খেলনার জগৎ
খুদে গাড়ির জগৎ
খেলনা গাড়ি তো সবারই প্রিয়! ছোটবেলায় গাড়ি নিয়ে খেলেছি কম বেশি সবাই। আজ চলো গাড়ি নিয়েই আড্ডা হোক। জনপ্রিয় খেলনা গাড়ির ব্র্যান্ড ‘হট হুইলস’ এর ইতিকথা জানাচ্ছেন হাসানুল ফেরদৌস।
ভ্রুম...ভ্রুম! ভ্রুম! ভ্রুউউউ...! পিপ...পিপ!
একটা লাল রঙের ফোর্ড চলছে সরু পথ ধরে। গন্তব্য বেশ দূরে। খাটের সরু চিকন রেলিং ধরে এগোনোর পর পাড়ি দিতে হবে চাদর আর বালিশ দিয়ে তৈরি আঁকাবাঁকা ও উঁচু-নিচু পথ। পার হতে হবে দুটি কাল্পনিক নদীর ফেরি। তারপর আবার চলতে চলতে এসে যাবে দাদুবাড়ি। ছোট্ট রাফির দুই আঙুলে ধরা গাড়িটা ছুটছে তো ছুটছেই!
ছোটবেলায় এই খেলনা গাড়ি দিয়ে খেলেনি, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন। ফোর্ড, রোলস রয়েস, ফেরারি, পোরশের মতো নামীদামি ব্র্যান্ডগুলোর দারুণ সব মডেল অনুকরণে তৈরি করা হয় এগুলোকে। সত্যিকারের গাড়ির মতো দেখতে হওয়ায়, এদের নিয়ে শৈশব পেরোনো বালক-বালিকাদের আগ্রহও থাকে বেশি। শুধু বালক-বালিকা বলছি কেন! অনেক প্রাপ্তবয়স্কেরও শখ আছে এগুলো জমানোর।
এসব কিছুর শুরু অবশ্য ম্যাচবক্সের হাত ধরে। দুই বন্ধু লেসলি স্মিথ ও রডনি স্মিথ মিলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গাড়ির খেলনা রেপ্লিকা বানানো শুরু করেন। ধাতু গলিয়ে ছাঁচে ফেলে তৈরি করা হতো ম্যাচবক্স গাড়ি। এসব ১৯৫৩ সালের কথা। শুধু যে গাড়িই, তা নয়! ট্রাক, ট্রাক্টর এমনকি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজ্যাভিষেকের ঘোড়ার গাড়ির আদলেও তৈরি করা হয় মডেল। হাতের মুঠোয় সহজে এঁটে যাওয়া খেলনাগুলো ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ছোটদের মধ্যে। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রতিনিয়তই নতুন নতুন গাড়ির আদলে তৈরি হতে থাকে ম্যাচবক্সের গাড়ি। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন বাজারে তারাই হয়ে ওঠে একচ্ছত্র অধিপতি।
যত দিন গড়াল, জনপ্রিয়তা বাড়ল হট হুইলসেরই। কেননা কল্পনাশক্তিকে আশ্রয় করে বানানো মডেলগুলোতে ছিল নানা রকমের আদল। কোনোটার দরজায় আগুনের শিখা আঁকা তো কোনোটার বনেটে আগুনের চরকি।
১৯৬৮ সালে এসে প্রথমবারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতার কবলে পড়তে হয় তাদের। আবির্ভাব ঘটে হট হুইলসের। আমেরিকান খেলনা কোম্পানি ম্যাটেল বাজারে আনে আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর ডিজাইনে তৈরি গাড়িগুলোকে। যদিও ম্যাটেল প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৪৫ সালে। তারা প্রথম দিকে অন্যান্য খেলনা তৈরি করত। কিন্তু ব্যবসায়িক সাফল্য ঠিক ধরা দিচ্ছিল না। বাজারে তখন লেসনির তৈরি ম্যাচবক্স গাড়ির তুমুল জনপ্রিয়তা। ম্যাটেলের উদ্যোক্তা এলিয়ট হ্যান্ডলার ভাবলেন ভিন্ন ধরনের খেলনা গাড়ি তৈরির কথা। ডিজাইনার হিসেবে সঙ্গে নিলেন জ্যাক রায়ান ও ল্যারি উডকে। প্রাধান্য দিলেন কল্পনা আর সৃজনশীলতাকে। এ দুটির মিশ্রণে তৈরি করা হলো দ্য অরিজিনাল সুইট সিক্সটিন সিরিজের প্রথম হট হুইলস গাড়ি। সত্যিকার গাড়িগুলোর থেকে এরা দেখতে বেশ আলাদা। বনেট, দরজা, ফ্রন্টভিউ—সব মিলিয়ে দেখলেই মনে হয় এরা যেন কাল্পনিক জগৎ থেকে বাস্তবে নেমে আসা দুর্দান্ত গতির কোনো গাড়ি। ব্যস, বাজিমাত! ছোটদের কল্পনার জগৎকে বশ করে ফেলা হট হুইলস যেন খেলনার জগতে স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করে দিল। এবারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমজমাট। কেউ চায় অরিজিনাল মডেলের মার্সিডিজ বেঞ্জ, আবার কারও পছন্দ সুপারকার!
তবে যত দিন গড়াল, জনপ্রিয়তা বাড়ল হট হুইলসেরই। কেননা কল্পনাশক্তিকে আশ্রয় করে বানানো মডেলগুলোতে ছিল নানা রকমের আদল। কোনোটার দরজায় আগুনের শিখা আঁকা তো কোনোটার বনেটে আগুনের চরকি। সঙ্গে বিভিন্ন রঙের খেলা তো রয়েছেই। একবার দেখলেই নজর ফেরানো দায়। হট হুইলসের নকশার অনুকরণে এখন তৈরি হচ্ছে সত্যিকারের গাড়িও। ট্রেজার হান্টস, ট্র্যাক স্টারস, মিস্ট্রি কারস, সেগমেন্ট সিরিজগুলোতে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের মডেলের সঙ্গে। ১৯৯৭–তে এসে হট হুইলস কিনে নেয় ম্যাচবক্সের তৎকালীন মালিক টাইকো টয়েসকে। ফলে ম্যাটেলের অধীন এখন তৈরি হয় ম্যাচবক্স এবং হট হুইলস। এখনো আলাদা জনপ্রিয়তা রয়েছে দুটোরই।
২০১৮ সালে হট হুইল উদ্যাপন করে ৫০ বছর পূর্তি। এর আগে ২০০৮ সালে হট হুইলসের ৪০ বছর পূর্তিতে চার বিলিয়নতম গাড়ি হিসেবে তৈরি করা হয় ১ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের হীরাখচিত বিশেষ মডেল, যেটায় ছিল ২ হাজার ৭০০টি হীরার চিপ, হোয়াইট গোল্ড দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল গাড়ির বডি এবং লাইট হিসেবে জুড়ে দেওয়া ছিল রুবির টুকরো। তো বোঝাই যাচ্ছে, কেবল ছোটরাই নয়, হট হুইলসের জন্য পাগল প্রাপ্তবয়স্কের সংখ্যাও নেহাত কম নয়!