তুমি কতটা অভিমানী

‘নিজেকে খুব একলা লাগে, কেউ বোঝে না তোকে? ভুল করেছিস, ভুল করেছিস, দোষটা যে তোর চোখে!’ যাদের অভিমান একটু বেশি, তারা অনিক খানের এই ছড়ার মতো কথাবার্তা নিশ্চয় প্রায়ই শুনে থাকো। অভিমান কম–বেশি তো সবারই হয়। কিন্তু অভিমানী খেতাব চাইলেই যে কাউকে দিয়ে দেওয়া যায় না। তুমি সেটা ইতিমধ্যে পেয়েছ কি পাওনি, সেটা না হয় পরে শুনি। নিচের প্রশ্নের ঝটপট উত্তর দাও, আর স্কোর মিলিয়ে যাচাই করে নাও, তুমি কতটা অভিমানী।

অভিমান কম–বেশি তো সবারই হয়। কিন্তু অভিমানী খেতাব চাইলেই যে কাউকে দিয়ে দেওয়া যায় না।মডেল: সামিরা ও রিয়া

১. ইদানীং তোমার মন–মেজাজ একদমই ভালো থাকে না। তোমার মনে হয়, তোমার বেশ পরিবর্তন হয়ে গেছে। এ নিয়ে তোমার মাথায় যে চিন্তাটা ঘুরতে থাকে—

ক. ‘আচ্ছা, আমি এ রকম হয়ে যাচ্ছি কেন? কই আগে তো এমন ছিলাম না! নিজের কাছেই আমার নিজেকে আর ভালো লাগে না।’

খ. বয়স হলে তো একটু–আধটু পরিবর্তন আসবেই, কাজেই এ নিয়ে আবার এত ভাবার কী আছে?

গ. পরিবর্তন? কী বলেন, আপনি বলার পর আমি এখন একটু লক্ষ করব হয়তো আসলেই পরিবর্তন হয়েছে কি না!

২. ধরো, তোমার মনের মধ্যে নানান কিছু নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব দিয়ে চিন্তাভাবনার কূলকিনারা করা যাবে না। ব্যাপারটা কাছের কাউকে বললে। সে তোমার কথা উড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘আরে এইটা তো বয়সের দোষ!’ শুনে তোমার প্রতিক্রিয়া যা হয়—

ক. ‘বয়সের দোষ?’ সে যখন বলল, তখন সেটাই বিশ্বাস করব এবং এসব নিয়ে আর ভাবব না। ভাবনা এলেও বোঝাব নিজেকে—‘বয়সের দোষ’!

খ. ‘বয়সের দোষ’ বলে কথাটা উড়িয়ে দিল? আমার চিন্তাটাকে গুরুত্বই দিল না? অবশ্য আমাকে গুরুত্ব দেবেই–বা কেন? আমি কে? কেউ না তো!

গ. আমি কাউকে বলার প্রয়োজন মনে করি না। নিজের ভাবনা নিজের মধ্যেই রাখি, নিজেকে যুক্তি দিয়ে নিজেই বুঝাই।

৩. তোমাকে বুঝতে পারে এমন মানুষের সংখ্যা—

ক. কাছের মানুষেরা বোঝে। বন্ধুবান্ধব, পরিবার—এই তো পাঁচ-ছয়জনের মতো হবে। মাঝেমধ্যে ভুল বোঝে, তবে একটু গুছিয়ে বললেই আবার ঠিক বুঝে নেয়।

খ. আমাকে না বোঝার তো কোনো কারণই নেই। আমি তো ত্রিকোণমিতির কোনো অঙ্ক নই যে আমাকে বুঝবে না! যা বুঝতে দিতে চাই, তা–ই বুঝে।

গ. আমাকে? কেউ বোঝে না, একদম কেউ না! জানি, এটা শুনলে অনেকেই ভাবে, আবেগ থেকে বলছি, কিন্তু মানুষকে বোঝা এত সহজ নয়। অন্যের অবস্থায় নিজে মুখোমুখি না হলে আসলেই কাউকে বোঝা যায় না...

