নতুনের শুরু হোক নতুন করে

কিশোর আলোর সঙ্গে আমার সম্পর্কটা বেশ পুরোনো। কিশোর আলোর পাঠকেরা বরাবরই আমার ভীষণ প্রিয়, খুব কাছের। তাই যখনই আমাকে ওদের জন্য কিছু লিখতে বলা হয়, আমি একই সঙ্গে বেশ আনন্দিত ও বিব্রত হয়ে পড়ি। বিব্রত হওয়ার কারণ, এখনকার বাচ্চারা খুব মেধাবী আর স্মার্ট। ওরা এমনিতেই জানে অনেক কিছু। আর যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওরা এত বেশি এগিয়ে যে মাঝেমধ্যে মনে হয়, আমার নিজেরই ওদের কাছ থেকে অনেক ব্যাপারে পরামর্শ নেওয়া উচিত!

অদৃশ্য এক শত্রুর সঙ্গে লড়তে লড়তে বেশ কঠিন একটা বছর গেল আমাদের সবার জন্য। দেখতে দেখতে একটা বছর হয়তো কাটল ঠিকই, তবে লড়াইটা চলমান। যে আনন্দ, আগ্রহ, প্রত্যাশা আর অনেক পরিকল্পনা নিয়ে গত বছরটা শুরু হয়েছিল, সেগুলোর সঙ্গে বছরের শেষটা মেলাতে গেলে শুধু আফসোসই হবে। তেমনি ২০২০ আমাদের সবাইকে শিখিয়ে গেছে অনেক কিছু। সেই শেখাগুলোকে মনে রেখে বরং নতুন শুরুর গল্প করি চলো। আরেকটা নতুন বছর, মানে আরও একবার নতুন করে সব শুরু করার সুযোগ।

মোট কথা, পরিশ্রম কখনো বৃথা যায় না। এইচএসসি না হয় বাতিল হয়ে গেছে। তাই বলে ভর্তি পরীক্ষাও বাতিল হবে, এমনটা ভেবে বসলেই কিন্তু চূড়ান্ত বোকামি হবে।

করোনা মহামারি ছাপিয়ে গত বছর বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া বেশ বড় একটা ঘটনা ছিল এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল করে জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে এর ফলাফল প্রকাশ (যেটাকে মজা করে অনেকেই অটো পাস বলছে)। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ ভালোই মিম–ট্রল হচ্ছে। এটা সত্যি যে এত শিক্ষার্থীর এত দিনের পরিশ্রম যে পরীক্ষার জন্য, সেটা শেষ পর্যন্ত হয়নি। কেউ কেউ হয়তো ভেবেছিল, জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের থেকেও এবার ভালো ফলাফল করবে, কিন্তু সেই সুযোগ তারা শেষ পর্যন্ত পেল না। তবে এটাও সত্য, এতে খুব একটা খারাপ হয়েছে, আসলে তা–ও নয়। মোট কথা, পরিশ্রম কখনো বৃথা যায় না। এইচএসসি না হয় বাতিল হয়ে গেছে। তাই বলে ভর্তি পরীক্ষাও বাতিল হবে, এমনটা ভেবে বসলেই কিন্তু চূড়ান্ত বোকামি হবে। তোমার এই পড়াশোনা ভর্তি পরীক্ষায় কাজে আসবে ভালোভাবেই। তা ছাড়া একবার ভেবে দেখো, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে একটা বোর্ড পরীক্ষা অনেকটা উৎসবের মতো। একেকটা পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে কী পরিমাণ লোকসমাগম হতো বলো তো? সারা বিশ্ব যেখানে সংক্রমণ ঠেকাতে, প্রাণ বাঁচাতে ঘরবন্দী, সেখানে এমন একটা বড় পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতো? তার চেয়ে এটাই বরং ভালো হয়েছে। এটাকে তোমরা নিজেদের একটা বড়সড় ত্যাগ হিসেবে ভাবতেই পারো। এই বছরের সঙ্গে তোমাদের এই ত্যাগের কথাও মনে রাখবে সবাই—এটা মাথায় রেখে সামনের কঠিন দিনগুলোর জন্য প্রস্তুত করো নিজেকে। ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নাও কোমর বেঁধে। দেখে নিয়ো, সামনে অনেক ভালো কিছু অপেক্ষা করছে তোমাদের জন্য।

