ইঁদুরের মস্তিষ্কে আছে শীতনিদ্রার বোতাম

হাইবারনেশন, অর্থাৎ শীতনিদ্রা প্রাণিজগতের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। জরুরি সময়ে কিছু কিছু প্রাণী শীতনিদ্রায় থেকে তাদের শরীরের অতিরিক্ত শক্তিক্ষয় নিয়ন্ত্রণ করে। খাবারের সংকট কিংবা খারাপ আবহাওয়াতে বেঁচে থাকার জন্য অনেক প্রাণীই এই পদ্ধতি অবলম্বন করে। প্রাণীর মস্তিষ্ক থেকে শরীরের কোষগুলোতে এই বিশেষ পরিস্থিতির জানান দেয়। সে বার্তা পেয়েই কোষগুলো কম শক্তি ব্যয় করতে অভ্যস্থ হয়।

সম্প্রতি শীতনিদ্রার জন্য মস্তিষ্কের কোন নিউরন কাজ করে, সেটা শনাক্ত করতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। মানুষের মস্তিষ্কের এই বিশেষ নিউরনকেও যদি নিয়ন্ত্রিত উপায়ে সক্রিয় করে তোলা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি কঠিন সময়ে মানুষ চাইলেই তার দেহের শক্তিক্ষয়ের মাত্রা কমিয়ে ফেলতে পারবে। এই সুবিধা মানুষকে কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরের মহাকাশ ভ্রমণেও সাহায্য করবে।

ইঁদুর অবশ্য ২৪ ঘণ্টার বেশি খাবার সংগ্রহ করতে না পারলেই এই বিশেষ নিউরনকে সক্রিয় করে। মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশের কুইসেন্স ইনডিউসিং নিউরন সংক্ষেপে কিউ নিউরন এই শীতনিদ্রার মূল কারণ। এই নিউরন তার পার্শ্ববর্তী নিউরনগুলোর মধ্যে কিউআরএফপি (পাইরোগ্লুটামাইল্যাটেড আরএফ-অ্যামাইড পেপটাইড) বিশেষ তরঙ্গবার্তা ছড়িয়ে দেয়। ইঁদুর এভাবে প্রায় ৪৮ ঘণ্টার বেশি শীতনিদ্রায় কাটিয়ে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে।

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন যে অনেক প্রাণীরই এমন জরুরি সময়ে শীতনিদ্রার অভ্যাস না থাকলেও তাদের মস্তিষ্কে সুপ্তভাবে এই কিউ টাইপ নিউরনগুলো লুকিয়ে থাকে। ফলে কোনোভাবে তাদের মস্তিষ্কে এই নিউরনকে সক্রিয় করা গেলে জীবন বাঁচাতে তারাও এই বিশেষ উপায় অবলম্বন করতে পারবে। মানুষের ক্ষেত্রে শরীরের ক্ষতি না করে কীভাবে এই শীতনিদ্রার আয়োজন করা যায়, সেটা নিয়েই এখন গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা।