আমার ছেলেবেলা

অলংকরণ: সব্যসাচী চাকমা
ছোট থাকতে আমি অনেক কল্পনাপ্রবণ ছিলাম। কল্পনার জগৎ থেকে বের হতে আমার মোটামুটি বেশ অনেক বছর লেগেছে। অদ্ভুত হলেও সত্য, আমার মা–বাবাও আমার কল্পনাকে উৎসাহ দিত। উদ্ভট কাজেই আমার আগ্রহ ছিল বেশি। ছোটবেলার কল্পনার জগতের কিছু অংশ তোমাদের বলছি।

টুথপেস্ট

টুথপেস্ট ছোটবেলায় আমার কাছে ডিনার শেষে দেওয়া ডেজার্টের মতো ছিল। ডিনার না করলেও হতো কিন্তু ডেজার্ট প্রতিদিন খেতাম। এমনকি ডিনার না করলে টুথপেস্ট খেতে না দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আম্মু আমাকে ডিনার করাত! আব্বু সব সময় নানা ফ্লেবারের টুথপেস্ট আনত, যাতে আমি আগ্রহ না হারাই। এই ডেজার্ট খাওয়ার ইতি ঘটে অসুস্থ হয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরে।

লোশন

লোশন ছিল আমার কাছে ম্যাজিক ক্রিম। আমি ভাবতাম, আব্বু গালে লোশন মেখে ব্লেড দিয়ে ঘষা দেয়, তাই আব্বুর মুখ থেকে লম্বা লম্বা চুল (দাড়ি) বের হয়। শেভিং ক্রিম নামক বস্তুটার সঙ্গে আমার তখনো পরিচয় হয়নি। সব সাদা ক্রিমকেই আমি লোশন ভাবতাম। আমার মুখে স্বাভাবিকভাবেই তখন কোনো দাড়ি ছিল না। কিন্তু আমি তো আব্বুর মতো হতে চাই। তাই লোশন আর অনেক কষ্টে জোগাড় করা ব্লেড নিয়ে দাড়ি ওঠানোর কার্যক্রম শুরু করলাম। আব্বুর অনুকরণে মুখে একগাদা লোশন মাখলাম। এরপর ব্লেড দিয়ে গালে দিলাম এক টান। তিন দিনের জ্বরে ভোগার পর দাড়ির স্বপ্ন বিসর্জন দিয়েছিলাম।

ফানুস

আব্বুর প্রিয় লুঙ্গিগুলোকে ভাবতাম ফানুস। আমার বিশ্বাস ছিল, লুঙ্গিগুলোকে একদিন আমিও সবার মতো আকাশে ওড়াব। লুঙ্গির নিচে মশার কয়েল রেখে মাঝেমধ্যেই এই চেষ্টা চালাতাম। ফলাফল তো নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছ।

মশা

আমার শৈশব কেটেছে গ্রামে। গ্রামের ছেলেমেয়েরা জোনাকি পোকা বোতলে ভরে রাখত। কিন্তু আমার আকর্ষণ বেশি ছিল মশার প্রতি। বাসার সব বোতল, টিফিন বক্স খুললেই তার ভেতর থেকে মশা বের হতো। আমার মশা কালেকশন খাতাও ছিল একটা। যেসব মশা বেশি বিরক্ত করত, তাদের মেরে খাতায় স্কচটেপ দিয়ে আটকে রাখতাম।

মাকড়সা

স্পাইডারম্যান দেখার পর থেকে মাকড়সা ধরে ধরে হাতে নিয়ে বসে থাকতাম। ভাগ্য ভালো, একটাও কামড় খাইনি।

চাঁদ

চাঁদকে নিয়ে আমার অনেক আফসোস ছিল। কারণ, চাঁদ আমার কাছে ছিল রুটি। ছোটবেলায় বুঝতেই পারতাম না, ওই রুটিটা আকাশে কেন ঝুলে থাকে। চাঁদ যখন চিকন হতো, তখন ভাবতাম, কেউ বুঝি খেয়ে ফেলেছে। চাঁদ নামক রুটিটাকে না খাওয়ার কষ্টে হতাশায় ভুগতাম।

লেখক: এসএসসি পরীক্ষার্থী ২০২১, ফয়জুর রহমান আইডিয়াল ইনস্টিটিউট, ঢাকা