এ তো আজব দেশ ওরে ভাই! আবোলতাবোল পুরো
রোদে বসে কাঠসেদ্ধ খাচ্ছে যে কাঠ-বুড়ো!
কাণ্ড দেখে চমকে উঠি, বুক ধড়ফড় করে
হাঁস, শজারু মিলেমিশে ‘হাঁসজারু’ রূপ ধরে।
ওলটপালট কাজকর্মে নেই এ দেশের জুড়ি
হেড অফিসের বড় বাবুর গোঁফ হয়ে যায় চুরি।
গঙ্গারামই সৎ পাত্র (না হোক মনঃপূত)
ভীষ্মলোচন গান গাইলে ছাগল মারে গুঁতো।
এই দেশটায় সবই ভালো, কিন্তু লোকে বলে
পাউরুটি আর ঝোলা গুড়ই সবচে ভালোর দলে!
ঠাস ঠাস বা দ্রুম দ্রামিয়ে এখানে ফুল ফোটে
গন্ধটা তার শাঁই শাঁই বা পন পন পন ছোটে।
বানাচ্ছে কল, আজব রকম, চণ্ডীদাসের খুড়ো
কাছে পেলেই সুড়সুড়ি দেয় কাতুকুতু বুড়ো!
লড়াই খ্যাপা পাগলা জগাই লড়াই নিয়েই থাকে
কুমড়োপটাশ কাঁদে, হাসে, ছোটে এবং ডাকে।
চোখ, শিং, নখ নেই যে সাপের, ডান্ডা মেরে কাবু
সেই সাপকে নিয়ে ঘোরে সাপুড়ে রামবাবু!
মাঝে মাঝে যায় না রাখা কান দুটোকে খুলে
পেঁচির চেঁচামেচিতে যায় প্যাঁচাটা গান ভুলে।
ঝুরঝুরে এক বাড়ির ভেতর থুরথুরে এক বুড়ি
হাসিমুখে গাল ভরে খায় চালভাজা আর মুড়ি।
ছায়া ধরার ব্যবসা চলে, চৌদ্দ আনা শিশি
প্যালারামের সাবধানতায় অবাক দিবানিশি।
হাতুড়ে সব চিকিৎসা দেয়, হাতুড়ি তার কড়া
খাবার চুরি হয় এখানে, যায় না তো চোর ধরা।
গোমড়ামুখো কিম্ভূতটা সব থেকে প্রবলেমে,
বোম্বাগড়ের রাজা বাঁধায় আমসত্ত্ব, ফ্রেমে!
কেবল পালায় বুঝতে নারাজ দুষ্ট শ্যামাদাসে
রাজা ভাবেন ন্যাড়া কবার বেলতলাতে আসে!
ঠিকানা চাও? আদ্যানাথের মেসো কোথায় থাকে!
জগমোহন বললে তুমি হাত বোলাবে টাকে।
একুশে আইন! ওরে বাবা! এই বুঝি কেউ ফাঁসে!
যায় না দেখা হুঁকোমুখো হ্যাংলা কভু হাসে।
নারদ! নারদ! লড়াই চলে, পুলিশ এলেই ঠেকে
ফুটোস্কোপের ভেতর দিয়ে মুণ্ডুটাকে দেখে!
কেতাব পড়া লোকজনে খায় পাগলা ষাঁড়ের তাড়া
দাঁড়ে দাঁড়ে দ্রুম বাজিয়ে লোকে পাগলপারা।
রাতটা এলে ভয়ের চোটে খুব সিঁটিয়ে থাকি
রাতের বেলা ভূতের খেলা, ভূতের ছানার ফাঁকি।
ডানপিটেদের অত্যাচারে টম চাচা যায় ভেগে
আহ্লাদীদের ঠোঁটের কোনায় হাসিই থাকে লেগে।
রামগরুড়ের ছানা আছে, হয় না হাসিমুখো
হাত গণনায় নন্দ গোঁসাই ভুলল হাসি, হুঁকো।
নাজির করে গন্ধ বিচার সাহসে বুক বেঁধে
ভূতকে ভাগায় বুথ সাহেবের বাচ্চা কেঁদে কেঁদে।
জ্ঞানের কথা লেখে লোকে পেনসিলে নোটবুকে
হুলোর গানের কী যে জ্বালা! যায় না বলা মুখে।
‘ভয় পেয়ো না’ বলে ভোলায়, কামড়ে দিতে বাকি!
ট্যাঁশ গরুও আছে হেথায়, যা আসলে পাখি!
ফসকে গিয়ে পাঁজর ফুটোয় থামল মাতামাতি!
বীর পালোয়ান ষষ্ঠীচরণ লোফেন বিশাল হাতি।
এই দেশে যায় গল্প বলা! বললে ফোঁড়ন কাটে
তবু আবোলতাবোল দেশে ফুর্তি পথেঘাটে।
এই দেশটায় ফুর্তি, মজা ঘুরছে পায়ে পায়ে
যত্ন করে বানিয়েছেন দেশ সুকুমার রায়ে।