শত নিয়ে কত কথা

‘শতক’ শব্দটা শুনলেই প্রথম মনে পড়ে শচীন টেন্ডুলকারের কথা। শতক করাটাকে অনন্য এক শিল্পে পরিণত করেছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শতকের শতক পূরণ করা শচীন শতক নিয়ে প্রতিটি লেখার মূল উপজীব্য। কয়েক বছর আগেও মুড়িমুড়কির মতো শতক করছিলেন বিরাট কোহলি। অথচ তিন বছর ধরে অধরা শতকের অপেক্ষায় কুরে কুরে মরছেন তিনি। কিশোর আলোর শততম সংখ্যা উপলক্ষে আজকের লেখা ক্রিকেটের শতক নিয়ে।

ক্রিকেটের সূচনা থেকে বোলারদের জন্য অর্জন ছিল উইকেট। কিন্তু পিচের অপর পাশে থাকা ব্যাটসম্যানদের জন্য? প্রতিটি রানকে তো আর অর্জন হিসেবে ধরা যায় না। তাই তাঁদের জন্য অর্জন ঠিক করা ১০০ রান। ব্যাট হাতে ১০০ পার করতে পারলেই সেটা অনন্য এক সম্মানের ব্যাপার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম দিনই এ অনন্য সম্মান অর্জন করে নেন অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ব্যানারম্যান। প্রথম টেস্টের প্রথম দিনেই শতক তুলে নেন ব্যানারম্যান। ক্রিকেটের শুরুর দিন থেকেই শুরু হয় শতক–কাব্য।

ওয়ানডে ক্রিকেটে অবশ্য শতকের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে পাক্কা দেড় বছর। হিসেবে অবশ্য সেটা ছিল দ্বিতীয় ওডিআই! ২২২ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো শতকের দেখা পান ইংলিশ ব্যাটসম্যান ডেনিস অ্যামিস। আর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসের প্রথম শতক তো ইউনিভার্স বসের নামেই বরাদ্দ। ২০০৭ টি–২০ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই শতক হাঁকান ক্রিস গেইল।

ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে দ্রুততম শতকের রেকর্ড ধরে রেখেছেন এই দশকের তিন সেরা হার্ডহিটার। ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান এখন ইউনিভার্স বস ক্রিস গেইল। ২০১৩ আইপিএলে পুনে ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে ৩০ বলে শতকের রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। আর ওয়ানডে ক্রিকেটে সে রেকর্ড দখল করে রেখেছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। ২০১৫ সালে ‘পিংক ডে’তে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩১ বলে শত রান ছুঁয়ে কোরি অ্যান্ডারসনের কাছ থেকে রেকর্ডটা নিজের করে নেন ‘মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রি’। টেস্টে সে রেকর্ড দখল করে আছেন আরেক হার্ডহিটার ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫৪ বলে শতকের রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি।

টেস্টে ধীরগতির শতকের মালিক বনে আছেন অবশ্য পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান মুদাসসের নজর। ১৯৮৭ সালে লাহোরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ৯ ঘণ্টা ১৭ মিনিট ক্রিজে দাঁড়িয়ে থেকে শতক ছুঁয়েছিলেন তিনি। ওয়ানডে ক্রিকেটে একই ধরনের রেকর্ডের মালিক ডেভিড বুন। ১৯৯১ সালে ভারতের বিপক্ষে ১৬৬ বলে শতক হাঁকান এই অজি ব্যাটসম্যান। সেদিন ১৪৮ রানের টার্গেট ছুঁতে ৪৮ ওভার লাগিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। দিন শেষে রেকর্ডের খাতায় নিজের নামটা ঠিকই পাকাপোক্ত করেছেন তিনি।

এতক্ষণ লেখায় বাংলাদেশের নাম খুঁজে বেড়াচ্ছিলে যারা, তাদের জন্য সুসংবাদ। ক্রিকেটের এত বছরের ইতিহাসে রেকর্ডের অভাব নেই, কিন্তু শতকের রেকর্ডে মাত্র একটা জায়গাতেই নিজেদের নাম অনন্য করতে পেরেছে বাংলাদেশ। টেস্টে সবচেয়ে কম বয়সে শতক! ২০০১ সালে কলম্বোতে মাত্র ১৭ বছর ৬১ দিন বয়সে শতক হাঁকিয়েছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। ২১ বছর পরে এসেও সে রেকর্ড এখনো জলজ্যান্ত। এত কম বয়সে শতরান পার করতে পারেনি কেউ।

অন্যদিকে ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান শহীদ আফ্রিদি। ১৯৯৬ সালে নাইরোবিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে করা শতকের দিন কাগজে–কলমে তাঁর বয়স ছিল ১৬ বছর ২১৭ দিন। সে শতকও তিনি করেছিলেন স্বয়ং শচীন টেন্ডুলকারের ব্যাট দিয়ে। কিন্তু নিজের বয়স নিয়ে নিজেই অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন আফ্রিদি। নিজের আত্মজীবনীতেই তিনি লিখেছিলেন, সেই সময় তাঁর বয়স ছিল ১৮ বছরের ওপরে। সেটিকে সত্য ধরলে বয়সের হিসাবে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান আফগানিস্তানের উসমান ঘানি। ১৭ বছর ২৪২ দিন বয়সে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শতক হাঁকিয়েছিলেন তিনি।

তবে সবচেয়ে বেশি বয়সে সেঞ্চুরির রেকর্ডটা নিজের করে রেখেছেন স্যার জ্যাক হবস। টেস্টে ৪৬ বছর ৪২ দিন বয়সে শতক করেন, তা–ও আবার অ্যাশেজে। আর ওয়ানডেতে রেকর্ডটা নিজের করে রেখেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের খুররাম খান। ৪৩ বছর ১৬২ দিন বয়সে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শতক হাঁকান তিনি।

এতক্ষণ তো ব্যাটসম্যানদের কথা। বোলারদের ব্যাপারেও কিছু কথা বলা যাক। রেকর্ডগুলো অবশ্য বোলারদের জন্য বেশ লজ্জার। টেস্টে এক ইনিংসে শতরান দেওয়া খুব একটা বড় ব্যাপার নয়, কিন্তু ওয়ানডেতে? ১০ ওভারে ১০–এর ওপরে রানরেট রাখা নিশ্চয় খুব একটা আনন্দের ব্যাপার নয়। ওয়ানডেতে এ রেকর্ডের মালিক মোট ১৩ জন!

১০‍ ওভারে সর্বোচ্চ রান দেওয়ার রেকর্ড অস্ট্রেলিয়ান বোলার মিক লুইসের। ওয়ানডে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রানের ম্যাচের কথা সেটা। প্রথমে ব্যাটিং করে অস্ট্রেলিয়া করেছিল ৪৩৪ রান। সেই রান দ্বিতীয় ইনিংসে ১ বল হাতে রেখেই টপকে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। আর সেদিন অস্ট্রেলিয়ার বলির পাঁঠা হয়েছিলেন মিক লুইস। ১০ ওভারে ১৩ চার আর ৪ ছক্কা হজম করে ১১৩ রান দিয়েছিলেন তিনি। সেই ম্যাচের পর অজি দলে ঢোকার রাস্তা পাকাপাকিভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাঁর। তবে সেদিনের সে রেকর্ড এখনো অক্ষুণ্ন।