ছোট মামা ও গজখা

অলংকরণ: আবু হাসান

বহু কষ্টে এক বিয়েবাড়ির দাওয়াতে প্রথম ব্যাচে খেতে বসেছি। মাত্রই সালাদের ছোট্ট প্লেটটা টেবিলে রেখে গিয়েছে ওয়েটার। আমিও টিস্যু দিয়ে প্লেট মুছে অপেক্ষা করছি। হঠাৎ বাঁ দিক থেকে দমকা এক বাতাসের সঙ্গে এসে নাকে লাগল কাচ্চি বিরিয়ানির কড়া গন্ধ। তাকিয়ে দেখি, বড় একটা সার্ভিং ডিশ নিয়ে আমার টেবিলের দিকেই আসছে ওয়েটার। ধোঁয়া উঠছে সার্ভিং ডিশে থাকা কাচ্চি বিরিয়ানি থেকে। সেই ধোঁয়ার মধ্য থেকে খাসির মাংসের বড় পিসগুলো যেন আমার দিকেই তাকিয়ে আছে! আর মনে মনে বলছে, পল্টু, আমাদের খেয়ে নে! পল্টু, আমাদের খেয়ে নে! টিস্যু দিয়ে প্লেটটা আবারও ভালো করে মুছলাম। আজ এই কাচ্চি বিরিয়ানির ওপর কঠিন কোপ হবে!

সার্ভিং ডিশটা টেবিলে এনে রাখল ওয়েটার। আমিও আর দেরি করলাম না। চামচ হাতে ডিশের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই পাঁচ পিস খাসির মাংস নিলাম নিজের দখলে। বাসমতী চাল আর খাঁটি ঘি দিয়ে রান্না করা হয়েছে। সুবাসই বলে দিচ্ছে সব।সালাদের প্লেট থেকে একটা লেবু নিয়ে চিপলাম দ্রুত হাতে। তারপর যেই প্রথম কোপটা দিতে যাব, ওমনি শুনলাম ছোট মামা ডাকছে, ‘পল্টু! অ্যাই পল্টু!’

ডাক শুনেও পাত্তা দিলাম না আমি। এমন সময় কোনো কিছু পাত্তা দিতে নেই। তা ছাড়া এই বিয়েবাড়িতে ছোট মামা আসবে কীভাবে? আমিই হয়তো ভুল শুনছি। ছোট্ট করে একটু মাংস ছিঁড়ে নিলাম। ইশ্! মাখনের মতো নরম হয়েছে মাংসটা। একটু ধরতেই আলাদা হয়ে চলে এল হাড় থেকে। ভেতর থেকে কী মোলায়েম একটা ধোঁয়া বের হচ্ছে। আর দেরি করা ঠিক হবে না। আমি আবার যেই মাংসের টুকরাটা মুখে দিতে যাব, তখনই প্রচণ্ড ঝাঁকিতে ভেঙে গেল ঘুমটা! তাকিয়ে দেখি ছোট মামা একদম আমার মুখের ওপর! আমাকে চোখ খুলতে দেখে খিস্তি দিয়ে বলল, ‘সেই কখন থেকে তোকে ডাকছি, আর তুই কিনা এই দিনদুপুরে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস?’

ধুর! মনটাই খারাপ হয়ে গেল! আর ১০ মিনিট পর ডাকলে এমন কী হতো? আমার এই ঘুমের জন্য তো আর দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যেত না, তাই না!

ছোট মামাকে কড়া করে কিছু একটা বলতে যাব, তার আগেই সে হো হো করে হাসতে হাসতে বলল, ‘করেছিস কী? লালা ফেলে তো পুরো বালিশ ভিজিয়ে ফেলেছিস। স্বপ্নে খুব খাওয়াদাওয়া করছিলি নাকি?’

ছোট মামার কথার জবাব দিলাম না। আমার সাধের কাচ্চি বিরিয়ানি খাওয়ার বারোটা বাজিয়ে এখন খুব মশকরা করা হচ্ছে! এমন স্বপ্ন দেখার জন্য কপাল লাগে! সেই কপাল আছে আমার! কিন্তু সেই কপালের বিরাট ফাঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে ছোট মামা! আমি কিছু না বললেও ছোট মামা বলে, ‘শোন, আমার মাথায় একটা দারুণ আইডিয়া এসেছে! একদম ইউনিক আইডিয়া!’

