স্পেনের খেলনাবৃষ্টি

ক্রিকেট, ফুটবল, টেনিস—যে খেলাই হোক, স্টেডিয়ামের দর্শকেরা মাঠের মধ্যে কোনো কিছু ছুড়ে দিচ্ছে, এমন দৃশ্য প্রায়ই দেখা যায়। ইউরোপের মতো প্রথম সারির ফুটবল খেলুড়ে দেশগুলোতেও এ ঘটনা ঘটে নিয়মিতই। এগুলোর পেছনে সাধারণত দর্শকদের রাগ-ক্ষোভই থাকে বেশি। এই যেমন ফ্রান্সে এবারের মৌসুমে দর্শকেরা বেশ কয়েকটি ম্যাচে খ্যাপাটে আচরণ করেছেন। মাঠের মধ্যে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা, স্ট্যান্ড থেকে বোতল ছুড়ে মারা, এমনকি ছোট মিসাইলের মতো অস্ত্রও ছুড়ে মেরেছেন তাঁরা। কয়েক দিন আগেই ফ্রেঞ্চ ফুটবল তারকা দিমিত্রি পায়েতের মাথায় পানিভর্তি বোতল ছুড়ে মারায় একটি ম্যাচ বন্ধ করে দিতে হয়েছে ফ্রেঞ্চ ফুটবল ফেডারেশনকে।

ফ্রান্সের দর্শকদের এমন আচরণের সম্পূর্ণ উল্টোটি দেখা গেল স্পেনে। ১২ ডিসেম্বর লা লিগার ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল বেতিস ও রিয়াল সোসিয়েদাদ। প্রথমার্ধের শেষে গ্যালারি থেকে মাঠের মধ্যে বৃষ্টির মতো উড়ে আসতে লাগল ছোট ছোট খেলনা। রিয়াল বেতিসের মাঠে খেলা দেখতে আসা হাজারো দর্শক খেলনা ছুড়ে মারছেন।

কোনোটা টেডি বিয়ার, মিকি মাউস আবার কোনোটা কাপড়ের তৈরি পুতুল! হরেক রকম খেলনাবৃষ্টিতে মাঠ টইটম্বুর হয়ে উঠল কিছুক্ষণের মধ্যেই! সংখ্যার হিসাবে প্রায় ১৯ হাজার খেলনা সংগ্রহ করেছেন মাঠকর্মীরা।

একটু ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে জানা গেল, রিয়াল বেতিসের সমর্থকদের জন্য এটি বেশ পুরোনো এক ঐতিহ্য! ১৯৩৫ সাল থেকে প্রায় প্রতিবছরই ক্রিসমাসের আগে স্টেডিয়ামে খেলনা নিয়ে আসেন তাঁরা। তারপর ম্যাচের প্রথমার্ধ শেষে সবাই ঠিক একসঙ্গে এভাবেই সেগুলো মাঠের দিকে নিক্ষেপ করতে থাকেন।

এ ক্ষেত্রে খেলনা আনার কিছু নিয়ম আছে। সেগুলোকে অবশ্যই স্টাফড বা কাপড়জাতীয় উপাদানে তৈরি হতে হবে, ভেতরে কোনো ধরনের ব্যাটারি থাকা যাবে না এবং ৩৫ সেন্টিমিটারের বেশি বড় হওয়া যাবে না।

মূলত সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা যেন ক্রিসমাসের উপহার থেকে বঞ্চিত না হয়, ক্রিসমাসের মতো বড় উৎসবের আনন্দ যেন সবার কাছে পৌঁছে যায়, তাই এমন অভিনব পথ বেছে নিয়েছেন রিয়াল বেতিসের সমর্থকেরা। প্রতিবছরই এভাবে মাঠ থেকে খেলনা সংগ্রহ করে পৌঁছে দেওয়া হয় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কাছে। ফুটবল সুন্দর, সেই সৌন্দর্য কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে এমন মহৎ উদ্যোগ অলংকারের মতো কাজ করে।

তাই তো স্টেডিয়ামে খেলনাবৃষ্টির সময় যখন স্টেডিয়ামে ‘জিঙ্গেল বেল’ গানটি বাজতে থাকে, তখন এটাকে সিনেমার সুন্দরতম কোনো এক দৃশ্য বলে ভুল হয়।