৪. তোমার বন্ধু তোমাকে নিমন্ত্রণ করল তার জন্মদিনে। অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখো, সে মহাব্যস্ত। তোমার সঙ্গে ‘হাই–হ্যালো’–এর বেশি কথাই বলতে পারছে না। তোমার মনোভাব যা হবে—

ক. আমার সঙ্গে যদি কথাই না বলবে, তাহলে আমাকে ডাকার প্রয়োজন কী ছিল? আমাকে কী ভাবে ও? কেক তো ভাই কম খাইনি, ওর কথা রাখতেই এসেছিলাম। ঠিক আছে, এমন অনুষ্ঠানে থাকব না। চলে যাই!

খ. ওর জন্মদিন, ও ব্যস্ত থাকবে, এটাই তো স্বাভাবিক! আমি কেকের ফ্লেভার নিয়ে চিন্তা করে সময় পার করে দেব। কিংবা অন্য কারও সঙ্গে গল্প করতে শুরু করব।

গ. একটু খারাপ লাগবে। কিন্তু তারপর ঠিকই ওর দিকটা ভেবে মেনে নেব।

৫. ইতিমধ্যেই যে ডাকনামটি তোমার কপালে জুটে গেছে—

ক. আমার কোনো ডাকনাম নাই। বাবা-মা যেটা রেখেছে, ওটা ধরেই ডাকে।

খ. ‘রোবট’ বিশেষণটা আমার নামের সঙ্গে স্থায়ীভাবে জুড়ে দিচ্ছে ওরা।

গ. ‘সেন্টি’ বলে। শুধু এ রকম বিশ্রি নামেই ডাকে তা না, মাঝেমধ্যে উপদেশও দেয়, ‘কথায় কথায় ইমো/ সেন্টি খাস না।’ আমাকে নিয়ে সবাই মজা নেয়!

৬. কিছুদিন আগেই তুমি তোমার এক বন্ধুকে অন্য আরেক বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছ। এখন তোমার চেয়েও ওদের দুইজনের সম্পর্ক বেশি ভালো। তোমার প্রতিক্রিয়া যা হবে—

ক. এটা তো নতুন কিছু না! আমাকে ছেড়ে মানুষ চলে যায়। এটাই ঘটে আমার সঙ্গে। মেনে নিয়েছি আমি।

খ. আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের সঙ্গে আমার খাতির এভাবেই হয়েছিল। হতেই পারে এমন। সেটা নিয়ে আবার প্রতিক্রিয়ার কী আছে?

গ. অস্বীকার করব না খারাপ লাগবে। কিন্তু যুক্তিযুক্ত ব্যাপার, তাই সেটা নিয়ে বেশি ভাবব না।

৭. খুব কষ্ট পেলে তোমার যে ভাবনাটা প্রায়ই আসে—

ক. কষ্ট পেলে আমি নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করি। কাজের মধ্যে থাকলে মন খারাপ ভাবটা কেটে যায়।

খ. আমার মনে হয়, আমি মরে গেলেই হয়তো ভালো হতো। আমার জন্যও, আবার সবার জন্যই।

গ. আমি ভাবতে থাকি, কষ্ট পাচ্ছি মানেই এরপরে ভালো কিছু ঘটবে আমার সঙ্গে। কারণ পুরোপুরি সুখ বা দুঃখ বলে তো কিছু নেই।

৮. তোমাকে জরুরি একটা দায়িত্ব দেওয়া হলো। তুমি কাজটা করতে গিয়ে কিছু ভুল করে ফেললে। অনেক কথা শুনতে হলো তোমাকে এ জন্য। তুমি সেটা যেভাবে নেবে—

ক. আচ্ছা, একটা মানুষ তো ভুল করতেই পারে। সেটা নিয়ে এমন অপমান করার কী আছে? একটু ভালো ব্যবহার করে বললে কী ক্ষতি হতো?

