ইমার প্রমিজ

অলংকরণ: রাকিব রাজ্জাক

ইমা স্কুল থেকে এসে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। তারপর বালিশে মুখ ঢেকে শুয়ে পড়ল বিছানায়। স্কুল ড্রেসটাও পাল্টাল না। ওর আজ ভীষণ মন খারাপ।

গতকাল রাতে কিশোর আলোয় পাঠানোর জন্য একটা গল্প লিখছিল ইমা। তখন এসে হাজির হলো ওর আম্মু। এক মাস পরই ইমার বার্ষিক পরীক্ষা শুরু। আর এখন ইমা ক্লাসের পড়া না পড়ে কিআর জন্য গল্প লিখছে দেখে খুব বকা দিল তাকে। তারপর সব গল্পের বই আর কিআগুলো নিয়ে ঢুকিয়ে রাখলেন ইমার বইয়ের আলমারিতে আর সেখানে ঝুলিয়ে দিলেন সুদৃশ্য তালা। কিন্তু ইমা তো বই ছাড়া থাকতে পারে না। কান্না চলে এল ওর। ইমার আম্মু এতেই থামলেন না। আবার ফোন দিলেন ইমার ক্লাস টিচার শাখাওয়াতকে। তিনি ইমাদের ইংরেজি পড়ান। তো ফোন দিয়ে স্যারকে বললেন যে আগামীকাল যেন ক্লাসে ইমাকে খুব করে শাস্তি দেওয়া হয়। আর এদিকে ইমা তো রাগে-অভিমানে কান্না করতে করতে না খেয়েই শুয়ে পড়ল।

সকালবেলা উঠে ব্রেকফাস্ট না করে স্কুলে চলে গেল। ইংরেজি ক্লাস শুরু হলো। রোল কল শেষ। এবার শাখাওয়াত স্যার ইমাকে ডাকলেন। জেরা করা শুরু করলেন তাকে। কেন সে ক্লাসে গল্পের বই পড়ে। ইত্যাদি ইত্যাদি। অনেক বকা দিল ইমাকে। তার চোখ দিয়ে পানি বের হয়েই যাচ্ছিল। অনেক কষ্টে আটকে রাখল সে।

ক্লাসের সবার সামনে আজ ইমাকে এত অপমানিত হতে হয়েছে। তাই ওর মনটা এত খারাপ আজ। শুয়ে শুয়ে কান্না করতে করতে একসময় ঘুমিয়েই গেল ইমা। ঘুমের মধ্যে সে খুব সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখল। সে দেখল যে সে তাদের বাগানের মধ্য দিয়ে হাঁটছে। তখনই একটা গোলাপ ফুল থেকে একটা ছোট্ট পরি বের হয়ে এল। সে অবাক হয়ে পরিটার দিকে চেয়ে আছে। পরিটা ইমার সামনে এল। এরপর সেটা আমার সমান হয়ে গেল। পরিটা ইমাকে বলল, ‘হাই আমি লালি।’ ইমাও নিজের পরিচয় দিল।

লালি ইমাকে বলল, ‘ইমা, তোমার খুব মন খারাপ, তা–ই না?’

‘হ্যাঁ, খুব। কিন্তু তুমি কীভাবে জানো?’

‘আমি তো পরি, আর পরিরা অনেক কিছুই জানে। মন খারাপ কোরো না ইমা। আমার সঙ্গেও এমন হয়েছে।’

‘কী হয়েছে তোমার সঙ্গে?’ ‘আমাদের পরির দেশে একটা ম্যাগাজিন আছে। এটার নাম চাঁদের আলো। আমি ওটা খুব পছন্দ করি। আর আমিও তোমার মতো গল্পের বই পড়তে ভালোবাসি। কিন্তু আমাকে আম্মু ওগুলো পড়তেই দিত না। শুধু বলত, ক্লাসের পড়া পড়ো।’

‘সব আম্মুরাই কেন এমন হয়, লালি?’ ইমার কথা শুনে লালি হেসে দিল। ইমা দেখল হাসলে লালিকে অপূর্ব লাগে। তারপর লালি বলল, ‘একবার আমার সব বই আম্মু নিয়ে নিয়েছিল। তখন আমারও খুব মন খারাপ হয়েছিল। আমাকে এখন কিন্তু আম্মু বই পড়তে দেয়। অবশ্য একটা কারণ ও আছে।’

‘কী কারণ?’ ‘আম্মু আমার বইগুলো নিয়ে নেওয়ার পর আমি ক্লাসের পড়া পড়তে লাগলাম। কারণ, আম্মু চায় আমি পড়াশোনা করি। তো যখন পরীক্ষা দিলাম রেজাল্ট দেখলাম যে আমি এ+ পেয়েছি। আম্মু তো ভীষণ খুশি। এরপর থেকে আমাকে গল্পের বই পড়তে দেয়। অবশ্য আমি ওগুলো শুধু আমার অবসর সময়ে পড়ি।’

‘লালি, তাহলে আমি কী করব?’

লালি হেসে বলল, ‘তুমিও আমার মতোই করো।’

‘কিন্তু আমি তো বই ছাড়া থাকতেই পারি না।’

‘তুমি তো তোমার পরীক্ষার পর আরও অনেক বই পাবে। তুমি কি আরও বই চাও না?’

‘অবশ্যই চাই।’

‘তাহলে?’

‘হ্যাঁ আমিও তোমার মতো মন দিয়ে পড়াশোনা শুরু করব।’

এমন সময় ইমার আম্মু দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে ইমাকে ডাকতে লাগলেন। ইমার ঘুম ভেঙে গেল। সে বিছানায় উঠে বসল। জানালা দিয়ে দেখল, যে বাগানের অধিকাংশ ফুলই ঝরে গেছে। কিন্তু একটা গোলাপ ফুল এখনো অনেকটা তাজা রয়েছে। সন্ধ্যার হালকা কমলা আলোয় সেটাকে অপূর্ব লাগছে। ইমা দরজা খুলে বাইরে এল। তারপর তার আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘আম্মু, আমি এখন থেকে মন দিয়ে পড়াশোনা করব। কিন্তু তুমি প্রমিজ করো, আমাকে তুমি আরও অনেক বই কিনে দেবে? সেগুলো আমি পরীক্ষার পর পড়ব।’

ইমার আম্মু ওকে একটা চুমু দিয়ে বলল, ‘ঠিক আছে, প্রমিজ।’

ইমার মনটা এখন অনেক ভালো হয়ে গেল।