প্রথমে ভাবতাম তোমার ছোট বোন হয়ে এই দুনিয়ায় আসা একদম ঠিক হয়নি। ছোটবেলায় তোমার ইউনিফর্ম, টেক্সটবুক কিছুদিন পর আমার হয়ে যেত। তোমার বইগুলো নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে রাজ্যের সুখ খুঁজে পেতাম আমি। বাইরে থেকে অনেক দামি দামি চকলেট কিনে আনতে তুমি, আর আমি খুঁজলে দেখিয়ে দেখিয়ে খেতে! তবে শেষ মুহূর্তে এসে শেয়ার করতে ঠিকই। আগে অ্যালার্ম বাজার পর প্রাইভেটে যাওয়ার জন্য ডাকতে ডাকতে ঠেলে খাট থেকে ফেলে দিতে আমাকে। এখন একা থাকলেও অ্যালার্মের ডাকে নিজেকেই উঠতে হয়। আগে আমি শুধু বকাই খেতাম। কিন্তু তারপরও মজা করতাম অনেক। মানে তুমি তো অন্তত আমাকে দিতে পারতে বকা! আমাকে তো আর শাসন করার মতো কেউ নেই।
আমাদের বাসায় কোনো মেকআপ নেই। তাই আয়নার সামনে বসে বসে সময় নষ্ট করে সাজার অভিজ্ঞতা হয়নি। তবে তুমি এত কিছুর পরও আমাকে নিমেষেই সাজিয়ে দিতে। আর বলতে, ‘দেখ, কীভাবে তোরে সাধারণ থেকে অসাধারণ করে দিছি!’ এখন আর পালা করে মশারি টানানোর মজা নেওয়া হয় না, প্রতিদিন নিজেই করে ফেলি। আমি বলব না তোমাকে ছাড়া ঘর ফাঁকা লাগে, কারণ স্কুল-প্রাইভেটের দৌড়াদৌড়িতে আমি নিজেই তো তেমন থাকতে পারি না। আগে তো তুমি শুধু ডিম ভাজি করতে পারতে। এখন দেখো, (আমি ছিলাম তার কারণে) কত মজার মজার জিনিস করতে পারো! আমার সামান্য দোষ হলেই সব আম্মুকে বলে দিতে তুমি, আর তোমার কিছু আমি বলতামই না। কারণ তো জানোই, তোমার মতো অত নিষ্ঠুর না আমি। আর মনে আছে, কীভাবে আমরা একসঙ্গে মুভি দেখতাম! প্রথমে টিভিতে, পরে ল্যাপটপে। স্কুলেও কেউ বকতে আসত না। তোমার কাছেই তো শিখেছি, যদি আমি সঠিক হই তাহলে কাউকেই যেন ভয় না পাই। তোমার সঙ্গে থেকে আমি অনেক কিছুই শিখেছি। এখন আমি নিজেই সবকিছু ঠিক করে নিতে পারি। কিন্তু তুমি থাকতে তা আরও সহজ হয়ে যেত! কারণ, তুমিই তো ছিলে আমার সঙ্গে। আমার উল্টাপাল্টা এক্সপেরিমেন্টগুলোকে কত্ত উৎসাহ দিতে তুমি! আর আমার মন রাখার জন্য, আমার বানানো জিনিসগুলো দেখে বলতে ‘Not bad’। কলেজ লাইফ তো তোমার ভালোই যাচ্ছে। এভাবে এগিয়ে থাক সবকিছুতে। তোমার জন্য দোয়া রইল। আর কিআর জন্যও শুভকামনা।