আছাড় খাব

শীতকাল এলেই মনে পড়ে ছোটবেলায় কেটে যাওয়া শীতকালগুলোর কথা। কুয়াশাভরা শীতের সকালে উঠেই আম্মু কাজে লেগে যেত। আর আব্বু বের হতেন আমাদের দুই ভাইবোনকে নিয়ে ট্রেন দেখাতে। রেলস্টেশনের কাছাকাছি পৌঁছাতেই দেখতাম স্টেশনের বাইরের ভাপা পিঠার দোকানগুলোতে বেজায় ভিড়। আমরাও ভিড়ের একটা অংশ হয়ে ভাপা পিঠা কিনতাম। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ধোঁয়ার মতো কুয়াশায় দূর থেকে একটা জ্বলন্ত বাতির ছুটে আসা দেখে বুঝতাম ট্রেন আসছে। সকালের ট্রেনটা স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার পর আমরা রেলপথ ধরে হাঁটতে থাকতাম। কিছুদূর হেঁটে আসার পর কাছের বাজার থেকে আব্বু আমাদের চকলেট ও চুইংগাম কিনে দিতেন। কিন্তু আমরা সেগুলো খেতাম না। বাসায় নিয়ে এসে আংটি আকৃতির চকলেটগুলো আঙুলে দিতাম আর চুইংগামগুলো গেলার জন্য দুই ভাইবোন অনবরত চেষ্টা চালাতাম। চেষ্টা ব্যর্থ হলে চুইংগামগুলো বিছানার এক প্রান্তে লাগিয়ে টানতে টানতে অপর প্রান্তে নিয়ে গিয়ে লাগাতাম। এভাবে পুরো বিছানায় চুইংগাম লাগিয়ে দিতাম। আম্মু এসব কাণ্ড দেখে রাগ করতেন। তাই আম্মুকে খুব রাগী ভাবতাম। একদিন আম্মু আমাদের চুইংগাম খাওয়াই বন্ধ করে দিলেন। সেদিন গভীর রাতে জেদ ধরলাম আমাকে এক্ষুনি চুইংগাম এনে দিতে হবে। রেলস্টেশনের পাশের ওই বাজারটা থেকেই আমাকে চুইংগাম এনে দিতে হবে। আম্মু তখন রেগে গিয়ে বলল, ‘আছাড় খাবি?’ কিন্তু আমি তখন আচার ও আছাড় শব্দ দুইটার মধ্যে পার্থক্য জানি না। আছাড়কে আচার ভেবে বললাম, ‘হ্যাঁ, খাব। এখন আর চুইংগাম খাব না, আছাড় খাব।’