গুড্ডুবুড়ার করোনার প্রতিরোধক আবিষ্কার

করোনাভাইরাস এল পৃথিবীতে। করোনাভাইরাস এল বাংলাদেশে। পৃথিবীতে এই রকম ঘটনা আর ঘটেনি। সারা পৃথিবী থমকে দাঁড়াল। স্কুল বন্ধ। কলেজ বন্ধ। দোকানপাট বন্ধ। বাস–ট্রেন বন্ধ। বিমান বন্ধ। সবাইকে ঘরে থাকতে হবে। বাইরে বেরোনো যাবে না। সারাক্ষণ হাত ধুতে হবে। মাস্ক না পরে বাইরে যাওয়া যাবে না। একজনের সঙ্গে আরেকজন ছয় ফুট দূরে থাকবে।

‘কেন এসব করতে হবে?’ গুড্ডুবুড়া বলল মাকে।

মা বললেন, ‘করোনাভাইরাস এসেছে তো। তাই।’

গুড্ডুবুড়া বলল, ‘ভাইরাস এসেছে। তাহলে আমার চিন্তা আছে। কিন্তু গুড্ডিবুড়ির চিন্তা নাই।’

গুড্ডিবুড়ি হলো গুড্ডুবুড়ার বোন। মা বললেন, ‘কেন, গুড্ডিবুড়ির চিন্তা নাই কেন?’

গুড্ডুবুড়া বলল, ‘ভাইরাস শুধু ভাইদের ধরবে। বোনদের ধরবে না!’

গুড্ডুবুড়াকে তো তোমরা সবাই চেনো। সে একটা ছোট্ট ছেলে। সে একদমই কিছু খেতে চায় না। না খেতে খেতে তার শরীরটা হয়ে পড়েছে দেশলাইয়ের কাঠির মতো। ছোট্ট একটা কাঠির মাথায় একটুখানি বারুদ। তবে গুড্ডুবুড়ার মাথার বুদ্ধিও গেছে শুকিয়ে। সে সারাক্ষণ বোকার মতো কাজ করতে থাকে। কথা বলতে থাকে।

তার বাবা কতগুলো হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনে আনলেন। খুব সুন্দর গন্ধ। গুড্ডুবুড়া ভাবল, এগুলো জেলি। পাউরুটি দিয়ে খেতে হয়। সকালবেলা মা তাকে পাউরুটি খেতে দিয়েছেন টোস্ট করে। সে খেতে পছন্দ করে না। সে নিজের পাউরুটিতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার লাগাল। ভাবল, আহ, কী সুন্দর কমলার গন্ধ। এটা সবারই খাওয়া উচিত। সে গুড্ডিবুড়ির পাউরুটিতে, মায়ের পাউরুটিতে, বাবার পাউরুটিতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার মাখিয়ে দিল।

সবাই মিলে নাশতা খেতে বসেছে। করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে বেশি করে খাওয়া উচিত।

সবাই পাউরুটি খাচ্ছে। বাহ, কী সুন্দর গন্ধ!

বাবা বললেন, ‘এই জেলিটার গন্ধ সুন্দর। কিন্তু স্বাদ তো ভালো না। মিষ্টি তো নাই। তার ওপর কেমন যেন জিভেতে ধরছে!’

মা বললেন, ‘কমলার জেলিটা কি নষ্ট হয়ে গেল? কমলা তো অ্যাসিডিটিক। তাই বোধ হয় জিভে লাগছে।’

গুড্ডুবুড়া বলল, ‘আগের বয়াম থেকে জেলি দেই নাই। এই ছোট্ট শিশিটা থেকে দিয়েছি।’

মা চমকে উঠলেন, ‘ওরে কী করেছিস? এটা তো জেলি নয়। এটা তো হ্যান্ড স্যানিটাইজার। এটা হাতে মাখলে হাতের জীবাণু–ভাইরাস সব মারা যায়।’

গুড্ডুবুড়া হেসে বলল, ‘বাহ। তাহলে তো আমি করোনাভাইরাসের ওষুধ আবিষ্কার করে ফেললাম। কমলার গন্ধওয়ালা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে পাউরুটি খান। পেটের জীবাণু–ভাইরাস সব মারা যাবে।’