খ. আমি কোথায় ভুল করেছি, সেটা শুনব। পরবর্তী সময়ে যেন সেসব ভুল না হয়, সেবিষয়ক পরামর্শ মাথায় রাখব।

গ. আমাকে কথা শোনানো এত সহজ নয়। উল্টো কথা শুনিয়ে দিতে পারি।

৯. তোমার পছন্দের গানের কথাগুলোর মধ্যে কোন ব্যাপারটা থাকা চাই-ই চাই—

ক. গানের কথা অর্থবোধক হতে হবে। আগডুম–বাগডুম হলে হবে না।

খ. গানের কথায় ‘আমি’ ব্যাপারটা থাকতে হবে। বুঝিয়ে বলি, যেন শুনলেই মনে হয় আমার মনের কথাগুলোই সুরে সুরে কেউ গাইছে।

গ. গানের কথা যেমন খুশি হতে পারে, সুর সুন্দর হতে হবে।

১০. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কাজের কোনো স্থান, যাতায়াতের পথে বা কোনো অনুষ্ঠানে তুমি কি কখনো কেঁদেছ?

ক. বহুবার এমন হয়েছে। না চাইতেও কেঁদে ফেলেছি। নিজেকে সামলেছি আবার।

খ. এক–দুইবার হয়েছে। কিন্তু সেটা কাউকে বুঝতে দিইনি।

গ. আরেহ ধুরর! আমার চোখের পানি দেখা, আর মঙ্গলে পানির সন্ধান পাওয়া একই ব্যাপার। বিরল ঘটনা।

তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে

০–৪০: অভিমান বলে কোনো শব্দ তোমার অভিধানে নেই। এমন একটা অভিধান কোথা থেকে জোগাড় করেছ? তুমি একেবারেই অভিমানী না। তাই বলে খুব যুক্তিবাদী, সেটাও না। তোমার যেকোনো ব্যাপার উড়িয়ে দেওয়ার প্রবৃত্তি আছে। তুমি কোনো বিষয় নিয়ে বেশিক্ষণ মাথা ঘামাও না। কখনো কখনো একটু অভিমান করে দেখতে পারো, পরিমিত অভিমান মন্দ কিছু নয়!

৪৫–৭০: তুমি একটু অভিমানী, তবে সেটা কাউকে বুঝতে দাও না। যখন অভিমান হয়, তখন সেটা যুক্তি দিয়ে বিবেচনা করো। অভিমান নয়, তুমি যুক্তিটাকেই বেশি পছন্দ করো। তবে কখনো কখনো নিজের মধ্যে কষ্ট লুকিয়ে রাখতে গিয়ে মাথার মধ্যে পাঁচ শ টনের চাপ অনুভব করো। সে ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ কারও সঙ্গে নিজের বিষয়গুলো খুলে বলো, যেন বেশি কষ্ট না পাও।

৭৫-১০০: ব্যাপারটা কিন্তু বেশ সিরিয়াস। তোমাকে কেউ বোঝে না। বন্ধুরা তোমার আবেগ নিয়েও ঠাট্টা করে, খুব অল্পতেই চোখে পানি চলে আসে। তোমার যদি আসলেই এ রকম অনেক অভিযোগ থেকে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে, তুমিই প্রকৃত অভিমানী। তুমি নিজেও সেটা জানো। কিন্তু তুমি এটা জানো না, কীভাবে অভিমান নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অভিমান বা আবেগের বশে এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যেটা তোমার জন্য ক্ষতিকর হয়। যদি মনে হয় অভিমানের সঙ্গে বোঝাপড়ায় হেরে যাচ্ছ, তবে অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ গ্রহণ করো। পরিবার বা বড়দের সঙ্গে মন খুলে কথা বলো। পৃথিবীটা হয়তো এমন কঠিনও না, যতটা তুমি ভাবছ। অভিমানকে তুমি নিয়ন্ত্রণ করো, তোমাকে যেন অভিমান নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে!