চ্যালেঞ্জ

অলংকরণ: রাকিব রাজ্জাক

তিন-চার দিন ধরে ভাবছি, খুব ভোরে একদিন সাইক্লিং করতে বের হব। যে-ই ভাবা সে-ই কাজ। আজ সকাল ঠিক ছয়টায় (গল্পটি যখন লিখছি তখন সাড়ে আটটা বাজে) বের হলাম সাইকেল নিয়ে। সবাই তখন গভীর ঘুমে মগ্ন। ঠিক ৬টা ২৮ মিনিটে দেখলাম আকাশে হালকা মেঘ করেছে। তখন অতটা গুরুত্ব দিইনি। কয়েক মিনিটের মধ্যে দু-এক ফোঁটা করে বৃষ্টি পড়তে লাগল। তখন আমি বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে। সেখানে আর একটা রাস্তা ছিল বাড়ি যাওয়ার, তবে ওদিক দিয়ে গেলে দুই কিলোমিটারের জায়গায় চার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে। ভাবলাম, সময়টাকে একটু চ্যালেঞ্জিং করে তুলি। সে অনুযায়ী কাজও শুরু করলাম। এক মিনিট পর বুঝলাম সময়টা আসলেই চ্যালেঞ্জিং। ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার বেগে বাতাস শুরু হলো। রাশি রাশি মেঘ তখন আমার পেছনে। দু-এক মিনিটের মামলা। শুরু হলো অঝোরধারায় বৃষ্টি। কালবৈশাখীতে আমার এগোতে বেগ পেতে হচ্ছিল। আর একটু হলেই বড় রাস্তা। এখান থেকে এক কিলোমতো এগোলেই বাড়ি। আর মাত্র তিন-চার মিনিট। কিন্তু কালবৈশাখী কি আর সময় বোঝে? বাতাস আর বৃষ্টি আরও জোরে বইতে শুরু করল। যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে। কে কার আগে আমাকে ঘায়েল করতে পারে। আমার মাথায় তখন ঝড়ের চেয়েও বেশি বেগে চিন্তা শুরু হয়ে গেছে, ‘বাসায় গিয়ে কী দেখব, আম্মু কি উঠেছে? যদি বাসায় আর পৌঁছাতেই না পারি? যদি পৌঁছেও যাই তাহলে এক ঘণ্টা পর কোথায় থাকব ইত্যাদি। ঠিক তখন আমার মনে হলো, আরে বিদ্যুৎও তো চমকাচ্ছে। বজ্রপাতের ভয় নাকি হ্যালুসিনেশন বুঝলাম না, আমার পা যেন জেট ইঞ্জিনের রূপ নিল। সাইকেলে মিটার লাগানো থাকলে নিশ্চয়ই ফেটে যেত। এত সব চিন্তা আমার মাথায় ঘুরল সর্বোচ্চ ১০ সেকেন্ডে। কয়েক মিনিট পরে আমি বাসায় পৌঁছালাম। সাইকেল গ্যারেজে রেখে দুরু দুরু বুকে বাসায় ঢুকে দেখি...সবাই ঘুমিয়েই আছে। আমার ভেতরটা জ্বালা করতে লাগল। হয়তো অসম্ভব জোরে সাইকেল চালানোর কারণে। কাগজে-কলমে হিসাব করে দেখি মোট সাইকেল চালিয়েছি ১৭ মিনিটে পাঁচ কিলো, যা আমার কাছে রেকর্ড। আজ থেকে আর এ ভুল (বৃষ্টিকে চ্যালেঞ্জ) করব না।

লেখক: অষ্টম শ্রেণি, পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, পীরগঞ্জ, রংপুর