গুড্ডিবুড়ি ওয়াক ওয়াক করতে লাগল।

গুড্ডুবুড়া টেলিভিশনে দেখল, সঠিকভাবে হাত ধোয়ার নিয়ম। প্রথমে দুই হাত ভালোভাবে ভিজিয়ে নিতে হবে। তারপর সাবান মাখতে হবে। লিকুইড সাবান হলে সবচেয়ে ভালো। তারপর দুহাতে সাবান ভালোমতো মেখে নিয়ে এক হাতের আঙুলগুলোর ফাঁকে আরেক হাতের আঙুল চালাতে হবে। সামনে–পেছনে দুই দিকেই আঙুলের ভেতরে আঙুল দিয়ে ঘষতে হবে। তারপর ডান হাত দিয়ে বাঁ হাতের বুড়ো আঙুল, তারপর বাঁ হাত দিয়ে ডান হাতের বুড়ো আঙুল ঘষতে হবে। এরপর এক হাত মুঠো করে আরেক হাতের চার আঙুলসহ পুরো হাত ডলে নিতে হবে। এক হাতের আঙুলের ডগাগুলো আরেক হাতের তালুতে ঘষতে হবে। কাজটা করতে হবে পুরো ২০ সেকেন্ড। ‘হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ’ গানটা সুর দিয়ে দুবার গাইতে হবে। তাহলে ২০ সেকেন্ড সময় পার হয়ে যাবে।

বাহ। মা–ও তাকে ব্যাপারটা হাতে–কলমে শেখালেন। গুড্ডিবুড়িও শেখাল। একদিন দেখা গেল, গুড্ডুবুড়া অনেকক্ষণ ধরে সাবান–পানি দিয়ে হাত ধুয়ে এক মিনিট পর আবার হাত ধুচ্ছে।

গুড্ডিবুড়ি বলল, ‘কী রে, তুই না একটু আগেই হাত ধুলি।’

গুড্ডুবুড়া বলল, ‌‘নারে, ভুল হয়ে গেছে। আমি না হ্যাপি বার্থ ডে গানটা গাইতে ভুলে গিয়েছিলাম।’

গুড্ডুবুড়া টেলিভিশনের খবর দেখছে। অনেকেই চিবুকে বা থুতনিতে মাস্ক পরে থাকে।

গুড্ডুবুড়া বলল, ‘বাবা, করোনাভাইরাস কি থুতনি দিয়ে মানুষের বডিতে ঢোকে?’

‘না তো। কেন?’ ‘দ্যাখো না, সবাই মাস্ক পরে আছে থুতনিতে!’

গুড্ডুবুড়া দুপুরে খেতে বসেছে। ডাইনিং টেবিলে অন্যরাও আছে। সে মাস্ক খুলছে না।

মা বললেন, ‘মাস্কটা খুলে রাখো। তা না হলে খাবে কী করে?’ গুড্ডুবুড়া একটা কেঁচি আনল। মাস্কের মুখের কাছে একটা বড়সড় ফুটা বানাল। বলল, এইবার মাস্ক পরাও থাকবে, আবার খাওয়াও চলবে। এই বুদ্ধিটা কেন সবার হচ্ছে না।

গুড্ডুবুড়ার স্কুল ছুটি। কিন্তু টিচার ক্লাস নেন অনলাইনে। গুড্ডুবুড়ার বাবার ল্যাপটপে গুড্ডুবুড়া ভিডিও ক্লাস করে। একদিন টিচার দেরি করে এলেন। বললেন, ‘সরি। আমার কম্পিউটার হ্যাং করেছিল।’

গুড্ডুবুড়া বাবাকে বলল, ‘বাবা, হ্যাং মানে কী?’

‘হ্যাং মানে ঝুলিয়ে রাখা বা ফাঁসি দেওয়া।’

গুড্ডুবুড়া টিচারকে বলল, ‘মিস, আপনার কম্পিউটারকে কে ঝুলিয়ে রেখেছিল?’

টিচার কিছুই বুঝছেন না। ‘মানে কী?’

‘আপনি বললেন, আপনার কম্পিউটার হ্যাং হয়েছিল। মানে ঝুলে পড়েছিল। কীভাবে কম্পিউটার নিজে নিজে ঝুলল?’

