‘জু’

অলংকরণ: রাকিব রাজ্জাক

প্রতিবছর এই দিনে সব দুষ্টুমি বাদ দিয়ে একেবারে ভদ্র হয়ে যায় বাচ্চারা, কেননা এই দিনে বিশাল রুপালি এক স্পেসশিপে ছয় ঘণ্টার জন্য শিকাগোতে অবতরণ করে প্রফেসর হুগোর আন্তগ্রহ চিড়িয়াখানা।

বেলা পড়ে যাওয়ার আগেই অনেক ভিড় জমে যায়। শিশু আর প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ই লাইন ধরে এক ডলারের টিকিট কেটে প্রফেসর হুগোর ভিনগ্রহ থেকে আনা বিচিত্র প্রাণী দেখার জন্য উত্সাহে অপেক্ষা করে।

নিরাশ করেন না প্রফেসর। এর আগে তিনি ভেনাসের তিনপেয়ে জন্তু, মার্সের লম্বা কিন্তু বেতের মতো চিকন মানুষ কিংবা অন্য এক গ্যালাক্সির সাপের মতো পৈশাচিক জন্তু নিয়ে এসেছিলেন। বরাবরের মতো এ বছরও শিকাগোর একটি বড় পার্কিং এরিয়ায় অবতরণ করেছে স্পেসশিপটা। সবাই বিস্ময়ের সঙ্গে দেখল, শিপের সামনে সেই পরিচিত মোটা গরাদের খাঁচা। তার ভেতরে ছোট বুনো প্রজাতির ঘোড়ার মতো কিছু প্রাণী। সেগুলো নিজেদের মধ্যে তীক্ষ্ণ স্বরে কথা বলছে এবং অবিশ্বাস্য দ্রুততায় খাঁচার ভেতর ছোটাছুটি করছে। অপেক্ষমাণ মানুষদের জটলা থেকে দ্রুত টাকা তুলে ফেলল প্রফেসরের সহকারী।

পৃথিবীবাসী স্বাগত! পরিচিত রংবেরঙের আলখাল্লায় মাইক্রোফোন হাতে জনসমক্ষে এলেন প্রফেসর হুগো। তাঁর কথা শুনে চুপ উপস্থিত সবাই, ‘পৃথিবীবাসী, এ বছর কেবল এক ডলারের বিনিময়ে আপনাদের মনোরঞ্জনের জন্য একদল অসাধারণ প্রজাতি এনেছি। যাদের সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। দশ লাখ মাইল দূরের কান গ্রহের ক্ষুদ্রাকৃতির ঘোড়া–মাকড়সা অভিবাসী। তাই আসুন, দেখুন, শুনুন তাদের কথা। ভালো লাগলে নিজেদের বন্ধুদেরও জানান। তবে জলদি! আমার স্পেসশিপ কেবল ছয় ঘণ্টার জন্য এখানে থাকবে।’ ধীরে ধীরে উত্সুক জনতা আসতে থাকল। নিখাদ আতঙ্ক ও বিস্ময়ের সঙ্গে তারা উপভোগ করল কান গ্রহের বিচিত্র প্রজাতি, যারা ঘোড়ার মতো দেখতে কিন্তু মাকড়সার মতো খাঁচাজুড়ে দৌড়াচ্ছে। ‘এক ডলার উশুল’, একজন বলল, ‘যাই, বাসা থেকে বউকে নিয়ে আসি।’

দিনভর প্রদর্শনীতে কমপক্ষে ১০ হাজার দর্শক ভিড় করল। কিন্তু ঠিক ছয় ঘণ্টা পর, প্রফেসর আবার মাইক্রোফোন তুলে নিলেন, ‘আমাদের এখন যেতে হবে। কিন্তু আমরা ফিরে আসব সামনের বছরের এই দিনে, আপনাদের এই বছরের চিড়িয়াখানা পছন্দ হয়ে থাকলে অন্য শহরের বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না। কাল আমরা থাকব নিউইয়র্কে। এর পরের সপ্তাহে লন্ডন, প্যারিস, রোম, হংকং এবং টোকিও। তারপর চলে যাব অন্য কোনো গ্রহে!’

সবার উদ্দেশে হাত নেড়ে স্পেসশিপে প্রফেসর হুগো বিদায় নিলেন। উপস্থিত জনতা বলে উঠল, ‘এটাই ছিল আমার দেখা শ্রেষ্ঠ চিড়িয়াখানা...।’

পৃথিবীবাসী স্বাগত! পরিচিত রংবেরঙের আলখাল্লায় মাইক্রোফোন হাতে জনসমক্ষে এলেন প্রফেসর হুগো। তাঁর কথা শুনে চুপ উপস্থিত সবাই, ‘পৃথিবীবাসী, এ বছর কেবল এক ডলারের বিনিময়ে আপনাদের মনোরঞ্জনের জন্য একদল অসাধারণ প্রজাতি এনেছি।

দুই মাস পর। আরও তিনটি গ্রহ ঘুরে প্রফেসর হুগোর স্পেসশিপ ল্যান্ড করল কান গ্রহের রুক্ষ জমিনে। ঘোড়া-মাকড়সা প্রজাতির প্রাণীগুলো তাদের খাঁচা থেকে বেরিয়ে পড়ল। প্রফেসর তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলেন, ঘোড়া-মাকড়সারা তাদের ঘরের উদ্দেশে চলে গেল।

‘অনেক দিন হয়েছে তোমরা গেছ। কেমন লাগল?’ একটা স্ত্রী প্রাণী তার স্বামীকে জিজ্ঞেস করল, ‘অনেক মজা করেছি। বিশেষ করে বাবু অনেক মজা পেয়েছে।’ ‘হ্যাঁ, আমরা আটটি গ্যালাক্সিতে গিয়েছি।’ বাচ্চাটি বলে উঠল, ‘তবে বেশি মজা পেয়েছি “পৃথিবী” নামের এক জায়গায়। ওখানের প্রাণীগুলো আজব। তারা চামড়ার ওপর অদ্ভুত কিছু “কাপড়” পরে। ও হ্যাঁ, তারা আবার দুই পায়েও হাঁটে!’

‘কিন্তু কোনো বিপদ হলে?’ স্ত্রী প্রাণীটি বলে উঠল।

‘না’, পুরুষ প্রাণীটি তাদের বিচিত্র ভাষায় বলল, ‘আমাদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সে জন্যই প্রফেসর হুগো আমাদের আলাদা করে রেখেছিলেন। পুরো ১৯ কমোক উসুল! পরের বার তোমাকেও যেতে হবে।’

বাচ্চাটা একমত হলো, ‘ এটাই ছিল আমার দেখা শ্রেষ্ঠ চিড়িয়াখানা...।’