনো দেখিনি—ভারতের ভিনু মানকড়। আমি যত দূর জানতে পেরেছি, বুঝতে পেরেছি, সাকিব মানকড়ের চেয়ে একটু বেশি জোরের সঙ্গে বল করে। তবে তাদের মধ্যে মিলটা হলো, বিস্ময়কর লম্বা স্পেলে নিখুঁত বাহাতি স্পিন করে যেতে পারা। মানকড় ও সাকিব দুজনকেই দলের আক্রমণের নেতৃত্ব দিতে হয়েছে, চাপ নিতে হয়েছে এবং সর্বোপরি দুজনকেই দলের জন্য রান করতে হয়েছে।

(কিশোর আলোর আগস্ট ২০১৪ সংখ্যায় প্রকাশিত)