এ বছর এইচএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১৪ লাখ। পরীক্ষা হলে পাস করত অন্তত ৬০-৭০ শতাংশ। কিন্তু এখন শতভাগ পাস হওয়ায় দ্বিতীয়বারের পরীক্ষার্থীসহ লড়াই করতে হবে অনেকের সঙ্গে, যেখানে সে তুলনায় দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আসনসংখ্যা অনেক কম। তাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার রঙিন স্বপ্ন দেখলেও শেষ পর্যন্ত নিজের আসনটি অর্জন করে নিতে বসতে হবে যুদ্ধসম ভর্তি পরীক্ষায়। এই যুদ্ধে সফলতা অর্জন করতে হলে প্রয়োজন অনেক বেশি গোছানো ও সতর্ক পরিকল্পনা। তোমাদের জন্য রইল কিছু পরামর্শ।

১. শোনা কথায় ভরসা কোরো না

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে নানা মুনির রয়েছে নানা মত। সবার মতামতকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে একেবারে লেজেগোবরে অবস্থা হয় ভর্তি পরীক্ষার্থীদের। কেউ বলে বই থেকে প্রশ্ন আসে, কেউ বলে ভর্তি গাইড; কেউ বলে সাজেশন থেকে, আবার আরেকজন বলে কোচিংয়ের শিট থেকে। আর অমুক স্যারের তমুক কোচিংয়ের বিচিত্র বিজ্ঞাপনের বিড়ম্বনা তো আছেই। এসব কথায় বিভ্রান্ত হওয়ার চেয়ে নিজেই বরং একটু সময় নিয়ে গবেষণা করে দেখো না কেমন হয় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের ধরন। টেন মিনিট স্কুলের ওয়েবসাইটের অ্যাডমিশন সেকশনে গেলেই পেয়ে যাবে বুয়েট, মেডিকেল আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিগত বছরের প্রশ্নগুলো। দু-একটা মডেল টেস্ট দিলে নিজেই ধারণা পেয়ে যাবে প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে! তখন দেখবে, কারও কথায় আর বিভ্রান্ত হতে হচ্ছে না।

২. সুযোগগুলোকে খুঁজে বের করো

ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ই খুঁজে বের করো লুকিয়ে থাকা সুযোগগুলো। ধরা যাক, কারও লক্ষ্য বুয়েট অথবা আইবিএতে পড়া। সেই রকম প্রস্তুতি নিচ্ছে সে। মজার ব্যাপার হলো একই সঙ্গে বুয়েট আর আইবিএর প্রস্তুতি নিলে ‘ক’ ইউনিটের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়ে যায়। বুয়েটের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে বিজ্ঞান আর আইবিএ প্রস্তুতিতে ইংরেজি—এই দুইয়ে মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক ইউনিটের প্রস্তুতি হয়ে যায় বেশ ভালোভাবেই।

চেষ্টা করো এ ধরনের সুপ্ত সুযোগগুলোকে খুঁজে বের করে কাজে লাগানোর।

৩. ধারণা আর বাস্তবতার তফাত বোঝো

ভর্তি পরীক্ষা আসলে কতটা কঠিন?

ভর্তি পরীক্ষার আগের কয়েক মাস মাথায় সবচেয়ে বেশি ঘুরপাক খাওয়া প্রশ্ন হলো এটা। আর সত্যি বলতে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটাও বেশ কঠিন। কারণ, এই প্রশ্নের উত্তর ব্যক্তিভেদে ভিন্ন। প্রত্যেকে যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তর দেবে। কারও কাছে বুয়েটের প্রস্তুতি নেওয়া সহজ, কারোর আবার মেডিকেল, কারও ক ইউনিট আবার কারও সব ভালো লাগা আইবিএর প্রতি। আর যারা নিজেদের কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পেয়ে যায়, তাদের কাছে ভর্তি পরীক্ষা আসলে কোনো ব্যাপারই নয়। অন্যদিকে যারা ব্যর্থ হয়, তাদের কাছে এটা এক বিভীষিকার নাম।

তাই পরীক্ষা ঠিক কতটা কঠিন, সেটা না ভেবে ঠিকমতো প্রস্তুতি নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

