কিসের শব্দ

কয়েক মাস আগের ঘটনা। আমি যেখানে ঘুমাই, সেখানে আমার মাথার কাছে জানালা থাকে। আমি একটু নিশাচর প্রকৃতির। আমার সহজে ঘুম আসে না। বাসার সবাই ঘুমিয়ে গেলেও আমি জেগে থাকি। এভাবেই একদিন সবাই ঘুমাচ্ছে, কিন্তু আমি চোখ খুলে শুয়ে আছি। রাত তখন প্রায় ১২টা। হঠাৎ করেই বাইরে থেকে আমি আজব একটা শব্দ শুনতে পেলাম। কিছুটা বৈদ্যুতিক ধরনের শব্দ। শুনে মনে হলো কোথাও বোধ হয় শর্টসার্কিট হয়েছে। আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। কিন্তু কিছুই দেখতে পেলাম না। আমার মনের ভুল ভেবে শুয়ে পড়লাম। পরের দিন আবার রাত ১২টার দিকে একই শব্দ। সেদিন থেকে এ রকম শব্দ প্রায়ই শুনতে পাই। কিন্তু শব্দের উৎসটা কিছুতেই বের করতে পারি না। একদিন বাসার সবাইকে বললাম শব্দটার কথা, কিন্তু কেউ তেমন গুরুত্বই দিল না। একদিন আমার ছোট বোনও শুনতে পেল শব্দটা। নিয়মিত এমন শব্দ হওয়ায় আমরা দুজনই ভয় পেয়ে গেলাম। আমার মনের মধ্যে হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগল। রোজ রাত ১২টার দিকেই কেন এমন শব্দ হয়? আর হলেও কোথা থেকেই–বা হয়? বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। মনের মধ্যে একটা ভয় ঢুকে গেল, যদি কোনো বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা ঘটে যায়? যদি বিল্ডিংয়ে আগুন লেগে যায়? তাহলে কী হবে? আমি ঠিক করলাম, শব্দটার উৎস বের করেই ছাড়ব। সে উদ্দেশ্যে আমি প্রায় প্রতিদিনই জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতাম, আর বাইরে তাকাতাম। কিন্তু কিছুই দেখতে পেতাম না। একবার আবার রাত ১২টার দিকে ওই শব্দ হয়। শব্দটা শুনে আমি জানালার কাছে ছুটে গেলাম। বাইরে তাকালাম প্রতিবারের মতোই। তারপর যা দেখলাম, তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। আসলে শব্দটা আসছিল সামনের একটা বিল্ডিং থেকে। ওই বিল্ডিংয়ের নিচতলার একটা আঙ্কেল মশা মারার র‌্যাকেট দিয়ে মশা মারছিলেন। তাঁর ঘরের জানালা খোলা ছিল বলে আমরা সেটা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলাম। আঙ্কেলটার লাফিয়ে লাফিয়ে মশা মারা দেখে আমি আর আমার বোন দুজনই জোরে জোরে হাসতে শুরু করলাম। তারপর কয়েক দিন পর্যবেক্ষণের পর আমরা বুঝলাম যে সামনের বাসার ওই আঙ্কেলটা রোজ রাত ১২টার দিকে ঘুমান। আর ঘুমানোর আগে উনি মশা মারার র‌্যাকেট দিয়ে মশা মারেন। ওই বৈদ্যুতিক শব্দটা আসলে মশা মারার র‌্যাকেট থেকে হয়। রাতের বেলা শব্দ কম থাকার কারণে সেই শব্দটি আমাদের বাসা পর্যন্ত শোনা যায়। আর সেটা শুনেই আমি এত ভয় পেতাম।

লেখক: দশম শ্রেণি, সরকারি পি.এন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, রাজশাহী