নতুন স্বাভাবিকে সাইকেলের সঙ্গে

লকডাউন উঠে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। দেশের পরে দেশে, শহরের পর শহরে উন্মুক্ত হচ্ছে জীবন। মানুষ বেরিয়ে পড়ছে জীবনের ডাকে। সেই ডাকে সাড়া দিতে বেরিয়ে পড়ছেন সাইক্লিস্টরাও। এখন অবশ্য সাইকেলের পেডেল ঘুরছে ভ্রমণের জন্য নয়। বরং নিত্যদিনের প্রয়োজনেই সাইকেলে চেপে বসছেন তাঁরা। তাই গ্রামের মেঠো পথের থেকে বেশি শহুরে পিচের রাস্তাতেই সাইক্লিস্টদের সমাগম বাড়ছে। রাইড দিতে, ঘুরতে কিংবা কমিউট করতে—যেটাই বলো না কেন, আগের সাইকেল চালানোর সঙ্গে এখনকার সাইকেল চালানোর নানা দিকে কিন্তু বদল আসছে। সেসব বিষয়ে তাহলে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।

নতুন শুরু করবে যারা

শহরে কমেছে গণপরিবহন। যে গুটি কয়েক চলছে, সেটাও নিরাপদ বলা চলে না। তাই নতুন অনেকেই শুরু করতে চাইছেন সাইক্লিং। সে ক্ষেত্রে সাইকেল কেনার জন্য বেছে নিতে পারো সাধারণ রোড সাইকেলগুলো। দাম পড়বে ১২ হাজার থেকে ২০ হাজারের মতো। যানবাহন চলে, এমন রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে অভ্যস্ত—এমন কারও থেকে সাইকেল চালানো শিখে নিতে পারো। জেনে নিতে পারো রোড সাইনসহ ট্রাফিকের নিয়মকানুন। শুধু সাইকেল কেনাতেই সব টাকা খরচ কোরো না। ভালো মানের হেলমেট, গ্লাভস, হর্ন ও নিরাপত্তার জন্য লক সিস্টেম বেছে নাও বাজেট অনুসারে। এসব বিষয়ে আরও বিস্তারিত পাবে কিশোর আলোর পূর্ববতী সংখ্যাগুলোতে।

শুরু করো ধাপে ধাপে

এই পরামর্শটা নতুন-পুরোনো সবার জন্যই। শুরুতেই বাসা থেকে সাইকেল বের করেই বড় রাস্তায় উঠবে না। আশপাশের গলি কিংবা খালি রাস্তায় চালিয়ে একটু নিজের ব্যালেন্সটা ঝালিয়ে নাও। নতুনদের ক্ষেত্রে রাস্তা বুঝে গতি নিয়ন্ত্রণ করা একটু কঠিন। সে ক্ষেত্রে অন্য সাইক্লিস্টকে অনুসরণ করতে পারো। কিংবা কোনো রিক্সার পেছন পেছনও নিরাপদে চালাতে পার।

আর চালানোর আগেই সাইকেলের সব যন্ত্রাংশ ঠিকমতো কাজ করছে কি না, দেখে নাও। চাকায় পরিমিত হাওয়া আছে কি না, ব্রেক কাজ করছে কি না, চেইনে কিংবা স্পোকে মরিচা পড়েছে কি না—এসব বিষয়ে সতর্ক থেকো। প্রয়োজনে নিকটস্থ সাইকেল মেকানিকের কাছে নিয়ে যাও। সাইকেলে কোনো ত্রুটি থাকলে সেটা নিয়ে বড় রাস্তায় চলাচল করা থেকে বিরত থাকো। প্রয়োজনে টুকিটাকি সারার কাজে নিজেই ব্যবহার করতে পারো টুলবক্স।