৪. খুঁজে বের করো নিজের দক্ষতার জায়গা

ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ই ধারণা নিয়ে নাও পরীক্ষার প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে। অনেক ক্ষেত্রেই অপশন থাকে, অর্থাৎ দুটি বিষয়ের মধ্যে যেকোনো একটি বিষয় বেছে নিয়ে উত্তর করার সুযোগ থাকে। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক ইউনিটে ইংরেজি আর জীববিজ্ঞান থেকে যেকোনো একটির উত্তর করতে হয়। এসব ক্ষেত্রে প্রস্তুতির সময় থেকেই যেকোনো একটির প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।

আর তাই সত্যি সত্যিই পরীক্ষায় যেটার উত্তর করবে আর যে বিষয় নিয়ে অনেক ভালো ধারণা রাখো, সেটা খুঁজে বের করে সেটার প্রস্তুতি নাও।

৫. ধৈর্য, জেদ আর অধ্যবসায় শেষ পর্যন্ত বজায় রাখা জরুরি

ভর্তি কোচিংয়ে পড়ানোর অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এই ভর্তি পরীক্ষার সময়টা একটু নিষ্ঠুর। এ সময়ে ধৈর্য আর জেদ বজায় রাখা অনেক কঠিন। আর তাই অনেক পরীক্ষার্থী মাঝপথেই ঝরে পড়ে। ১০০ পরীক্ষার্থী নিয়ে শুরু করা একটা ব্যাচ থেকে মডেল টেস্ট দিতে পারে ৩০-৪০ জন। সেখানেও ভালো ফলাফল ধরে রাখে বড়জোর ১০ জন। তবে হ্যাঁ, এই ঝরে যাওয়া পরীক্ষার্থীদের কেউ কেউ আবার কোচিং পরিবর্তন করে ফেলে কিংবা লক্ষ্য বদলে প্রস্তুতি নেয় অন্য কোনো জায়গার। তুমি যাদের দেখতে পাচ্ছ না, তাদের সবাই যে হাল ছেড়ে দিয়েছে, এটা ভাবার কারণ নেই।

তাই হুট করে গায়েব হয়ে যাওয়া সহপাঠীদের কথা ভেবে হতাশ না হয়ে নিজের প্রস্তুতি চালিয়ে যাও।

৬. বানিয়ে নাও একটি কম্পাইল্ড রিভিশন শিট

স্কুল-কলেজে কিন্তু আমাদের প্রতিটি বিষয়ভিত্তিক আলাদা পরীক্ষা হতো। তাই প্রতিটি বিষয় আলাদা করে প্রস্তুতি নেওয়ারও সুযোগ থাকত। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষা একটা কম্পাইল্ড টেস্ট, অর্থাৎ এখানে অনেকগুলো বিষয়ের পরীক্ষা একসঙ্গে হয়। আর তাই পরীক্ষার আগে রিভিশনও দিতে হয় একসঙ্গে। এখন তোমাকে যদি আলাদা বই, গাইড, খাতা আর শিট দেখে পরীক্ষার আগে রিভিশন দিতে হয়, তাহলে বিষয়টি বেশ ঝামেলার। তাই বানিয়ে নাও একটা রিভিশন শিট, যেখানে সব বিষয়ের একদম গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলোর তথ্যগুলো থাকবে।

আর পরীক্ষার আগের রাতে এই রিভিশন শিটটা দেখলেই সব কটি বিষয়ের সব কটি টপিক কভার হয়ে যাবে।

৭. ভবিষ্যদ্বাণীতেই নির্ধারিত হোক ভবিষ্যৎ

আমাদের চিন্তাভাবনা ও ধারণার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। আমরা যদি ভাবি যে আমাদের দ্বারা সফলতা অর্জন সম্ভব, তাহলে সেটা প্রকৃত অর্থেই সম্ভব। একইভাবে আমরা যদি ভেবে বসি যে ‘আমার দ্বারা কভু কিছু সম্ভব নয়’, তাহলে সেটাও কিন্তু ভুল নয়! ব্যাপারটি ভর্তি পরীক্ষার সময়ও প্রবলভাবে প্রযোজ্য। তুমি যদি ধরে নাও যে তুমি যেখানে পড়তে চাচ্ছ, সেখানে পড়া তোমার পক্ষে সম্ভব, তাহলে দেখবে তোমার পরিবর্তন কতটা চোখে পড়ে। তোমার প্রস্তুতির অগ্রগতি কতখানি হয়। আর তুমি যদি আগে থেকেই ধরে নাও যে ভর্তি পরীক্ষার মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় তোমার ভালো করা সম্ভব নয়, তাহলে এই ভাবনার নেতিবাচক প্রভাব তোমার প্রস্তুতির অবনতি ঘটাবে। তাই মন থেকে নেতিবাচকতাকে ঝেড়ে ফেলে দাও। মন থেকে বিশ্বাস করতে শেখো যে তুমি পারবে। সফলতা আসা সময়ের ব্যাপারমাত্র!

