'ছোট' নাঈমের বড় কীর্তি

নাঈম হাসান। ছবি: শামসুল হক
নাঈম হাসান। ছবি: শামসুল হক

দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে বয়সে তিনিই সবচেয়ে ছোট। বয়সে ছোট হলেও বড় এক রেকর্ড গড়েছেন। নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে নাঈমের এই কীর্তি এরই মধ্যে জেনেছ। টেস্ট অভিষেকে সবচেয়ে কম বয়সে ৫ উইকেট পেয়েছেন। বিশ্ব রেকর্ড গড়া নাঈমের উঠে আসার গল্পটাও এবার শোনো।

নাঈম যেন আরেক মোস্তাফিজুর রহমান! মাঠে যতটা সপ্রতিভ, সংবাদমাধ্যমের সামনে ঠিক উল্টো। টেস্ট অভিষেকে দুর্দান্ত বোলিং করে হইচই ফেলে দিয়েছেন। এ আনন্দক্ষণে কত কিছু বলার থাকে। অথচ সংবাদমাধ্যমের সামনে একেবারে জড়সড়। মিডিয়ার সামনে গুটিয়ে থাকলেও এই নাঈমই মাঠে একেবারে অন্য রকম। প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছেন, কোনো স্নায়ুচাপ নেই। নেই কোনো জড়তা। স্বচ্ছন্দে করে গেছেন নিজের কাজটা। গড়েছেন কীর্তি। যেনতেন কীর্তি নয়, টেস্টে প্রথম বোলিং করতে এসেই নাম তুলে ফেলেছেন রেকর্ড বইয়ে।

অভিষেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের তাক লাগিয়ে দেওয়া আর নতুন কী! তবে নাঈমের রেকর্ডের তাৎপর্য অন্য রকম, সেটি তাঁর বয়সের কারণেই। ১৭ বছর ৩৫৫ দিনে অভিষিক্ত এই অফ স্পিনার টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো বল হাতে নিয়েই পেয়েছেন ৫ উইকেট। বাংলাদেশের তো বটেই, টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে কম বয়সে অভিষেক ৫ উইকেট পাওয়া বোলারও তিনি। টেস্ট ইতিহাসে এর চেয়ে কম বয়সে ৫ উইকেট পেয়েছেনই মাত্র দুজন। ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ উইকেট পাওয়ার সময় মোহাম্মদ আমিরের বয়স ছিল ১৭ বছর ২৫৭ দিন। আর রেকর্ডটাও আরেক পাকিস্তানির দখলে, নাসিম-উল-গনি। ১৯৫৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫ উইকেট পাওয়ার সময় বাঁ হাতি স্পিনারের বয়স ছিল ১৬ বছর ৩০৩ দিন!

নাঈমের বাড়ি চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার ফরিদারপাড়ায়। বাবা মাহবুবুল আলম ছিলেন পেশাদার ফুটবলার। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত রাইজিং স্টারের হয়ে প্রথম বিভাগ লিগে খেলেছেন। তিনি একজন ক্রীড়া সংগঠকও। তাঁর তিন ছেলেকেই চেয়েছেন খেলোয়াড় বানাতে। বাবার স্বপ্নপূরণে সবচেয়ে এগিয়ে এসেছেন মেজ ছেলে নাঈম। পরিবার থেকে এমন সমর্থন পেলে স্বপ্নের কুঁড়িটা ডালপালা মেলবেই। বাবার হাত ধরেই মাত্র পাঁচ বছর বয়সে চট্টগ্রাম ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবে যাওয়া শুরু নাঈমের। ১২ বছর পর বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের সীমানা পেরোনোর আগেই নাঈম সুযোগ পেয়ে গেলেন জাতীয় দলে। নাঈম অবশ্য দুই বছর ধরেই আছেন নির্বাচকদের রাডারে। গত ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট স্কোয়াডে চলে আসেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলা চলার সময়ই। আর এবার তো সুযোগই পেয়ে গেলেন।
সুযোগ পেয়েই কী করলেন, তা তো দেখলেই। প্রথম ইনিংসে নয়ে নেমে ভয়ডরহীন ব্যাটিং করেছেন। বোলিংয়ে তো আরও দুর্দান্ত। ৬ ফুট উচ্চতা নিয়ে অফ স্পিন করেন। ক্যারিয়ারের শুরুতে অবশ্য পেসার ছিলেন। তখন খুব একটা লম্বাও ছিলেন না, শরীরটাও তেমন শক্তপোক্ত নয়। শুরুর দিকের গুরু মুমিনুল হকের পরামর্শ মেনে তাই বনে যান স্পিনার। সেই স্পিনেই গড়লেন বিশ্ব রেকর্ড। অসাধারণ এই অর্জনে তাঁর প্রতিক্রিয়া খুবই সংক্ষিপ্ত, ‘আমি আমার স্বাভাবিক ক্রিকেটই খেলেছি। আমার কোনো লক্ষ্য ছিল না যে ৫ উইকেট, ১০ উইকেট নিতে হবে। আমি চেষ্টা করেছি প্রক্রিয়াটা ধরে রাখতে।’

কীর্তিতে উজ্জ্বল কিন্তু কথায় কম, নাঈম যেন ‘কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হওয়ায়’ বিশ্বাসী!