পথে যা কিছু থাকবে মনে

‌‘সাইকেল চালাচ্ছি’, ‘কারও সঙ্গে স্পর্শ হচ্ছে না তো’—এমন অজুহাতে মাস্ক পরা বন্ধ করা চলবে না। সাইকেলে চড়ে বের হলেও মুখে মাস্ক এবং সাইক্লিং গ্লাভসের ওপর মেডিকেল গ্লাভস পরতে ভুলবে না। হেলমেটের সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা গগোলসও ব্যবহার করতে পারো। সঙ্গে অবশ্যই হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখবে। প্রতিবার সাইকেল থেকে নেমে কিংবা সাইকেল চালানো শুরু করার আগে একবার করে হাত পরিষ্কার করে নেবে।

রাস্তায় যানবাহন কম কিংবা ভিড় নেই ভেবে বেশি গতিতে সাইকেল চালাবে না। গতি যত বেশি হবে, সাইকেল থামাতে তত বেশি সময় লাগবে, যা দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা বাড়াবে। সব সময় এটা ভেবে নেবে না যে অন্য যানবাহনের চালকেরা নিয়ম মেনে চালাবে। বরং অন্যরা নিয়ম না মেনে অস্বাভাবিকভাবে রাস্তায় চালালেও কীভাবে নিজে নিরাপদ থাকবে, সেটা মাথায় রাখবে। এ জন্য সেরা উপায় হচ্ছে বাঁয়ের লেনে থেকে সোজা বরাবর সাইকেল চালানো। প্রয়োজনে লেন বদলাতে হলে পেছনে তাকিয়ে দেখে নাও কোনো যানবাহন আসছে কি না। সাইকেল চালানোর সময় ফোনে কথা বলা, সেলফি তোলা যাবে না। জরুরি ফোন এলে তুমি থামবে—সেটা পেছনের যানবাহনকে জানানোর পর বাঁয়ে নিরাপদে থেমে ফোন ধরবে।

নিরাপত্তায় আপস নয়

শুরুতেই বলেছিলাম, সাইকেল কেনার সঙ্গে সঙ্গে ভালো মানের নিরাপত্তার সরঞ্জামাদিও কেনার কথা। লকডাউনের পরবর্তী সময়ে চারপাশে মানুষের সমাগম কম। তাই সাইকেলের নিরাপত্তায় সচেতন থাকতে হবে। নিরাপদ স্থান বুঝে পার্ক করতে হবে। লক করার সময় লক্ষ রাখতে হবে যেন এমন কিছুর সঙ্গে লক করেছ, সেটা সহজে নাড়ানো না যায়। প্রয়োজনে সাইকেলে বডিলকের পাশাপাশি এসএস শিকল ব্যবহার করতে পারো।

সব শেষে ঘরে ফিরে

সাইকেলে করে ফিরলেও আগের নিয়ম কিন্তু মেনে চলতেই হবে। সাইকেলের চাকা পরিষ্কার করে রাখবে। সঙ্গে বাইরে যে পোশাক পরে গিয়েছিলে, সেটা পরিষ্কার করে গোসল সেরে নেবে। বাইরের পোশাকে ঘরে থাকা যাবে না। সাইকেলের হ্যান্ডেল ও সিটে স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করে রাখবে। খেয়াল রেখো, সাইকেলের ময়লার মাধ্যমে কোনো জীবাণু যেন তোমাকে আক্রমণ করার সুযোগ না পায়।

দূরের রাইড এখনই নয়

অফিস, প্রাইভেট কিংবা নিত্যদিনের কাজে সাইকেল নিয়ে বের হলেও দূরের রাইডের জন্য এখনো পরিস্থিতি সংকুলান নয় আমাদের। তাই সাইকেলে চেপে এখনো কোনো দূরপাল্লার রাইডের পরিকল্পনা কোরো না। অনেকে একসঙ্গে সাইকেল চালিয়ে যাতায়াত করলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। মেনে চলতে হবে করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি। না হলে তোমার নিজের এবং চারপাশের মানুষের জীবনের ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে। তাই সবটা মিলিয়ে অপেক্ষা করতে হবে আমাদের। নতুন স্বাভাবিকের ভেতর দিয়েই আমরা ফিরে যাব দুই চাকার সেই দিনগুলোতে।

তথ্যসুত্র: লাকা ডট সিও