সবশেষে বলব, যেহেতু ভর্তি পরীক্ষা অনলাইনে হবে নাকি অফলাইনে, সেটা এখনো নির্ধারিত হয়নি। তাই নিয়মিত পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজে আপডেটের জন্য খোঁজ রাখো এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নাও। অনলাইনে হলে তো হলোই, অফলাইনে হলেও যাতে হাতে সময় নিয়ে ও যথাযথ স্বাস্থ্যসতর্কতা মেনে ঢাকার বাইরের পরীক্ষাগুলোতে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে পারো। ভর্তি পরীক্ষাও দিন শেষে আর পাঁচটা পরীক্ষার মতোই সাধারণ পরীক্ষা। এটায় সফলতা কিংবা ব্যর্থতা কখনোই কারও জীবনের গতিনির্ধারক হতে পারে না। তাই স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ না পেলে ভেঙে না পড়ে স্বপ্ন দেখো নতুন করে।

এই সময়কে কাজে লাগিয়ে নিজের ইংরেজি বলার দক্ষতা বাড়াতে পারো, কমিউনিকেশন স্কিলটা ঝালিয়ে নিতে পারো, নতুন কোনো ভাষা শিখতে পারো

শুধু এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের নিয়ে কথা বলছি বলে কিশোর আলোর বাকি পাঠকেরা আবার আমার ওপর অভিমান করে বসতে পারে। গত বছরটা আমাদের প্রত্যেকেরই কেটেছে লড়াই করে। আমরা সবাই নিজেদের আগের জীবনটাকে ভীষণভাবে মিস করেছি। অথচ এই আমরাই একটা সময় মনে মনে খুব করে চাইতাম, এ রকম একটা বিশাল ছুটি যখন আমাদের ক্লাস করতে যেতে হবে না, পরীক্ষা দিতে হবে না। ইচ্ছামতো মুভি-সিরিজ দেখে, খেয়ে-ঘুমিয়ে সময় কাটানো যাবে। দেখলে তো এবার? এ বছর নতুন ক্লাসে ওঠার আনন্দটাও সেভাবে উদ্‌যাপন করার সুযোগ মেলেনি। নতুন বই হাতে নিয়ে নতুন ক্লাসে ওঠার উদ্‌যাপন করার সুযোগ হলো না এবার। অনলাইন ক্লাস করতে করতে হাঁপিয়ে গিয়েছ একেবারে। কিন্তু অনলাইন ক্লাসের সুবিধাও তো অস্বীকার করার সুযোগ নেই। সত্যি সত্যি ক্লাসে ঘুমিয়ে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ টপিক বুঝতে মিস করে গেলে সেটার জন্য স্যার বা ম্যামের পেছনে দৌড়ানোর সাহসটাই করে উঠতে পারতে না তোমাদের কেউ কেউ। কিন্তু অনলাইন ক্লাসে চাইলেই রেকর্ড করা ক্লাসটা আরও একবার শুনে নিয়ে পড়াটা ঝালিয়ে নিতে পারছ। কী চমৎকার না বিষয়টা!

