তথ্যপ্রযুক্তি হোক কিশোরীর নতুন সম্ভাবনা

করোনার সময় ঘর থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই। কিন্তু বাইরে বের হতে না পারলেও ভার্চ্যুয়ালি অনেক কিছুই করা সম্ভব। এভাবেই ২২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ভার্চ্যুয়ালি পালিত হলো ইন্টারন্যাশনাল গার্লস ইন আইসিটি ডে বা তথ্যপ্রযুক্তিতে কিশোরী দিবস। প্রতিবছরের এপ্রিল মাসের চতুর্থ বৃহস্পতিবার সারা বিশ্বে পালিত হয় এই দিবস।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক লাফিফা জামালের উপস্থাপনায় শুরু হয় অনুষ্ঠান। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ #FreeToBeOnline হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে বিভিন্ন কার্যক্রম ও ইভেন্ট আয়োজন করে ইন্টারন্যাশনাল গার্লস ইন আইসিটি ডে পালন করছে। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ছাড়াও এই আয়োজনে যুক্ত ছিল সরকারের এটুআই প্রকল্প ও গ্রামীণফোন। আর সম্প্রচার সহযোগী হিসেবে ছিল প্রথম আলোকিশোর আলো

আলোচনা সভায় দুজন কিশোরী ও যুব প্রতিনিধি ছিলেন। তাঁরা হলেন সিএসআইডির তোছাব্বের মুনতাহা ও ইয়েস বাংলাদেশের মো. আসাদুজ্জামান। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কিশোর-কিশোরী ও যুবদের নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তিতে আগামীতে কী করা যেতে পারে, তা দারুণভাবে তাঁরা তুলে ধরেন বক্তব্যের মাধ্যমে। তা ছাড়া করোনার সময় অনলাইনে ক্লাস হওয়ায় গ্রামে থাকা কিশোর-কিশোরীরা পড়ালেখা করতে পারছে না, আর এর ফলে যে ঝরে পড়ছে অনেকেই, সেই বিষয়টিও তাঁরা সামনে নিয়ে আসেন।

আলোচনায় বলা হয়, কিশোরীদের মধ্যে সব সময়ই গণিত নিয়ে একটা ভয় কাজ করে। এই ভয় আসলেই ছোট থেকে কিংবা সামাজিক অবস্থার কারণেই কিশোরীদের মধ্যে চলে এসেছে। যে কারণে অনেক মেয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে পিছিয়ে আছে। শুধু এই একটাই কারণ, তা নয়। সামাজিক ও পারিবারিক প্রতিবন্ধকতার কারণে, কর্মক্ষেত্রে নারীর সুযোগ-সুবিধা কম, সাইবার হয়রানির শিকার—এমন বিভিন্ন ক্ষেত্রের জন্যও কিশোরী ও নারীরা পিছিয়ে থাকেন।

তারপরও কিশোরী ও নারীরা বাধা পার করে তথ্যপ্রযুক্তিতে নতুন নতুন উদ্যোগ নিচ্ছেন। বর্তমানে কিশোরীরা ভার্চ্যুয়াল জগতে তাদের প্রতিভা দেখাচ্ছে। নারীরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে, ই-কমার্স বা এফ-কমার্সের ক্ষেত্রে অনেক বেশি এগিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তাদের আরও বেশি সহযোগিতা করা উচিত বলে মনে করেন আলোচকেরা। ভবিষ্যতে কিশোরী ও নারীদের নিয়ে কীভাবে কাজ করা যায়, তথ্যপ্রযুক্তিতে যেন তাদের আরও অংশগ্রহণ থাকে, সে জন্য সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন এনজিওকে আরও বেশি কাজ করার জন্য আহ্বান জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ বলেন, এক যুগ আগে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৫৬ লাখ, এখন তা সাড়ে ১১ কোটি। এভাবেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ উইমেন আইসিটি ফ্রন্টিয়ার ইনিশিয়েটিভ (ওয়াইফাই) প্রকল্পের আওতায় ৫০ হাজার উদ্যোক্তা তৈরি করছে। তা ছাড়া সারা দেশে আট হাজার কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে ৩৫ হাজার ল্যাব স্থাপন করা হবে বিভিন্ন স্কুলে। তাই মেয়েদের বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত, প্রোগ্রামিং, কোডিং বিষয়গুলোর ওপর আগ্রহ তৈরি করার জন্য পরিবার, শিক্ষক, গুরুজনদের এগিয়ে আসতে হবে, সচেতন হতে হবে। তাহলে ‘গার্লস ইন আইসিটি’তে আরও বেশি সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। ভবিষ্যতে প্রোগ্রামিং বিষয়টি প্রাথমিক স্কুল থেকেই পড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

ভার্চ্যুয়াল এ আলোচনা সভায় আরও অংশ নেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর অর্লা মারফি, গ্রামীণফোনের প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা সৈয়দ তানভীর হোসেন, স্টার্টআপ বাংলাদেশের সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিনা এফ জাবীন, বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের সভাপতি ওয়াহিদ শরিফ ও ব্র্যাকের সিনিয়র ডিরেক্টর কে এ এম মোর্শেদ।

সবকিছু মিলিয়ে কিশোরীদের জন্য এই আয়োজনটি ছিল দারুণ এক অভিজ্ঞতা। বড়দের আলোচনা থেকে শেখার ছিল অনেক কিছুই। আলোচনা থেকে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি, কিশোরী ও নারীদের নিয়ে আমরা ভবিষ্যতে আরও বেশি কাজ করব, যা থেকে কিশোরী ও নারীরা এগিয়ে যাবে আরও। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, ইন্টারন্যাশনাল গার্লস ইন আইসিটি ডে অর্থাৎ আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তিতে কিশোরী দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করা হোক। আমরা চাই, এ ধরনের অনুষ্ঠান আরও হোক। করোনাকাল দ্রুত কেটে যাক। মুখোমুখি এ রকম অনুষ্ঠানে আমরা শিখতে চাই। জানতে চাই।