গুড্ডুবুড়ার এই প্রশ্নে অন্য বাচ্চারা হেসে উঠল।

গুড্ডুবুড়াদের বাড়ির পাশেই একটা গির্জা। সেটাতে ঘণ্টা বাজল।

গুড্ডুবুড়া বলে উঠল, ‘ঘণ্টা বেজে গেছে! ছুটি ছুটি!’

মা বললেন, ‘গুড্ডুবুড়া, টিফিন খেয়ে নাও।’

গুড্ডুবুড়া বলল, ‘ক্লাস যদি অনলাইনে হয়, টিফিনও আমি অনলাইনেই খেয়ে নেব।’ সে কম্পিউটারে টিফিন লিখে সার্চ দিল। কত যে ছবি এল। টিফিন ক্যারিয়ারের বাটিতে নানা রকমের খাবারের ছবি এসেছে কতগুলো। একটা স্কুলের টিফিন বক্সে কতগুলো খাবারের ছবি তার পছন্দ হলো। ভাতটা সাজিয়েছে টেডি বিয়ারের মতো করে। টেডি বিয়ারটার মুখ হাসি হাসি। স্মাইলির মতো। সে সেটা খেলা খেলা খাওয়ার মতো খেয়ে নিল।

মা বললেন, ‘টিফিন খেয়েছ?’

‘হ্যাঁ।’

‘কই, তোমার টিফিন তো পড়ে আছে। কিছুই খাওনি।’

‘আমি অনলাইনেই খেয়ে নিয়েছি, মা।’ গুড্ডুবুড়া বলল।

গুড্ডুবুড়া করোনাভাইরাস নিয়ে খুবই চিন্তিত। সে টেলিভিশনে করোনাভাইরাসের খবর দেখে। নানা কিছু শেখে। করোনাভাইরাসের যম হলো সাবান। সাবান–পানিতে এই ভাইরাস মারা যায়। সে জন্য বারবার হাত ধুতে হয়। কারণ, মানুষের অভ্যাস হলো সে বারবার মুখে–চোখে–নাকে হাত দেয়।

তাহলে শুধু হাত সাবান দিয়ে ধুলে তো হবে না। মুখ সাবান দিয়ে ধুতে হবে। নাক সাবান দিয়ে ধুতে হবে। চোখ সাবান দিয়ে ধুতে হবে।

সে বেসিনে গিয়ে সাবান দিয়ে হাত ধুলো। মুখে সাবান–পানি দিয়ে কুলি করল। নাক ধুলো সাবান–পানি দিয়ে। এবার সে বেশি করে সাবান দিয়ে চোখ ধুতে গেল। চোখে জ্বালাপোড়া শুরু হলো। সে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল।

মা ছুটে এলেন।

‘কী হয়েছে?’

‘চোখে সাবান দিয়েছি।’

‘কেন?’

‘করোনাভাইরাস পরিষ্কার করতে!’

মা তাড়াতাড়ি করে বেশি করে পানি দিয়ে তার চোখ ধুয়ে দিতে লাগলেন।

এরপর গুড্ডুবুড়া ভাবল, বাবা তো প্রায়ই বাইরে যান। এসেই বাবা কাপড়চোপড় ধুতে দেন। গোসল করে ফেলেন। মাস্ক ফেলে দেন। কিন্তু বাবা তো তার মোবাইলটা ফেলে দেন না। এটাও সাবান–পানি দিয়ে ধোয়া দরকার।

সে বাবার মোবাইল নিয়ে একটা মগে রাখল। মগে পানি ভরল। তারপর সাবান দিয়ে ঘষে ঘষে, ডলে ডলে মোবাইল পরিষ্কার করতে লাগল।

মোবাইলটা নষ্ট হয়ে গেল।

বাবা ভীষণ দুঃখ পেলেন। আমার এই ছেলেটা এত বোকা কেন?