সত্যি বলতে আমরা আসলে এতটা আয়েশে থেকে অভ্যস্ত নই। তাই এই ছুটি আমাদের আর ভালো লাগছে না। কিন্তু এই যে এই মহামারি যত দিন না পৃথিবী থেকে বিদায় হচ্ছে, আমাদের হাতে তো কিছু নেই। নিজের জন্য, নিজের পরিবারের জন্য, নিজের আশপাশের মানুষগুলোর নিরাপত্তার জন্য আমাদের এই ছুটি মেনে নিয়ে যতটা সম্ভব বাসাতেই থাকতে হবে। এই একটা ব্যাপার যেহেতু আমাদের হাতে আছে, এটুকু অন্তত করি চলো সবার ভালো থাকার স্বার্থে।

তোমাদের একটা ছোট্ট কাজ দিই। অনেক কিছুই তো বিশ্লেষণ করি আমরা। এবারের এই ছুটিতে বসে না হয় নিজেকে একটুখানি বিশ্লেষণ করে ফেলো। এটা আমার ভীষণ প্রিয় একটা প্রক্রিয়া। ব্যবসার ক্ষেত্রে বেশি কাজে লাগলেও এটা তোমার নিজের জন্যও অনেক কার্যকর। বলছিলাম SWOT Analysis–এর কথা। এর মাধ্যমে তুমি জানতে পারবে নিজের দক্ষতা, দুর্বলতা এবং এই দুইয়ের ওপর ভিত্তি করে তুমি কী কী সুযোগ পেতে পারো এবং কী কী সমস্যায় পড়তে পারো, সে ব্যাপারে। এখনই খাতা–কলম নিয়ে বসে যাও। আর করে ফেলো নিজেকে বিশ্লেষণ।

আর সত্যি বলতে, বাসায় থাকাটা অতটাও বিরক্তিকর নয় কিন্তু। কিশোর আলোর পাঠক কিংবা এখনকার অনেককে যখন তাদের শখ আর প্যাশনের কাজের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করি, তখন তাদের ঘুরেফিরে এক কথা, সময় নেই। এখন অন্তত এই অজুহাত দেওয়ার সুযোগ নেই। এখন হাতে সময় আছে, অন্তত যানজটে যে সময়টা যেত, সেটা তো নিজের শখ, প্যাশন কিংবা নতুন কিছু শেখার কাজে দিতেই পারো। বুকশেলফে পড়ে থাকা বইগুলোকে আরেকবার হাতে নিয়ে ধুলা ঝেড়ে পড়ে ফেলার এ রকম সুযোগ আর পাবে না। নিজের শখের বাগানটার যত্ন নেওয়া, মজার সব কেক বানানো, সুন্দর সব ছবি আঁকা কিংবা দারুণ সব সেলাই—এই কাজগুলো করার জন্য এত সময় আর না–ও পেতে পারো। এ ছাড়া এই সময়কে কাজে লাগিয়ে নিজের ইংরেজি বলার দক্ষতা বাড়াতে পারো, কমিউনিকেশন স্কিলটা ঝালিয়ে নিতে পারো, নতুন কোনো ভাষা শিখতে পারো। ধর্মগ্রন্থ পড়ার চর্চাটা শুরু করার জন্যও এর চেয়ে ভালো সুযোগ আর পাবে না। এ ছাড়া অনলাইনে অসংখ্য স্কিল ফ্রি শেখার সুযোগ আছে। নিজের শেখার পাল্লা ভারী করতে সেগুলোর কয়েকটা করেই ফেলতে পারো।

সবকিছু বাদ দিয়ে এখন চাইলেই যখন ইচ্ছা মাকে গিয়ে জাপটে ধরা যায়, বাবার সঙ্গে গল্প করা যায়, ভাইয়ের সঙ্গে ভিডিও গেম খেলা যায়, বোনকে হোমওয়ার্ক করতে সাহায্য করা যায়—এইগুলো কি কম? পরিবারের সবার সঙ্গে একসঙ্গে বসে খাওয়া, আর টিভি দেখার মতো আনন্দ এখন রোজই পাওয়া যায়, এটা কি কম? তাই গত বছরে যে সময়টা আফসোস করে কাটিয়ে দিয়েছ, সেগুলোর কথা ভুলে গিয়ে এখনকার অবসরকে কাজে লাগাও, উপভোগ করো।

যা যাওয়ার, তা তো গেছেই। পুরোনোকে ভুলে পুরোনোর দেওয়া শিক্ষা সঙ্গে নিয়ে চলো নতুন করে নতুনের শুরু করি আবার। কিশোর আলোর সব পাঠককে নতুন বছরের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। হ্যাপি নিউ ইয়ার।

মডেল: রাকিব, ফিজা, মেধা, সাদিব, রূপন্তী, ফাইজা ও প্রত্যাশা

ছবি: কবির হোসেন