আমি একটা বড়সড় হাই তুলে বললাম, ‘কী তোমার ইউনিক আইডিয়া?’

ছোট মামা এবার বেশ রহস্য করে বলল, ‘সেটা তো এখনই বলব না। আগে ওঠ। হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হ। তোর মুখের কোনায় লালার দাগ লেগে আছে!’

আমি হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললাম, ‘কী, সেটা এখনই বলো!’

‘না, এখন বলব না। ফ্রেশ হয়ে ছাদে আয়। ও ভালো কথা, সাথে তোর ওই যে কী একটা বন্ধু আছে না, গাবলু না হাবলু কী যেন নাম! ওকেও নিয়ে আসিস।’

‘আমার প্রজেক্টের নাম গরিবের জন্য খাবার। সংক্ষেপে গজখা! এই প্রজেক্ট থেকে গরিব যারা তাদের প্রতিদিন বিনা মূল্যে খাবার দেওয়া হবে!’

‘গাবলু হাবলু না! ওর নাম পাবলু!’—আমি বেশ ঝাঁজের সঙ্গে বললাম আমি।

ছোট মামা তার সবগুলো দাঁত কেলাতে কেলাতে বলল, ‘ওই একই কথা! উইলিয়াম শেক্সপিয়ার বলেছেন, “নামে কী আসে যায়?” সেই সূত্রে পাবলু যেই কথা! গাবলু আর হাবলুও একই কথা!’

কথাটা বলেই খুব জ্ঞানী একটা ভাব করে ছোট মামা চলে গেল। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম আমি। ছোট মামা আবার কী ফন্দি এঁটেছে, কে জানে!

বন্ধু পাবলুকে নিয়ে ছাদে এসে দেখি এক কোনায় পাটি পেতে ঝিম মেরে বসে আছে ছোট মামা। আমাদের দেখে এক চোখ খুলে বলল, ‘চুপ করে বসে পড়! জটিল একটা হিসাব-নিকাশের মধ্যে আছি!’

এমন একটা সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলাম। একটু আগে আমার কাচ্চি বিরিয়ানি খাওয়া মাটি করে দিয়ে সে এখন ধ্যানে বসেছে! ছোট মামার কাছে গিয়ে বাচ্চাদের মতন ঢং করে বললাম, ‘ও ছোট মামা, ও ছোট মামা, বলো না কী বলবে! কী তোমার আইডিয়া?’

ঢঙে কাজ হলো। ঝিম কেটে গেল ছোট মামার। বেশ বিরক্ত হয়ে আমার দিকে তাকাল সে। কিন্তু কিছু বলল না। আমিও মনে মনে খুশি। ‘কী, কেমন লাগে এখন? তোমার যেমন লাগল একটু আগে আমারও তেমন লেগেছিল!’

আবারও চোখ বুজল ছোট মামা। তাকে বিরক্ত করার জন্য মুখ খুলব কি না ভাবছি, এমন সময় ছোট মামা চোখ খুলে বলল, ‘বুঝছিস, চরম একটা ইউনিক আইডিয়া এসেছে আমার মাথায়!’

পাবলু এবার বিরক্ত হয়ে বলল, ‘বলে ফেলো ছোট মামা! তোমার ইউনিক আইডিয়া শোনার জন্য আমার ইউনিক দুইটা কান খোলা আছে!’

‘গজখা!’

ছোট মামার কথা শুনে আমার আর পাবলুর দুজনেরই আক্কেলগুড়ুম! গজখা? সেটা আবার কী? এটা কি খায়, না মাথায় দেয়?

আমাদের চোখমুখের অবস্থা দেখে ছোট মামা হাসতে হাসতে বলল, ‘গজখা মানে কী বুঝেছিস?’

পাবলু বলল, ‘এটা কোন দেশের খাবার, ছোট মামা?’

