৮২ নম্বর সভার টুকরো গল্প

গান, আড্ডা, গল্প—কী ছিল না ফেব্রুয়ারি মাসের কিআড্ডায়! অতিথি, ব্যান্ড ও কিআ পাঠকদের অংশগ্রহণে বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছিল ৮২ নম্বর সভা। দারুণ এই সভার টুকরো টুকরো গল্প থাকছে তোমাদের জন্য।
ছবি: আব্দুল ইলা

চশমালোচনা

কিশোর আলোর জানুয়ারি সংখ্যা সাজানো হয়েছিল চশমা নিয়ে। তাই জানুয়ারি মাসে কিআড্ডায় চশমা নিয়ে হয়েছে ব্যাপক আলোচনা। চশমা ও কিআ দুটো নিয়েই নিজেদের ভালো লাগার কথা একে একে জানায় প্রত্যেকে। কেউ কেউ কোন ব্যাপারটা মন্দ লাগে, সেটাও বলতে ভুলল না। এই যেমন আফসারা জামান বলল, চশমার পাওয়ারের ব্যাপারটা তার কাছে খটমটে লাগলেও উচ্ছ্বাস তৌসিফের লেখা ফিচার থেকে সে পুরো বিষয়টা সহজে বুঝতে পেরেছে। ঠিক তখনই আরেকজন তুলল ‘কমিকস’ ডিপার্টমেন্টের কথা। তার সাফ কথা, স্ক্রিপ্টে আরেকটু ‘গতি’ চাই! নানান প্রসঙ্গে নানান মতামত থাকলেও সবাই অবশ্য একবাক্যে মেনে নিল, এবারের সংখ্যার ‘ভাই চশমা, তোমারে সেলাম’ লেখাটা একদম দুর্দান্ত।

বইমেলার গল্প

মাসটা ফেব্রুয়ারি। চলছে বইমেলা। ‘আপনার প্রিয় লেখক কে?’, ‘কোন কোন বই আপনার প্রিয়’, ‘নতুন কী বই লিখলেন’ ঘরানার প্রশ্ন তাই একদমই প্রাসঙ্গিক। কিআড্ডায়ও তার ব্যতিক্রম ঘটল না। উপস্থিত হওয়ামাত্রই এমন সব প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন কিআ সম্পাদক আনিসুল হক। এক এক করে উত্তরও দিলেন তিনি। সেই সঙ্গে শোনালেন বইমেলায় তাঁর সঙ্গে ঘটে যাওয়া একটি সুন্দর অভিজ্ঞতার গল্প।

ছবি: আব্দুল ইলা

‘একটা দশ-এগারো বছরের বাচ্চা বলল, “স্যার আমি আপনার বই পড়ি।” তার মা বলল, “আপনি কি আমার মেয়েটাকে একটু জড়িয়ে ধরবেন?” আমি তার কাঁধে হাত দিলাম। ছবি তুললাম। ওর মা বলল, “আমার মেয়েটা ব্রেইলে পড়ে। আর আপনার লেখাগুলো, কিশোর আলোর গুড্ডুবুড়ার গল্প আমি ওকে পড়ে শোনাই।” তখন বুঝলাম, ওর মা কেন জড়িয়ে ধরতে বলেছিলেন। কারণ, মেয়েটি চোখ দেখে না। মাহা তার নাম।

লিখে আমি কী পেয়েছি? এই যে, মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। এর কি কোনো তুলনা আছে?’

বুলিংকে ‘না’

নানা বিষয়ে আড্ডার মধ্যে হঠাৎ উঠে আসে বুলিংয়ের প্রসঙ্গ। কেউ আমাদের কোনো দুর্বলতা নিয়ে আপত্তিকর কিছু বললে কষ্ট পাওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু জরুরি হচ্ছে প্রিয়জনদের সঙ্গে তা ভাগাভাগি করে নেওয়া। সেই সঙ্গে বিষণ্ন কাউকে অনুপ্রেরণা জোগানোর দায়িত্বটাও আমাদেরই নিতে হবে। শক্তি চট্টোপাধ্যায় যেমনটা বলেছিলেন, ‘মানুষ বড় কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও’। কিআর সহকারী সম্পাদক মহিতুল আলমও এমন তাগিদ দিলেন। পাশাপাশি আহ্বান জানালেন প্রতিবাদ জারি রাখার, ‘আমাদের সংগ্রাম করে যেতে হবে।’

ছবি: আব্দুল ইলা

অ্যাডভার্ব

চশমা, বইমেলা, বুলিংসহ নানা আলোচনায় সময় ততক্ষণে পেরিয়েছে অনেক। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েছে বেশ আগে। সবার মধ্যে ততক্ষণে শুরু হয়ে গেছে অন্য রকম অপেক্ষা। কখন আসবে অ্যাডভার্ব? সভায় আসা এক পাঠক আবার অ্যাাডভার্বের নাম শুনে নড়েচড়ে বসল। ব্যান্ডটার নাম শুনে সে মনে করেছিল পার্টস অব স্পিচের কিছু পড়ানো হবে। অ্যাডজেক্টিভ, অ্যাডভার্বের কচকচানি বুঝি শুনতে হবে এখানেও! সঞ্চালক মহিতুল আলম আর দেরি করলেন না। আমন্ত্রণ জানালেন প্রান্ত, রিক্স, লিংকন, তুহিন এবং সোহাগের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এই ব্যান্ডকে। তারা শোনাল ‘কত দূর’, ‘কে তোমাকে বাসবে ভালো’, ‘বিদায়বেলা’র মতো দারুণ সব গান। তাদের পথচলার গল্পও শোনা হলো ফাঁকে ফাঁকে। জানা গেল, ব্যান্ডের এমন নাম রাখার পেছনে বিশেষ কোনো কারণ ছিল না। তারা কেবল চাইছিল নতুনত্ব।

ছবি: আব্দুল ইলা

দেখা গেল আরও কিছু ব্যাপারে অ্যাডভার্ব চিরায়ত সব কিছু থেকে আলাদা। এই যেমন, ভোকালিস্ট প্রান্ত কখনো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গান শেখেননি। তা ছাড়া, সদস্যদের পছন্দের জনরা আলাদা হলেই যেখানে ব্যান্ডে ভাঙনের সম্ভাবনা দেখা দেয়, সেখানে অ্যাডভার্বের সদস্যরা ভালো কিছু তৈরির জন্য নিজেদের ‘কমফোর্ট জোন’ থেকে বেরিয়ে আসার নজিরও গড়েছেন। গান নিয়ে আরও নানা কথা হলো অল্টারনেটিভ ঘরানার এই ব্যান্ডের সঙ্গে। আমাদের দেশে ব্যান্ড মিউজিক করতে গেলে অসংখ্য প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। সেসব সামলে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে অ্যাডভার্ব।

দারুণ এক কিআড্ডা শেষে চিপসের সঙ্গে প্রত্যেকের সঙ্গী হলো চমৎকার সব স্মৃতি। কয়েকজনের হাতে দেখা গেল কিআর রিস্টব্যান্ডও। কেউ ছড়া আবৃত্তি করে, কেউ বা স্ট্যান্ড আপ কমেডির চেষ্টা করে পুরস্কার পেয়েছে সেসব।