আমার সাহসী হওয়ার গল্প

অলংকরণ: সাদমান মুন্তাসির

ছোটবেলায় একবার নানাবাড়ি গিয়েছিলাম, আব্বুর সঙ্গে। রেলপথে গিয়েছিলাম এবং ট্রেন একটি দুর্ঘটনার কারণে দুই ঘণ্টা দেরি করল। ফলে আমরা সেখানকার রেলস্টেশনে গিয়ে পৌঁছালাম ঠিক মধ্যরাতে। স্টেশনে থেকে নানাবাড়ি প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে। হেঁটে যেতে হবে এবং কেউ নিতে আসেনি আমাদের।

আমরা তত্ক্ষণাৎ হাঁটা শুরু করলাম। কিছুদূর গিয়ে আমি শুনতে পেলাম, পরিষ্কার গলায় ও উচ্চ স্বরে একটি মানবশিশু কাঁদছে। আমি ভীষণ ভয় পেয়ে আব্বুর কাছে ঘেঁষে দাঁড়ালাম। আব্বু বুঝতে পেরে বললেন, ওটা মানুষ নয়, বিড়ালের বাচ্চা। রাতে ওরা এভাবেই কাঁদে। এ কথা শুনেও আমি যেন আশ্বস্ত হতে পারলাম না। ভয়টা থেকেই গেল। খানিক পর আমি লক্ষ করলাম একটি প্রাণী (কিংবা অশরীরী!) আমাদের সামনের গাছের ডালপালার মাঝে নড়েচড়ে বসল। আঁধারের জন্য ঠিক বোঝা গেল না। আমি রীতিমতো চিত্কার দিয়ে উঠলাম। আব্বু অভয় দিয়ে বিরক্ত কণ্ঠে বললেন, ধুর বোকা! ওটা বাদুড়-টাদুড় হবে আর কী।

এরপর কয়েক মিনিট দুজনই নীরব। একসময় আব্বু বললেন, ভূত–পেত্নি বলে আসলে কিছুই নেই। তবু মানুষ এদের ভয় পায় কোনো কারণ ছাড়াই। আমরা বাঙালি জাতি আগে এমন ভিতু ছিলাম না। কিন্তু আমাদের শিশুকালে বড়রা যতসব অর্থহীন ভূতের গল্প শুনিয়ে এবং খাবার খাওয়ানোর সময় বাঘ–সিংহ কিংবা জুজুর ভয় দেখিয়ে শৈশব থেকেই আমাদের ভিতু হিসেবে গড়ে তুলছে। যেখানে বাচ্চাকে সাহস দেখিয়েই কোনো কাজ করানো যায়, সেখানে তারা বাচ্চাকে ভূতের ভয় দেখাচ্ছে। ওরা মানুষ হিসেবে খুবই বেমানান।

আব্বু খুবই গুছিয়ে কথা বলতে পারেন। তাই হয়তো বাক্যগুলো রয়ে গেছে স্মৃতিতে কিছুটা। তবে সেদিন থেকে আমি সাহসী হয়ে উঠলাম: এসব ভূত-টুত কিছুতে আমি বিশ্বাস করি না।