গুড্ডুবুড়া পৃথিবী থেকে করোনাভাইরাসের বিপদ দূর করবেই। কাজটা তাকে শুরু করতে হবে বাসা থেকে।

এর আগে সে জেলি ভেবে পাউরুটিতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার মেখে রেখেছিল।

এবার সে ভাবল, সবাই যদি সাবান খায়, তাহলেই তো করোনাভাইরাস আর শরীরে সুবিধা করতে পারবে না।

সে করল কী, সকালের নাশতায় পাউরুটির ভেতরে সাবানের টুকরা কেটে কেটে রাখল। মনে হচ্ছে যেন পনির বা চিজ।

সঙ্গে সে বেশি করে টমেটোর সস লাগিয়ে দিল। মরিচের সসও দিল। যাতে কেউ খাবার সময় ধরতে না পারে। আর সাবানটা ছিল লেবুর গন্ধযুক্ত কাপড় কাচা সাবান।

ফলে সকালের নাশতাটা সবাই আরাম করেই খেল। বাবা খেলেন। মা খেলেন। গুড্ডিবুড়ি খেল। গুড্ডুবুড়া তো খেলোই।

একটু পরে দেখা গেল, সবার নাক দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে। মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে। পেশাবের সঙ্গে ফেনা বের হচ্ছে।

ব্যাপার কী। বাবা ফোন করলেন ডাক্তার আঙ্কেলকে। ‘ভাই, আমার ফ্যামিলির সবার নাক–মুখ দিয়ে ফেনা বেরোচ্ছে। আমরা কি মারা যাচ্ছি?’

শুনে গুড্ডু বলল, ‘মারা যাচ্ছ না। করোনাভাইরাস মারা যাচ্ছে।’

‘এই গুড্ডু তুই আবার কী বলিস?’

গুড্ডুবুড়া বলল, ‘আমি করোনাভাইরাস মারার জন্য সবার স্যান্ডউইচে সাবানের টুকরা দিয়ে দিয়েছিলাম।’

বাবা বললেন, ‘ডাক্তার সাহেব, আমার এই ছেলেটাকে নিয়ে আমি কী করি?’

ডাক্তার সাহেব বললেন, ‘আপনি আপনার ছেলেকে দিন।’

ল্যাপটপে ভিডিও কনফারেন্স হচ্ছে। টেলিমেডিসিন।

গুড্ডুবুড়া বলল, ‘ডাক্তার আঙ্কেল, আমি আমাদের বাসাকে করোনামুক্ত করেছি। সবাই সাবান খেয়েছে। আর কারও করোনাভাইরাস হবে না।’

ডাক্তার বললেন, ‘তুমি সবাইকে নিয়ে ভাবছ, এটা খুব ভালো কথা। কিন্তু বাবা, তোমার একটা সমস্যা আছে। শুনেছি, তুমি খাওয়াদাওয়া কিছু করো না। না খেলে অনেক বিপদ। তোমাকে নানা রোগশোকে ধরবে, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলেও তোমাকে প্রচুর খেতে হবে। ভাত খেতে হবে, রুটি খেতে হবে, মাছ খেতে হবে, মাংস খেতে হবে, শাকসবজি খেতে হবে, দুধ, দই খেতে হবে, ফলমূল খেতে হবে। বাদাম খেতে হবে। লেবু খেতে হবে। পানি খেতে হবে। তাহলে তোমার শরীর সুস্থ থাকবে। তখন তোমার মাথার ব্রেনও কাজ করবে। আর প্রচুর খেলবে।’

‘আমি তো খেলি।’

‘কী খেলো?’

‘ভিডিও গেমস।’

‘না। ভিডিও গেমস খেললে হবে না। তাতে বরং তোমার চোখ নষ্ট হবে, মাথার ওপরে চাপ পড়বে। তোমাকে দৌড়াদৌড়ি, ছোটাছুটি করতে হবে। আর একটু একটু করে গায়ে রোদ লাগাতে হবে। ভিটামিন ডি কিন্তু করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ভালো কাজ করে। বুঝেছ?’

‘জি আচ্ছা।’

গুড্ডুবুড়া ঠিকভাবে খেতে লাগল। সে ভাত খায়, মাছ খায়, মাংস খায়। সে দুধ খায়, দই খায়। সে ফল খায়। শাকসবজি খায়। সে লেবু খায়। পরিমাণমতো পানি খায়। আর রোজ বিকেলে দেড় ঘণ্টা খেলে। গুড্ডিবুড়ির সঙ্গে লুকোচুরি খেলে। বাড়ির আঙিনায় গিয়ে বউচি খেলে। ব্যাডমিন্টন খেলে।

তার স্বাস্থ্য ভালো হতে লাগল। মাথার বুদ্ধিও গেল খুলে।

এখন সে আর বোকা গুড্ডুবুড়া নয়। এখন সে চালাক গুড্ডুবুড়া।

এবার সে গভীরভাবে ভাবতে লাগল, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে কীভাবে মানুষকে রক্ষা করা যায়। সে ভাবে আর ভাবে।

