১৫০টির বেশি শিক্ষা-ডিগ্রি যাঁর: অধ্যাপক পার্থিবন

ছবি: মানি কন্ট্রোল থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট

আমাদের বেশির ভাগের কাছে ফাইনাল পরীক্ষা মানে স্বস্তির নিশ্বাস। শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি ঘটে এক বা দুটি ডিগ্রিতেই। কিন্তু চেন্নাইয়ের এক অসাধারণ মানুষের কাছে শিক্ষা কোনো গন্তব্য নয়, এটাই তাঁর জীবনের আসল যাত্রা।

পরিচিত হই অধ্যাপক ড. ভি এন পার্থিবনের সঙ্গে। তাঁর গল্প এতটাই অবিশ্বাস্য যে মনে হয় যেন ভারতীয় সিনেমার অনুপ্রেরণাদায়ক কোনো চরিত্রের কাহিনি। সবাই ভালোবেসে তাঁকে বলেন ‘ডিগ্রির ভান্ডার’, এক জীবন্ত জ্ঞানের গ্রন্থাগার।

অবিশ্বাস্য এই যাত্রার শুরু হয়েছিল এক সহজ কিন্তু গভীর প্রতিজ্ঞা থেকে—মায়ের কাছে করা একটি অঙ্গীকার।

শুরুতে প্রথম ডিগ্রির বেলায় পার্থিবন কেবল পাস করেছিলেন, তা–ও কষ্টে। ছেলের সেই ফল দেখে মা খুবই দুঃখ পান। সেই মুহূর্তেই পার্থিবনের মনে জ্বলে ওঠে এক আগুন। তিনি প্রতিজ্ঞা করেন, শুধু পাস নয়, একদিন তিনি হবেন শ্রেষ্ঠ ছাত্র, উজ্জ্বল করবেন মায়ের মুখ।

সেই একটিমাত্র প্রতিজ্ঞা পরিণত হয় সারা জীবনের সাধনায়। ১৯৮১ সাল থেকে পার্থিবন লেখাপড়া থামাননি একটি দিনের জন্যও। প্রথমে লক্ষ্য ছিল শুধু ভালো ফল করা। পরে তা রূপ নেয় জ্ঞানের প্রতি অশেষ তৃষ্ণায়।

এক অনন্য শিক্ষাজীবন

অধ্যাপক পার্থিবনের একাডেমিক সাফল্য সত্যিই বিস্ময়কর। তিনি অর্জন করেছেন ১৫০টির বেশি ডিগ্রি ও ডিপ্লোমা। তাঁর যোগ্যতার তালিকা যেন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স ক্যাটালগ—

অধ্যাপক পার্থিবনের অর্থনীতি, পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আইন বিষয়ে একাধিক মাস্টার্স ডিগ্রিধারী রয়েছে। তাঁর রয়েছে আশ্চর্যজনক ১২টি এমফিল ডিগ্রি, আর বর্তমানে তিনি করছেন চতুর্থ পিএইচডি।

সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ক বিষয় হলো অধ্যাপক পার্থিবনের নিবেদন। নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষাযাত্রা চালিয়ে যেতে তিনি নিজের বেতনের প্রায় ৯০ শতাংশ খরচ করেন পড়াশোনার পেছনে—বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি, বই ও পাঠ্যসামগ্রীতে।

পার্থিবনের প্রতিদিনের জীবন যেন এক শৃঙ্খলার পাঠ। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত তিনি পড়ান একাধিক প্রতিষ্ঠানে। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে সময় পান শুধু নিজের পড়াশোনার জন্য। অন্যরা যখন বিশ্রাম নেয়, তিনি তখন বইয়ে ডুবে থাকেন।

এক সাক্ষাৎকারে পার্থিবনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, এই দীর্ঘ পথচলার রহস্য কী? তিনি বলেছিলেন, ‘সীমাবদ্ধতা কেবল মনের মধ্যেই থাকে।’ সত্যিই তিনি প্রমাণ করেছেন, যদি আবেগ ও ভালোবাসা দিয়ে শেখার পথে এগোনো যায়, তাহলে কোনো বাধাই বাধা নয়।

১৫০টির বেশি ডিগ্রি অর্জনের পরও পার্থিবন মনে করেন, তাঁর যাত্রা এখনো শেষ হয়নি। তাঁর পরবর্তী লক্ষ্য ২০০ ডিগ্রির মাইলফলক স্পর্শ করা।

যে দেশে উচ্চশিক্ষা এখনো অনেকের স্বপ্ন, সেখানে অধ্যাপক পার্থিবন হয়ে উঠেছেন এক আলোকিত অনুপ্রেরণা। তিনি শুধু ডিগ্রি সংগ্রহ করছেন না, রক্ষা করছেন মাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি, উদ্‌যাপন করছেন শেখার আনন্দ, আর প্রমাণ করছেন—শিক্ষা নিজেই হতে পারে এক জীবনের উদ্দেশ্য।

সূত্র: মানি কন্ট্রোল (এআইয়ের সহায়তা নেওয়া হয়েছে)