‘এটা কোনো খাবার না! এটা একটা প্রজেক্ট! আর গজখা সেই প্রজেক্টের নাম!’

এবার আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না। ছোট মামাকে বললাম, ‘এটা আবার কেমন প্রজেক্ট? আর গজখা-ই বা কেমন নাম?’

চেহারায় বাড়তি একটা জ্ঞানী ভাব এনে বলল ছোট মামা, ‘গজখা মানে হলো গরিবের জন্য খাবার!’

আর ধৈর্য রাখতে পারলাম না আমি।

‘তুমি পুরোটা খুলে বলো তো! সেই কখন থেকে কী সব বলছ মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না!’

ছোট মামা আমার দিকে বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ‘সহজ জিনিস তুই বুঝবি না, সেটা আমি জানতাম! পারিস তো শুধু লালা ফেলে বালিশ ভেজাতে!’

ছোট মামার কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল আমার। সিদ্ধান্ত নিলাম আর কথাই বলব না। বসে রইলাম মুখ কালো করে। বলতে শুরু করল ছোট মামা।

‘আমার প্রজেক্টের নাম গরিবের জন্য খাবার। সংক্ষেপে গজখা! এই প্রজেক্ট থেকে যারা গরিব তাদের প্রতিদিন বিনা মূল্যে খাবার দেওয়া হবে!’

সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কোনো কথা বলব না। কিন্তু ছোট মামার কথা শুনে আর চুপ করে থাকতে পারলাম না।

‘তুমি প্রতিদিন গরিবদের খাবার দিবে, খুবই ভালো কথা! কিন্তু সেই খাবার তুমি পাবা কই?’

এবার হাতে তুড়ি বাজিয়ে বলল ছোট মামা, ‘এখানেই তো সেই ইউনিক ব্যাপারটা ঘটবে!’

‘কী সেই ইউনিক ব্যাপার?’

‘এই ধর প্রতিদিন তো আমাদের এলাকায় কত অনুষ্ঠান হয়। সেই অনুষ্ঠানে কত কত খাবার বেঁচে যায়। তখন সেই খাবার ফেলেও দেয় অনেকে! গজখা প্রজেক্টের কাজ হবে সেই খাবার সংগ্রহ করে এলাকার গরিব-দুঃখী যারা খেতে পায় না, তাদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া!’

পাবলু এবার ফস করে বলে উঠল, ‘আইডিয়াটা দারুণ কিন্তু ইউনিক না! ফেসবুকে এমন একটা গ্রুপ আছে। ওরাও এই কাজ করে!’

ছোট মামা এবার চোখ পাকিয়ে পাবলুর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তোদের সমস্যা কী জানিস? তোরা বড় বেশি কথা বলিস!’

আমি পাশ থেকে পাবলুকে ইশারায় বললাম ছোট মামার কথায় আর জবাব না দিতে। চুপ করে গেল পাবলু। এবার আমি খুব সিরিয়াস একটা ভঙ্গি করে ছোট মামাকে বললাম, ‘তাহলে এখন আমাদের কী করতে হবে তা-ই বলো?’

‘বেশি কিছু করতে হবে না তোদের। তোরা শুধু এই কোথায় কোন অনুষ্ঠানে কতটুকু খাবার বেঁচে গেছে, তার খোঁজ রাখবি! আর খোঁজ পেলেই সাথে সাথে আমাকে জানাবি।’

‘আমরা জানব কীভাবে যে খাবার বেঁচে গেছে? ফেসবুকে কি একটা গ্রুপ খুলব?’

ছোট মামা আবারও বিরক্ত হয়ে বলল, ‘তোদের এই এক সমস্যা। ফেসবুক ছাড়া আর কিচ্ছু বুঝিস না! আমার প্রজেক্টটা ইউনিক। আমরা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেব!’

ছোট মামার কথা শেষ হতেই পাবলু বলে উঠল, ‘ছোট মামা, আমরা তো রেস্টুরেন্টেও খোঁজ নিতে পারি। ওদেরও তো খাবার বেঁচে থাকতে পারে!’