সে ভেবে দেখল, করোনাভাইরাস মানুষের শরীরে ঢোকে মাত্র তিনটি অঙ্গ দিয়ে তা হলো মুখ, নাক ও চোখ। তাহলে এই তিনটা জিনিস যদি ঢেকে রাখা যায়, তাহলেই তো আর করোনাভাইরাস শরীরে ঢুকবে না।

সে তার সায়েন্স টিচারকে ফোন করল। তাঁর নাম শামসুল আলম এমএসসি।

সে বলল, ‘স্যার, আমরা যদি নাক–চোখ–মুখ দিয়ে করোনাভাইরাস ঢুকতে না দিই, তাহলেই তো আমাদের আর কোভিড হবে না? কী বলেন?’

স্যার বললেন, ‘তাই তো।’

‘তাহলে স্যার, আমরা কেন মহাকাশ যাত্রীদের মতো করে সারা শরীর ঢেকে রাখার চেষ্টা করছি?’

‘তাই তো। ভাবার মতো বিষয়!’

‘আমরা যদি স্যার এমন একটা জিনিস বের করতে পারি, যা চোখ–নাক–মুখ তিনটাকেই ঢেকে রাখবে, এমনভাবে ঢাকবে যাতে করোনাভাইরাস ঢুকতে না পারে, আবার আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাসে অসুবিধা না হয়, কাজকর্মেও অসুবিধা না হয়, তাহলেই তো হয়ে যায়। আর আমরা বাইরে থেকে এসে আমাদের কাপড়চোপড় সাবান–পানিতে ভিজিয়ে দেব। আর নিজেরা সাবান দিয়ে গোসল করে নেব।’

‘তা করা যাবে। কিন্তু আমাদের নাকে–মুখে–চোখে ভাইরাস না ঢোকার বুদ্ধিটা কী হবে ভাবছ?’

‘আমি স্যার একটা ডিজাইন করছি। আপনাকে পাঠাচ্ছি।’

‘স্যার বললেন, আচ্ছা পাঠাও।’

গুড্ডুবুড়া কম্পিউটারে বসে একটা সুন্দর ডিজাইন বানাল। জিনিসটা একটা হেলমেটের মতো। পুরো মাথাটাকে ঢেকে রাখবে। এটাকে বসানো হবে কাঁধের ওপরে। নরম রাবারের একটা ভিত্তির ওপরে। যেটা এয়ারটাইট হয়ে লেগে থাকবে বডির সঙ্গে।

সে পুরো ব্যাপারটা এঁকে পাঠিয়ে দিল তার বিজ্ঞান স্যারকে।

স্যার বললেন, গুড্ডু, ‘তোমার প্রজেক্ট ভালো হয়েছে। এখন তুমি কতগুলো প্রশ্নের উত্তর দাও।’

‘শ্বাসপ্রশ্বাস নেবে কীভাবে?’

সে বলল, ‘দুভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়। হেলমেটের পেছনের দিকে, ওপরের দিকে অনেকটা জায়গাজুড়ে এন–নাইনটি ফাইভ মাস্কের কাপড় বসানো থাকবে। যেহেতু এটার আকার হবে এখনকার এন-নাইনটি ফাইভ মাস্কের চেয়ে অনেক বড়, আর এটা মুখের সঙ্গে লেপ্টে থাকবে না, ফলে এই হেলমেটের ভেতরে শ্বাস নেওয়া অনেক সহজ হবে।’

স্যার বললেন, ‘গুড। তোমার আইডিয়া ঠিক আছে। এবার বলো, মানুষ যখন এটা পরে থাকবে, তখন সে কথা বলবে কী করে? তার কথা আমরা শুনব কী করে? আমাদের কথাই–বা সে শুনবে কী করে? সে কি মোবাইলে কথা বলতে পারবে?’

গুড্ডুবুড়া বলল, ‘আমরা যদি দুই কানের কাছটাতেও এন–নাইনটি ফাইভের কাপড় দিয়ে দিই, আর নাক–মুখের কাছটাতেও একই রকমের কাপড় দিয়ে দিই, তাহলে কথা শোনা আর বলা এখনকার মাস্কের চেয়ে অনেক সহজ হবে।’

‘কিন্তু বাবা, আরেকটা সমস্যা হবে। তুমি কি তা ভেবেছ?’

