আমার প্রথম কিআ

২০১৩ সাল। আমি তখন পড়ি ক্লাস থ্রিতে। সামনে নভেম্বর মাস। পরীক্ষা শুরু হবে। ফলে পড়াশোনায় ব্যস্ত ছিলাম। এমন সময় হকার মামার কাছে খবর পেলাম, নতুন এক কিশোর ম্যাগাজিন আসছে। নাম তার কিশোর আলো। সামনে শুরু হবে পরীক্ষা। আমাদের জিলা স্কুলে আমার প্রচুর কম্পিটিশন। ম্যাগাজিন পড়ার সময় কোথায়? আমার মা আবার একটু রাগী মানুষ। তাই পরীক্ষার আগে ম্যাগাজিনের আবদার করলে চটে যেতে পারেন। তবে বাবা অবশ্য বইপ্রেমী। তিনি বিশ্বাস করেন, ‘বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না।’ তাই অনেক চিন্তাভাবনা করে ঠিক করলাম বাবাকেই বলব কথাটা। রাতে শোবার সময় বাবাকে বললাম, ‘বাবা, জানো, নতুন একটা ম্যাগাজিন বের হচ্ছে। নাম কিশোর আলো। আমাকে কিনে দাও না।’ বাবা বললেন, ‘ঠিক আছে। কিনে আনবনে।’ আমি তো মহাখুশি। কিন্তু বাদ সাধলেন মা। তিনি কড়া আদেশ দিলেন, ‘আগে পরীক্ষা, তারপর ম্যাগাজিন।’ আমার সব খুশি ভেঙে গেল। রাতে তবু বাবাকে জোর করতে লাগলাম। বাবা কিছু বললেন না। এভাবে আস্তে আস্তে আমার উৎসাহ কমে গেল। কয়েক দিন মনমরা হয়ে থাকলাম। সবাই জানে সন্তানের কষ্টে মায়ের কষ্ট হয়। তাই...সকালে আমি স্কুলে যাওয়ার পর বাবাকে মা বললেন, ‘ও কদিন ধরে কেমন মনমরা হয়ে আছে, যা চেয়েছে আজ তা এনে দিয়ো।’ বাবাও শুনে খুশি হলেন। সেদিন সন্ধ্যাবেলা আমি যখন পড়তে বসলাম, তখন বাবা অফিস থেকে ফিরে এলেন। এসে বললেন, ‘বাবু, তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।’ দেখলাম মা মুচকি মুচকি হাসছেন। বাবা আমাকে মোড়কে মোড়া বইয়ের মতো কিছু দিলেন। আমি মোড়ক খুলে দেখি একটা লম্বাটে ধরনের বই। তার ওপরে লেখা কিআ বা কিশোর আলো। আমি অবাক হয়ে বাবার মুখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। মা বললেন, ‘কী, এবার খুশি তো?’ আমি মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম, ‘আম্মু, তুমি অনেক ভালো’। সেই প্রথম কিআ হাতে পেলাম আমি। আজও আমি সেই একইভাবে কিআ পড়ে যাচ্ছি। আমার মা-ই আমাকে কিআ পড়ার উৎসাহ দেন। কিআ, আমি আজও তোমায় আগের মতো ভালোবাসি।