জন্মদিনে সারপ্রাইজ

অলংকরণ: রাকিব রাজ্জাক

স্কুল শুরু হওয়ার দুই ঘণ্টা আগেই সবাই ক্লাসে চলে এসেছে। কারণ আর কিছুই নয়, আজ ওদের প্রিয় শিক্ষক মতিন স্যারের জন্মদিন। প্রিয় শিক্ষকের জন্মদিন বলে কথা। তাই তাঁকে সারপ্রাইজ দিতে চায় তারা। সে জন্য সবাই আজ তাড়াতাড়ি স্কুলে এসে ক্লাসরুম সাজানো শুরু করেছে। সাজানো শেষ হওয়ার পর ক্লাসরুমের চেহারা পুরো পাল্টে গেল। সবার মধ্যে উৎসব উৎসব ভাব এসে গেল।

* * * * *

সময় যেন আর কাটতেই চায় না। সবাই দুরুদুরু বুকে স্যারের জন্য অপেক্ষা করছে। স্যার আসামাত্রই সবাই একসঙ্গে ‘হ্যাপি বার্থডে’ বলে চেঁচিয়ে উঠবে, সে রকমই তাদের প্ল্যান। স্যারকে চমকে দিয়ে কী মজা হবে, সেটা ভেবে অনেকেই মুখটিপে হাসা শুরু করেছে। কিন্তু ক্লাস শুরু হওয়ার নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে আরও ১০ মিনিট বেশি হয়ে গেল। কিন্তু স্যারের দেখা নেই। সবাই ভেতরে ভেতরে অধৈর্য হয়ে উঠছে। আরও কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর সবাই দেখতে পেল, হেড স্যার তাদের ক্লাসের দিকে আসছেন। সবাই হঠাৎ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল এই ভেবে যে মতিন স্যার কী আজ কোনো কারণে স্কুলে আসেননি?

হেড স্যার ক্লাসে ঢুকে চারদিকে তাকিয়ে থতমত খেয়ে গেলেন। বললেন, ‘এখানে কী হচ্ছে?’

সবাই প্রায় একসঙ্গে বলল, ‘আমরা মতিন স্যারকে তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে সারপ্রাইজ দিতে চাই। তিনি কোথায়? আসেননি?’

হেড স্যার কেমন জানি গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘আসছিলেন।’

হেড স্যারের গলায় কিছু একটা ছিল, যেটা শুনে সবাই হঠাৎ নীরব হয়ে গেল। একজন জিজ্ঞেস করল, ‘আসছিলেন মানে?’

মুহূর্তের মধ্যে হেড স্যারের মুখের গম্ভীর ভাবটা কেটে গিয়ে দুচোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। তিনি কাঁদতে কাঁদতে ধরা গলায় বললেন, ‘তোমাদের মতিন স্যার আজ স্কুলে আসার সময় ট্রাকচাপা পড়েছেন আর...’ এতটুকু বলতেই তিনি আরও জোরে কেঁদে উঠলেন। ক্লাসের সবাই একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে গেল। সবাই যেন একমুহূর্তের জন্য ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। হঠাৎ মতিন স্যারের জন্মদিন উপলক্ষে সাজানো একটা বেলুন ‘ঠাস’ করে ফেটে পড়ে গেল। সবাই চমকে উঠে সেদিকে তাকাল; কিন্তু কারও মুখে কোনো আওয়াজ নেই। শুধু সবার দুচোখ থেকে স্বচ্ছ পানির ফোঁটা গাল বেয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ফটিকছড়ি করোনেশন সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম