এডিস নিধন

অলংকরণ: আপন জোয়ার্দার

চারদিকে ফিনাইলের কড়া গন্ধ। শীতল ঘর। একটু পরপর বিপবিপ শব্দ এসে লাগছে কানে। মাথা ধরার উপক্রম। তা ছাড়া সবকিছু প্রায় নিস্তব্ধ, নিথর। কোমল আলোয় চারদিকে ভিন্ন এক ভুবনের হাতছানি। জানালায় ভারী সবুজ পর্দা। নিজেকে বেশ অচেনা লাগছে। সারা শরীরে তীব্র যন্ত্রণার অনুভূতি। ক্লান্ত–অবসন্ন পথচারী হিসেবে ভাবতে ভালো লাগছে নিজেকে। পরিবেশটায় কেমন যেন একটা মায়া ছড়ানো। হঠাৎ মনে হলো পৃথিবীটা দুলছে। প্রচণ্ড গতিতে দুলছে। এই দোল খাওয়া পৃথিবীর সঙ্গে দুলছি আমি। নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গেছে বোধ হয়। চারপাশটায় কেমন একটা ঘোলাটে ভাব। বিপবিপ শব্দটা আরও বিকট হয়ে কানে লাগছে। আমি তন্দ্রা ও জাগরণের মাঝামাঝি।

এমন সময় একটা অচেনা আওয়াজ মস্তিষ্কের নিউরনে সূক্ষ্ম নাড়া দিল। বেশ বিরক্তিকর শব্দ। হঠাৎ নাকি সুরে কেউ একজন বলল, ‘আমি এডিস।’

বলার ধরনটা বেশ হাস্যকর, ‘এডিস’ বলার পর ‘স’–এ লম্বা একটা টান দেয়। ব্যাপারটা এমন এডিসসস…!

আমি হাসতে গিয়েও শেষমেশ পারলাম না, যদি ‘এডিসসস…’ মহাশয় রাগ করেন। তা ছাড়া হঠাৎ করে এসে কেউ একজন বলবে আমি এডিস, আর আমি বিশ্বাস করব, তা তো হয় না।

তারপর নাকি সুরে অভিমানের গলায় বলল, ‘তোমরা নিজেকে খুব চতুর ভাবো, আসলে তোমরা কী জানো?’

আমি বললাম, ‘এখনো তো বলেননি এডিসসস...মহাশয়, জানব কী করে?’

নাকি সুরে গম্ভীর কণ্ঠে বলল, ‘তোমরা বোকা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, তোমরা তা জানো না।’

আমি কোনোমতে হাসি চেপে বললাম, ‘তো, আপনি জানলেন কী করে এডিস সাহেব, আপনার তো জীবনকালই মাত্র একুশ দিন।’

কিছুক্ষণ পর একটা অচেনা টাইপের মৃদু হাসিতে সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। অদ্ভুত এক গা ছমছমে হাসি।

অতঃপর প্রচণ্ড ঘাম দিয়ে শরীরটা বেশ ঝরঝরে, সতেজ লাগতে থাকে। সারা গা ঘামে চিটচিটে। চোখ খুলে দেখি সাদা অ্যাপ্রন পরা এক ডাক্তার হাসিমুখে তাকিয়ে। পরক্ষণেই বলল, ‘বাহ, ডেঙ্গু তো আপনার কাছে পরাজিত। অবশেষে জ্ঞান ফিরল আপনার।’

আমি চশমার গোল গোল ফ্রেমের আড়াল থেকে তাকিয়ে একটু হাসলাম। তারপর ভাবতে থাকি, সত্যিই তো, আমরা সবকিছু জানার পরও মেনে চলছি না। যেখানে–সেখানে পানি জমতে দিচ্ছি কেন? আমরা সবাই সচেতন হই, এডিস মশা ধ্বংস করি, ডেঙ্গু প্রতিরোধ করি।