আমার প্রতিদিনের অনুপ্রেরণা

অলংকরণ: আপন জোয়ার্দার

আমি কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। আমার সময়টা খুব স্বাভাবিকভাবেই একটু কষ্টদায়ক, কঠিন। মাঝেমধ্যে ধৈর্য ধরে রাখাটাও কঠিন মনে হয়। তবে হাল ছাড়তে পারি না কখনো। তার একটা কারণ, উদ্দীপনা। আর সেই উদ্দীপনা আসে আমাকে ঘিরে আমার পরিবেশ থেকে। সকালবেলা যখন মা এসে ঘুম থেকে ডেকে তুলে কলেজের জন্য তৈরি হতে বলেন, তখন খুব বিরক্ত লাগে, কিন্তু পরক্ষণেই সেটা চলে যায়। কারণ, আমি ভাবি, যে মা ফজরের নামাজের সময় আল্লাহর কাছে মোনাজাতে তাঁর সন্তানদের ভবিষ্যতের কিরণ হয়ে ওঠার জন্য প্রার্থনা করেছেন, সেই মায়ের অলস সন্তান আমি হব কী করে? আমার অনুপ্রেরণা আসে আমার বাবার কাছ থেকে, যে বাবা তাঁর সব বিলাসিতা বিসর্জন দিয়ে, তাঁর সন্তানদের বটবৃক্ষ হয়ে তাদের ভবিষ্যতের পথ দেখান। আমার অনুপ্রেরণা জাগায় আমার আদরের ছোট ভাই-বোনেরা, যারা আমাকে বলে, ‘আপু তুমি ডাক্তার হলে আম্মু-আব্বুর জন্য অনেক ভালো হবে।’

আমাদের গৃহকর্মে নিয়োজিত তাহামিনা খালা, তিনি এখন ৬০ বছরের বৃদ্ধ। তাঁর ক্ষুধা মেটানোর জন্য তিনি আমাদের বাসায় যে কাজগুলো করেন, সেটাও আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়, ভাবায়। বয়সের ভারে তাঁর দেহ ঝুঁকে পড়লেও, শক্তি ঝুঁকে পড়েনি। আমার উদ্দীপনা আসে আমার সেই সব শিক্ষকের কাছ থেকে, যাঁরা আমাদের তাঁদের নিজেদের সন্তানের মতো ভেবে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছেন আমাদের ভবিষ্যতের উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে গড়ে তুলতে। আমার উদ্দীপনা আসে আমার সেই বন্ধুর কাছ থেকে, যে হয়তো আমার সমপরিমাণ সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না। তবে তার দৃঢ় প্রচেষ্টা তাকে প্রতিদিন জ্ঞানার্জন করতে সাহায্য করেছে। ঘুমন্ত দুপুর বেলায় যখন আমি আমার কোচিংয়ের জন্য বের হই, তখন খুব অলসতা লাগলেও সেটা কয়েক সেকেন্ড পর পালিয়ে যায় আমাদের ড্রাইভার মামাকে দেখলে। কারণ, তিনি হয়তো আমার মতো জ্ঞানের রাজ্যে খুব বেশি দূর প্রবেশ করতে পারেননি। তবে আমি যাতে জ্ঞানার্জন করে মানুষের মতো মানুষ হতে পারি, তাঁর মতো মানুষগুলোর পাশে থাকতে পারি, সে জন্য আমার যাতায়াতে আমাকে সাহায্য করে আমাকে উদ্দীপনা দেন। আমার মতে, আমি অনেক ভাগ্যবান। কারণ, আমার স্রষ্টা আমাকে এমন একটা পরিবেশে রেখেছেন, যেখানে সবাই আমার সহায়ক আমার পরিশ্রমের এবং কঠিন সময়ের সাথি। জানি না, আমি কত দূর যাব, কত দূর আমার প্রসার ঘটবে, তা-ও জানি না। তবে আমার করুণাময় আল্লাহর কাছে এবং আমার পরিবেশের কাছে আমি ঋণী এবং কৃতজ্ঞ। কারণ, তাঁদের এই উদ্দীপনার ফলে হয়তো একদিন আমি বাংলাদেশে ও বিশ্বের জন্য একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রে পরিণত হয়ে অন্য সবার মাঝেও স্ফুলিঙ্গ ছড়াতে পারব।