গুড্ডুবুড়া বলল, ‘হ্যাঁ। আরেকটা সমস্যার কথা আমি ভেবেছি। তা হলো মুখের জলীয় বাষ্প কাচটাকে ঘোলা করে ফেলতে পারে। তাতে দেখার অসুবিধা হবে।’

‘রাইট।’

‘সে ক্ষেত্রে চিপস বা বাদামের প্যাকেটে যে জলীয় বাষ্পনিরোধক ছোট ছোট প্যাকেট দেওয়া হয়, সেগুলো আমরা দিয়ে রাখব।’

শামসুল আলম স্যার চিৎকার করে উঠলেন, ‘ইউরেকা। ইউরেকা।’

অনলাইনে একটা স্কুল সায়েন্স ওয়ার্ল্ড অলিম্পিয়াড হচ্ছে। গুড্ডুবুড়ার এই প্রজেক্ট সেখানে সাবমিট করা হলো।

ওরা অধীর আগ্রহে দিন গুনছে। ১৪ দিন পর জানা যাবে, তার প্রজেক্ট মনোনীত হয়েছে কি হয়নি।

১৫ দিনের মাথায় ই–মেইল এল। গুড্ডুবুড়া দেখার আগেই ই–মেইল দেখে ফেললেন শামসুল আলম স্যার। তিনি চিৎকার করে উঠলেন, ‘হিপ হিপ হুর রে। থ্রি চিয়ার্স ফর গুড্ডুবুড়া।’

গুড্ডুবুড়ার প্রজেক্ট অনলাইন সায়েন্স অলিম্পিয়াডে প্রদর্শিত হচ্ছে।

কপিরাইট বা মেধাস্বত্ব গুড্ডুবুড়ার।

কদিন পরে একটা কোম্পানি আমেরিকার শিকাগো থেকে যোগাযোগ করল গুড্ডুবুড়ার সঙ্গে। ‘আপনার করোনাভাইরাস প্রটেক্টিভ হেলমেটটা আমরা বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করতে চাই। আপনার সঙ্গে আমরা কন্ট্রাক্ট করব। প্রতিটা হেলমেট বিক্রি হবে ১০০ ডলারে। আর প্রতিটার জন্য আপনি পাবেন ১০ ডলার। আপনি কি রাজি?’

গুড্ডুবুড়া কিছুই বুঝছে না।

স্যার বললেন, ‘রাজি হওয়াই তো উচিত।’

এই রকম দোনোমনা করতে করতেই দুদিন চলে গেল। তখন আরেকটা ই–মেইল এল। ‘আপনাকে প্রথমেই আমরা ১০ হাজার ডলার পাঠিয়ে দেব। এরপর প্রতিটা হেলমেট থেকে আপনি টেন পারসেন্ট করে পেতে থাকবেন!’

গুড্ডুবুড়া রাজি হলো। তার গার্জিয়ান হিসেবে তার বাবা এবং টিচারও সম্মতিপত্র পাঠিয়ে দিলেন।

আমেরিকার নিউ সায়েন্স পত্রিকায় গুড্ডুবুড়ার বড় ছবি ছাপা হলো।

ওই হেলমেটটা বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে সাড়া পড়ে গেল। সবাই হেলমেটটা কিনছে। আর সবাই পেয়ে গেল মুক্তির আনন্দ। কাউকে আর ঘরে বসে থাকতে হচ্ছে না।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন ধরল গুড্ডুবুড়াকে। ‘আপনার এই আবিষ্কার কপিরাইটমুক্ত করে দিন। এটা সব দেশেই তো বানানো যাবে। সিম্পল প্রযুক্তি।’

তত দিন গুড্ডুবুড়ার বাবা কয়েক কোটি টাকা পেয়ে গেছেন।

গুড্ডুবুড়া বলল, ‘অবশ্যই। আমি মানুষের উপকার করতে চেয়েছি। টাকা দিয়ে আমি কী করব? এটা সবাই ব্যবহার করতে পারবে।’

গুড্ডুবুড়াকে নিয়ে সারা দেশে কী মাতামাতিটাই না হচ্ছে। তোমরা কল্পনাও করতে পারবে না।