‘গুড আইডিয়া! তাহলে আর দেরি করিস না। এখনই বের হয়ে যা। আমাদের গলির মাথায় শেষ ভরসা বিরিয়ানি হাউস নামে যেই দোকানটা আছে, সেখানে চলে যা। দ্যাখ বিরিয়ানি বেঁচে আছে কি না।’

অলংকরণ: আবু হাসান

শেষ ভরসা বিরিয়ানি হাউসের মালিক কিসমত মিয়া খুব মনোযোগ দিয়ে আমাদের পুরো প্ল্যানটা শুনলেন। তারপর পান চিবুতে চিবুতে ছপাৎ করে একদলা পিক ফেলে বললেন, ‘বিরিয়ানি তোমাগো দিলে আমার তো লোসকান হইয়া যাইব!’

পাবলু বলল, ‘লোকসান কেন হবে চাচা? আপনি তো বেঁচে যাওয়া বিরিয়ানি দিবেন। ওগুলো তো এত দিন ফেলেই দিতেন! আমাদের দিলে কিছু গরিব লোক খেতে পারবে!’

আবারও ছপাৎ করে একদলা পানের পিক ফেলে কিসমত মিয়া বললেন, ‘ফেলে দেই তোমাগো কে কইছে? আমি তো পরদিনের নতুন বিরিয়ানির সাথে মিলায়া দেই!’

কিসমত মিয়ার কথা শুনে আমার আর পাবলুর চোখ বড় বড় হয়ে গেল। কত বড় বদ এই লোক। এত দিন সবাইকে বাসি বিরিয়ানি খাইয়ে আসছে। বুঝলাম এই বদ লোক আমাদের কোনো উপকারে আসবে না। আমরা চলে গেলাম এলাকার একটা কমিউনিটি সেন্টারে। এখানে প্রতিদিনই কোনো না কোনো অনুষ্ঠান থাকে। নিশ্চয় প্রচুর খাবার বেঁচে যায়।

কমিউনিটি সেন্টারে ঢুকতেই দেখলাম একটা বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে। যাক, কপাল ভালো। আমাদের ঢুকতে দেখেই ষন্ডা মার্কা একটা লোক এসে বললেন, ‘অ্যাই, তোমরা কোন পক্ষ?’

আমি খুব ভাব নিয়ে বললাম, ‘আমরা গজখা পক্ষ!’

মুহূর্তেই আমাদের কপালটা খারাপ হয়ে গেল। আমাকে আর পাবলুকে ধরে নেওয়া হলো মেয়ের বাবার কাছে। তাকে জানানো হলো, আমরা নাকি বিনা দাওয়াতে খেতে এসেছিলাম! পাবলু আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল, ‘কড়া মাইর খাওয়ার জন্য রেডি হ! হাকুইল্যা দাওয়াত খাইতে আসলে খুব নাকি মারে!’

মেয়ের বাপরা অন্য সময় যতই গরম থাকুক না কেন, মেয়ের বিয়ের সময় ঠিকই নরম হয়ে যান। আমি তাকে আমাদের গজখা প্রজেক্টের কথা বলতেই তিনি আরও নরম হয়ে গেলেন। তারপর চরম লজ্জার সঙ্গে বললেন, ‘তোমাদের অবশ্যই খাবার দিতাম! কিন্তু হয়েছে কী, বরযাত্রীর আসার কথা ছিল ৫০০ জন। কিন্তু ওরা এসেছে ৭০০! তাই ২০০ লোকের খাবার শর্ট! এদিকে বাবুর্চি পালিয়েছে। এখন কী করব, তা-ই নিয়ে খুব টেনশনে আছি!’

আমি কিছু বলার আগেই পাশ থেকে পাবলু বলল, ‘টেনশন করবেন না। সামনেই শেষ ভরসা বিরিয়ানি হাউস আছে। ওখান থেকে বিরিয়ানি এনে বরযাত্রী সামাল দেন!’

