ভূতের ওপর বাটপারি

অলংকরণ: আপন জোয়ার্দার

মাঝরাতে রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। মাথায় রাজ্যের চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। গতবার পিকনিকের নাম করে যেই টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলাম, তা এ বছর সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, এ বছর পিকনিকের সম্পূর্ণ দায়িত্ব কলেজ কর্তৃপক্ষ নিয়েছে। বাধ্য হয়েই সবাইকে চাঁদা জমা দিতে হবে। কিন্তু ফুটবল টুর্নামেন্টে সব টাকা আগেই শেষ হয়ে গেছে। তাই নতুন করে ম্যানেজ দেওয়ার মতো কিছুই নেই। কাল সকালে কী করব, তাই ভাবতে ভাবতে নদীতীরে এসে বসলাম। ঠান্ডা হাওয়ায় বেশ ভালোই লাগছিল। হঠাৎ কোথা থেকে যেন একটি ছেলে উদয় হয়ে আমার পাশে বসে পড়ল। গা থেকে বিশ্রী গন্ধ বের হচ্ছিল। সহ্য করতে না পেরে একটু দূরে গিয়ে বসলাম। দেখি, ওই ছেলেটাও সঙ্গে সঙ্গে আমার পাশে এসে বসল। বিরক্তি প্রকাশ না করে ভাবলাম, ভদ্রতার সঙ্গে কথা বলা যাক। প্রথমে নাম জিজ্ঞেস করলাম। ছেলেটা কথার উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল, ‘তুমি ভূতে বিশ্বাস করো?’ এ আবার কেমন প্রশ্ন! ঘাবড়ে গিয়ে উত্তর দিলাম ‘না। আমি জীবনে ভূত দেখিনি, ভূত বলে কিছু বিশ্বাস করি না।’ ছেলেটা আবার প্রশ্ন করল, ‘কীভাবে বুঝলে ভূত দেখোনি? ভূত আর মানুষের মধে৵ কোনো পার্থক্য আছে নাকি?’ আমি বললাম, ‘আছে, শুনেছি ভূতদের পা নাকি পেছনের দিকে উল্টো করা থাকে।’ কথাটা শুনেই ছেলেটা ওর পা দুটো আমাকে দেখাল। দেখলাম, ওর পা দুটো অবিশ্বাস্য রকম উল্টো! এ অবস্থা দেখে আমার ভয় পেয়ে দৌড় দেওয়া উচিত। কিন্তু আমি হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম। আমার অবাক হওয়ার জায়গায় ছেলেটি অবাক হলো। ও বলল, ‘এই প্রথম কাউকে দেখলাম যে ভূত দেখে ভয় পায়নি। আজ থেকে আমি তোমার ভক্ত হয়ে গেলাম, তোমাকে খুশি করা আমার দায়িত্ব।’ আমি ভাবলাম, সুযোগটা মিস করা ঠিক হবে না। তাই ওর কাছে কিছু টাকাপয়সা, সোনা, মণিমুক্তা চেয়ে বসলাম, যেমনটা সবাই চায় আরকি। কিন্তু ভূতটা বলল, সে এসব আনতে পারবে না। কারণ, এসব কিছু রূপকথাতেই সম্ভব, বাস্তবে নয়। হঠাৎ আমার মনে একটুকরা আশা জমছিল, যা গুড়ে বালি হলো। মেজাজটাই বিগড়ে গেল। ‘ভূত হয়ে যদি এসব করতেই না পারিস, তাহলে ভূত হয়ে কী লাভ?’ বলেই ভূতটাকে একটা চড় মেরে বসলাম। সঙ্গে সঙ্গেই দেখি অবাক কাণ্ড। ভূতটা বানরের মতো রূপ ধারণ করল। ভূতটা জানাল, ওকে চড় মারলেই নাকি ওর রূপ বদল হয়। তবে চড় মারার আগে যেই জিনিসের কথা চিন্তা করবে, ও সেই রূপ ধারণ করবে। কথাটা শুনেই আমার মাথায় একটা আইডিয়া ৬০ ওয়াটের বাল্বের মতো জ্বলে উঠল। জিজ্ঞেস করলাম, তুমি আমার জন্য সবকিছু করতে পারবে? ভূতটা বলল, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই আমি আপনাকে গুরু বলে মেনেছি। আপনি যা বলবেন, আমি তা–ই করতে বাধ্য।’ আমি বললাম, ‘তাহলে আবার মুখটা বাড়াও।’ ও মুখটা আমার দিকে এগিয়ে দিতেই আমি আবার ঠাস করে ওর মুখে চড় বসালাম। সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটা বিরাট সাইজের একটা ইলিশ মাছের রূপ নিল। মাছটাকে বেঁধে পরদিন সকালে বাজারে গিয়ে দুই হাজার টাকায় বেচে দিলাম। ওই টাকায় পিকনিকের চাঁদা দিব্যি ম্যানেজ হয়ে যাবে। টাকাটা বাঁ পকেটে ঢোকাতে ঢোকাতে ভাবলাম, ভূতের ওপর বাটপারিটা বেশ ভালোই রপ্ত করেছি!