গানই আমার প্রাণ

অলংকরণ: জাহিন যাঈমাহ্‌ কবির

কিছুদিন ধরেই আমার হেডফোনটি সমস্যা করছে। একদমই খারাপ লক্ষণ। জলদি জলদি সারাতে না পারলে খবর হয়ে যাবে আমার। কারণ, হেডফোন আমার প্রাণ না, প্রাণের অংশ।

কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় যে তার সবচেয়ে পছন্দের আইসিটি যন্ত্র কী, কেউ হয়তো বলবে কম্পিউটার, কেউ মোবাইল ফোন ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আমাকে জিজ্ঞেস করা হলে আমি বলব, হেডফোন আর এমপিথ্রি প্লেয়ার। কারণ, আমি যে বড্ড গান ভালোবাসি। ভাত ছাড়া থাকলেও গান ছাড়া আমি একটা দিনও থাকতে পারব না।

আমার এমপিথ্রি প্লেয়ারে অনেক গান আছে। আমি যদি কাউকে আন্দাজ করতে বলি, বলো তো আমার এমপিথ্রিতে কী ধরনের গান বেশি আছে? সবাই বলবে, রবীন্দ্রসংগীত অথবা নজরুলসংগীত। কারণ, আমি রবীন্দ্র ও নজরুলসংগীত গাই। এসব গান গেয়ে অনেক পুরস্কারও পেয়েছি আমি। কিন্তু না, তারা সবাই ভুল। আমার এমপিথ্রিতে কেবল ১৮টি রবীন্দ্র, ১৩টি নজরুল ও ৮টি বাংলা আধুনিক গান আছে। এ ছাড়া বাংলা কোনো গানই নেই ওখানে।

মিথ্যা মনে হচ্ছে, না? কিন্তু এটাই সত্যি! তাহলে? কী ধরনের গান শুনি আমি? হিন্দি? হ্যাঁ, হিন্দিও আছে। এই তো ৩০-৩৪ টার মতো, এর বেশি নয়। যেসব গান আমি সবচেয়ে বেশি শুনি, সেগুলো হলো ইংরেজি গান! অবাক হওয়ার মতো কিছুই নেই। কথায় আছে, ‘যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে’, একইভাবে যে রবীন্দ্রসংগীত গায়, সে ইংরেজি গানও শোনে!

ইংরেজি গান বেশি শুনি মানে এই নয় যে আমি বাংলা গান ভালোবাসি না। আসলে এখনো আমি রবীন্দ্র-নজরুল শুনি। গাই। তবে এমপিথ্রিতেও নয়। ফোনেও নয়। সিডি ও ক্যাসেটে! ইন্টারনেটেও শুনি আমি! অনেকে মনে করেন, যারা ইংরেজি গান শোনে, তারা অতি আধুনিক, বাঁকা চোখেও দেখে কেউ কেউ। আমি তা মনে করি না। কারণ, গান তো গানই, তা যে ভাষাতেই গাওয়া হোক না কেন। গানের কথা, সুর ও কণ্ঠ, আবেগ—সব সময়ই মানুষের মনে পৌঁছে যায়। তাই সব ইংরেজি গান শোনার সময়ই আমি এর কথাগুলোও মনোযোগ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করি(অনেকে শুধু গান শুনে যায়, কথা বোঝার চেষ্টা করে না, আমি সে দলে নই)।

আমি যে শুধু বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি গানই শুনি তা নয়। অন্য অনেক ভাষার গানও শুনি। যেমন বর্তমানে আমি ফরাসি ও জাপানি গানের প্রতি খুবই অনুরক্ত। এসব ভাষা জানি না বলে আমি সব গানের অর্থ ও কথা দেখে নিই। কিন্তু সব গানই এত আন্তরিকতাপূর্ণ, এত সুন্দর যে সবই আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করে। গানের প্রতিটি কথা ও সুরকে মনে হয় মুক্তো। না, মুক্তো নয়, বিকেলের মিষ্টি রোদের মতো। কথাটা সবার ভালো না-ও লাগতে পারে। কিন্তু আমার মতে, বিকেলের মিষ্টি আলোয় যেমন আশপাশের সবকিছু ঝিকমিক করে ওঠে, গানের মিষ্টি সুর ও কথায়ও তেমনি মানুষের মন ঝিকমিক করে ওঠে আনন্দে। এ জন্যই আমি গান শুনি। এক রকম, দুরকম নয়, হরেক রকম! এ জন্যই আমি যখন বলেছিলাম হেডফোন আমার প্রাণের অংশ, তা বলেছিলাম এ কারণে যে গানই আমার প্রাণ। হেডফোন তো তার অংশমাত্র!