ছোটবেলা থেকেই বিড়াল খুব পছন্দ করি আমি। অনেক বিড়াল পুষেছি। এখনো ছোট্ট দুটো বিড়াল আছে আমার। ওদের নাম বাঘী ও ফুটি। ওরা যখন অনেক ছোট, তখনই হারিয়ে গিয়েছিল ওদের মা ডাব্লি। বাঘীর গায়ের রং বাদামি, বুকের নিচের অংশ সাদা। পিঠে একটা সাদা ফোঁটা আছে। সুন্দরবনের বাঘের মতো ডোরাকাটা দাগ আছে বাঘীর গায়ে, দেখলে ঠিক বাঘের মতোই মনে হয়। এ জন্য ওর নাম দিয়েছি বাঘী। বাঘী আমাকে দেখলে খুব মিষ্টি করে আহ্লাদে আটখানা হয়ে মিউ মিউ করে ডাকে। আর ফুটি হলো পুরো সাদা। শীতকালে ঠান্ডায় ওর পশমগুলো সোজা হয়ে ফুলের মতো ফুটে পড়ে, তাই ওর নাম ফুটি। সময় পেলেই আমি ওদের গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করে দিই আর ওরা চোখ দুটো বন্ধ করে গরগর আওয়াজ করে। শীতকালে আমার লেপের মধ্যেই দুটো মিলে গুটিসুটি হয়ে ঘুমায়। আমার সঙ্গে সব সময় থাকে বাঘী আর ফুটি।
যখন আমি পড়ার টেবিলে পড়তে বসি, বাঘী তখন লাফিয়ে আমার টেবিলের ওপরে উঠে আসে। আমি কী লিখছি, কী পড়ছি—সব স্যারদের মতো বিজ্ঞ চোখে টেবিলের ওপর বসে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে। কিআও যখন পড়ি, বাঘী এমনভাবে তাকিয়ে থাকে যে মনে হয় ও কিআ পড়ছে! ওমা, একদিন পড়ার মাঝে দেখি ‘বাঘী স্যার’ আমার কলমগুলো হাওয়া করে দিয়েছেন! আসলে বাঘী চালাকি করে আমার অন্যমনষ্কতার সুযোগে কলমগুলো চুরি করে নিয়ে ‘ইঁদুর ধরা’ খেলা প্র্যাকটিস করেছে! এ রকম প্রতিদিনই করে ও।
একবার বাঘী ও ফুটি আমাদের বাড়ির পেছনের পাঁচিলের ওপর খেলতে খেলতে পাঁচিলের ওপাশের গাছে উঠে গেল, কিন্তু আর নামতেই পারে না। শীতের রাতে বাদামি আর ধবধবে সাদা ব্যাটা দুটো কদমগাছের মগডালে পাখিদের মতো বসে ম্যাও ম্যাও করে চেঁচাচ্ছে! এত বুদ্ধি করে ওরা ইঁদুর ধরে, আমার সামনেই কলম হাওয়া করে দেয়—ওরাই এখন একটা গাছে উঠে আর নামতে পারছে না! কী মুশকিল! অগত্যা আমাকেই পাঁচিল টপকে বোকা দুটোকে উদ্ধার করতে হলো। সত্যি বলতে কি, বাঘী আর ফুটিকে কোলে নিয়ে আদর করলে আমার খুব ভালো লাগে।