পাবলুর কথায় মেয়ের বাবা খুব খুশি হয়ে উঠলেন। সঙ্গে সঙ্গে শেষ ভরসা বিরিয়ানি হাউসে লোক পাঠিয়ে দিলেন। আর আমাদের সম্মানের সহিত ছেড়ে দিলেন।

বাইরে বের হয়ে পাবলুকে একটা গাট্টা দিয়ে বললাম, ‘তুই ওই বদ কিসমত মিয়ার বাসি বিরিয়ানির কথা ওদের জানালি কেন?’

পাবলু ফিচেল একটা হাসি দিয়ে বলল, ‘দ্যাখ, ৫০০ লোকের কথা বলে যারা বাড়তি ২০০ লোক নিয়ে আসে, তারা বদ লোক! বদ লোকদের ওই বাসি বিরিয়ানি দিয়েই সমাদর করা উচিত!’

আরও কয়েকটা জায়গা ঘুরে খালি হাতে বাসায় ফিরলাম। খুব হতাশ আমরা। এদিকে বাসায় এসে দেখি নানাজান রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে আছেন। আমাকে দেখেই বললেন, ‘ফাজিলটা কই?’

বুঝলাম ছোট মামার খোঁজ করছেন তিনি। দুদিকে মাথা নেড়ে সুবোধ বালকের মতো বললাম, ‘আমি তো জানি না, নানাজান!’

পরে ঘটনা যা শুনলাম, তাতে একদম হতবাক হয়ে গেলাম আমি। ছোট মামা নাকি এক হাঁড়ি খাবার চুরি করেছে পাশের বাড়ি থেকে! চুরি করে সেটা নাকি আবার রেলস্টেশনে গিয়ে গরিবদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছে। পুরো ঘটনাটা নিজের চোখে দেখেছেন আমাদের এলাকার বিবিসি চাচা। তিনিই পাশের বাসার গেদু চাচাকে নিয়ে এসে বিচার দিয়েছেন নানাজানের কাছে।

সব ঘটনা শুনে পাবলু আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল, ‘ছোট মামা আসলেই একটা বীরত্বের কাজ করেছে! তাকে স্যালুট দেওয়া উচিত!’

আমি কড়া চোখে পাবলুর দিকে তাকাতেই চুপ করে গেল ও।

অনেক দিন হলো ছোট মামার কোনো খবর নেই। এটা নিয়ে কোনো মাথাব্যথাও নেই আমাদের। এটা নতুন কিছু নয়। এর আগেও হয়েছে এমন। নানাজানের ভয়ে অনেকবার এমন বাড়ি আসতে পারেনি ছোট মামা। কিন্তু ছোট মামার গজখা প্রজেক্টের জন্য ভালো একটা খবর আছে। সেদিনের সেই বিয়ের মেয়ের বাপ প্রতিদিনই আমাদের খাবার দিচ্ছেন। আমাদের জন্য নাকি তাঁর ইজ্জত বেঁচে গেছে! আমরা এখন খুবই ব্যস্ত থাকি। প্রতি রাতে খাবার এনে সেটা প্যাক করে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে বিলি করে আসি গরিবদের মাঝে।

আজও রেলস্টেশনে খাবার বিলি করছিলাম। হঠাৎ এক লোক আমার নাম ধরে ডেকে বললেন, ‘আমাকে আরও একটা প্যাকেট দে পল্টু! দুই দিন ধরে না খেয়ে আছি!’

আমি চমকে উঠে তাকিয়ে দেখি, ছোট মামা হাত বাড়িয়ে আছে। আমি চিত্কার করে ছোট মামাকে জড়িয়ে ধরলাম। ছোট মামা বলল, ‘আব্বার মাথা এখন কেমন রে?’

‘খুবই গরম!’

‘আর আমার গজখা প্রজেক্ট কেমন চলছে রে?’

‘খুব ভালো চলছে, ছোট মামা! নিজের চোখেই তো সব দেখছ, আমরা একদম সত্যিকারের গরিবদের মাঝে খাবার বিলি করছি! এই যেমন তোমাকে আজ খাবার দিতে পারলাম!’

আমার কথা শুনে ছোট মামা চোখ পাকিয়ে আমার দিকে তাকাল। আমিও ব্যস্ততার ভান করে সরে এলাম দ্রুত।