অরণ্যদার চশমা

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

চাচাতো ভাই অরণ্যদার সঙ্গে আমার শত্রুতা ছোটবেলা থেকেই। আমি ওর চেয়ে পাঁচ বছরের ছোট। সে কারণেই কিনা কে জানে, সব সময় ঝগড়া বা মারামারিতে অরণ্যদাই জিতে যেত। পরিবারের সবার চোখে সে একদম শান্তশিষ্ট। একমাত্র আমিই জানি ও কেমন।

কিন্তু আমার কথা কেউ বিশ্বাস করলে তো! এই কারণে সব সময় তার প্রতি আমার একটা ক্ষোভ জমে থাকত। আর এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করতে গিয়ে আমি একদিন গুরুতর এক অপরাধ করে ফেললাম। যার জন্য আমি নিজেকে আজ পর্যন্ত ক্ষমা করতে পারিনি।

অরণ্যদা চশমা ছাড়া একেবারে অন্ধ। তাই একদিন ভাবলাম, ওর চশমাটা লুকিয়ে ফেললে কেমন হয়! সারা দিন চশমা খুঁজে ফিরবে। এখানে-ওখানে হোঁচট খাবে। এতে আমার প্রতিশোধ সামান্য হলেও নেওয়া হতে পারে।

সেদিন অরণ্যদা ছাদে পাটি পেতে শুয়ে চশমাটা পাশে রেখে কানে এয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনছে। আমি ছাদে উঠে দেখি, সুযোগটা হাতের মুঠোয়। আমি চশমাটা নিয়ে ছাদ থেকে নেমে এসে ছুড়ে ফেলে দিলাম বাড়ির পাশের ডোবায়।

সাংঘাতিক ব্যাপারটা ঘটল কিছুক্ষণ পর। আমি তখন জানালার পাশে বসে নিশ্চিন্ত মনে শার্লক হোমস পড়ছি, ঠিক এমন সময় তীব্র একটা চিৎকার শুনতে পেলাম। অরণ্যদা আমাদের তিনতলার রেলিংহীন ছাদ থেকে পড়ে গেছে। একটা পা ভেঙে গেছে ওর। এ ঘটনার পর দুই বছর কেটে গেছে। এখন পর্যন্ত বাড়ির কেউ আমাকে সন্দেহ করেনি। কিন্তু তাই বলে আমি শান্তিতে নেই। এখন অরণ্যদার সামনে এলেই লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে আসে। ওকে জড়িয়ে ধরে বলতে ইচ্ছে করে, ‘দাদা, বিশ্বাস করো, আমি কখনো এ রকম চাইনি।’

কিন্তু এটা বলা হয় না।