আমার মজার লকডাউন

অলংকরণ: সব্যসাচী চাকমা

এ লেখাটা যখন লিখছি, দ্বিতীয়বারের মতো পুরো দেশ লকডাউনে পড়ল। যৌক্তিক কারণেই বটে, বাঁচতে তো হবে! প্রথমবার যখন লকডাউনে সব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, স্কুল যেতে হবে না বলে সবার মতো আমিও কম লাফাইনি! কিন্তু ঘরে বসে বসে আমার হয়েছিল ‘ছেড়ে দে লকডাউন কেঁদে বাঁচি’ দশা। তবে বছরখানেক ‘বেকার জীবন’ কাটানোর পর মনে হচ্ছে, সময়টা বিরক্তিকর হলেও অখাদ্য কাটেনি। তাহলে কেমন কাটল বদ্ধ জীবন? জানতে চাইলে পড়তে থাকো—

অনলাইন যাত্রা

লকডাউনে স্কুলে যেতে না হলেও অনলাইন ক্লাসের প্যাড়া ছিল, আমার ও আমার ভাইয়ের। ক্লাসের জন্যই হোক কিংবা ডিজিটাল সময়ের খাতিরেই হোক, এপ্রিলের ভেতর ঘরে চলে আসে ওয়াই–ফাই। ধীরে ধীরে আমরাও ভার্চ্যুয়াল জগতে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। ঝামেলা কিন্তু কম ছিল না, কাজেই জুনিয়ররা সাবধান!

বই পড়ে বইপোকা

গেম খেলা বা ফেসবুকিংয়ে যখন আগ্রহ চলে গিয়েছিল, তখন ঘরের বিশাল তাকভর্তি বইগুলো দেখে ভাবলাম, একটু বই পড়ে দেখাই যাক। এখন বই পড়তে পড়তে শেষমেশ চশমাই নিতে হলো! মজা করছি, চশমা আগে থেকেই ছিল। বই পড়া এখন আমার সবচেয়ে প্রিয় শখ। এখন আমি পড়ে ফেলা বইয়ের তালিকা বানাচ্ছি, যেখানে একাত্তরের দিনগুলি, হিমুসমগ্র, ফেলুদা দুই খণ্ড, তিন গোয়েন্দাসহ আরও ৬৫ বইয়ের নাম উঠে গেছে। বলে রাখি, তালিকা কিন্তু চলছেই।

ফ্যাট থেকে ফিট

বোধ হয় লকডাউনে এটাই আমার সর্বোচ্চ অর্জন। প্রায় চার মাসের সাধনায় আমার ওজন ৮০ কেজি থেকে বর্তমানে ৬০ কেজি। কষ্ট কম ছিল না, উৎসাহ ছিল অফুরন্ত।

একাদোকা

আমার মা ফ্রন্টলাইনার, তাই করোনাকালে ছুটি ছিল না। ঘরে ছিলাম শুধু আমি আর আমার পিচ্চি ভাই, যে সারা দিন গেম খেলত। লকডাউনে আমার একা সময় কাটানোর অভ্যাস হয়েছে। বই পড়ে, গানের তালে তালে নেচে, স্যারদের ক্লাস করে অথবা ইউটিউবে রান্নার বা কারাতে ক্লাস করে সময় ভালোই কেটেছে। নিজের কাজ নিজে করার অভ্যাস তৈরি হয়েছে। নিজে নিজে ডাক্তারের কাছে যাওয়া বা নিজেই করোনা টেস্ট করতে যাওয়া এ লকডাউনে শিখেছি।

শেষ করার আগে

করোনাভাইরাসকে যতই খারাপ বলো, এর ইতিবাচক দিক কম না। এই আবদ্ধ সময়টায় আমার মতো অনেকেই পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা শিখেছে, পরিবারের সঙ্গে আরও সময় কাটিয়েছে, প্রযুক্তিতে হাত পাকিয়েছে আরও কত কী! তবু সবচেয়ে বেশি শিখেছে একসঙ্গে বিপদের মোকাবিলা করা। সামনে আবারও আসছে কঠিন সময়, তাই করোনা নিয়ে সজাগ থেকো সবাই।

লকডাউন সব মিলিয়ে ভালোই কাটল। লকডাউনের ভালো দিকগুলো ভুলব না কখনোই, আশা করি তোমরাও মনে রাখবে।

লেখক: এসএসসি পরীক্ষার্থী, ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