আমার ছোট মামার নাম রবিন হলেও আমরা তাঁকে নিউটন মামা ডাকি। মামার বিজ্ঞানপ্রবণতা সেই ছোট থেকেই। অদ্ভুত এক স্বভাব মামার- কথায় কথায় বিজ্ঞানকে টেনে নিয়ে কথা বলেন। ব্যাপারটা তাঁর খুব পছন্দ করলেও একটু বিরক্তই হতো অন্যরা। একদিন আমাদের ভাবুক নিউটন মামা পানি পান করতে করতে ভাবলেন, পানির অণুগুলোর মধ্যে চার্জ সৃষ্টির মাধ্যমে কম খরচে জ্বালানি তৈরি করা যায় কি না। এমন সময় এক ভিখারি এসে করুণ কণ্ঠে বলল, ‘দুদিন ধরে কিছু খাইনি, দুইটা ট্যাকা দেন, আল্লাহ আপনার ভালো করব।’ নিউটন মামা তাঁর স্বভাববশেই জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি দুই দিন ধরে কী ধরনের খাবার খাননি?’ ভিখারি বলল, ‘বুঝলাম না মানেডা!’ মামা বুঝিয়ে বললেন, ‘মানে আপনি যে ধরনের খাবার খেতে পাননি, তা কি কঠিন? তরল নাকি গ্যাসীয়?’ ভিখারি বলল, ‘সেটা তো জানি না, গরিব মানুষ লেখাপড়ার সুযোগ পাই নাই। তাই এইসব ভালো বুঝি না।’ মামা বললেন, ‘খাবারটা শক্ত না নরম?’ তখন ভিখারি বলল, ‘শক্তই মনে হয়, ভাত তো শক্ত।’ মামা বললেন, ‘দুই দিন না খেলে শরীরের কোষকলার বিশেষ কোনো ক্ষতি হয় না। আমাদের শরীরে দৈনন্দিন কোষ সৃষ্টি হয় এবং ধ্বংস হয়। দুদিন না খেলে আপনি পেটব্যথায় ভুগলেও তেমন কোনো অসুখ হবে না।’ ভিখারি রাগ দেখিয়ে বলল, ‘দেহেন আপনার লগে কথা কইয়া আমার মূল্যবান ভিক্ষার সময় হারাইছি। এহন ট্যাকা না দিলে ছাড়ুম না। ট্যাকা দেওয়া লাগবই।’ মামা বললেন, ‘বেশ, আপনি কত টাকা চান?’
এক ভিখারি এসে করুণ কণ্ঠে বলল, ‘দুদিন ধরে কিছু খাইনি, দুইটা ট্যাকা দেন, আল্লাহ আপনার ভালো করব।’ নিউটন মামা তাঁর স্বভাববশেই জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি দুই দিন ধরে কী ধরনের খাবার খাননি?’ ভিখারি বলল, ‘বুঝলাম না মানেডা!’
—আপনার যা ইচ্ছা, মাগার ১০ টাকার নিচে দেওয়া যাইব না।
—১০ টাকার নোট তো নেই, ৫ টাকার কয়েন আছে। বলতে হবে, কয়েন বা পয়সাটা কি কঠিন? তরল নাকি গ্যাসীয়?’
—কঠিন
—এবার বলো তো, এটা ধাতু না অধাতু?
—অধাতু।
মামা বেশ রেগেমেগে বললেন, ‘আরে গর্দভ, তোমার শরীরের অণু-পরমাণু ভেঙে আয়ন বানাব আমি। এটা ধাতু। দেখতে পাচ্ছ না এর মধ্যে উজ্জ্বলতা বিদ্যমান।’
—আমি মূর্খ-সুর্খ মানুষ, ক্যামনে এডি জানমু!
—মূর্খ তো বুঝলাম, সুর্খ আবার কী? এ ধরনের উল্টাপাল্টা দিরুক্ত শব্দ ব্যবহার করবে না।
তারপর ভিখারি রেগে আগুন হয়ে বলল, ‘আচ্ছা বুঝলাম। এইবার ট্যাকা দেন।’
—আগে বলো, এটা ক্ষার ধাতু? মৃৎ ক্ষার ধাতু, নাকি কয়েন ধাতু?
ভিখারি রাগান্বিত হয়ে বলল, ‘আরে মিয়া, আমার লগে মশকারি করেন? ট্যাকা লাগব না, আপনার ট্যাকার গুল্লি মারি।’
তখন ছোট মামাও আগুন হয়ে বললেন, ‘রাগ দেখাও আমার সঙ্গে? আমার হাতের বিভবশক্তিকে গতিশক্তিতে রূপান্তরিত করে, হাতের পেশিশক্তি ব্যবহার করে এমনভাবে আঘাত করব যে তোমার শরীরের হাড়গুলোর অণু–পরমাণু বিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে। এমনকি তোমার ডিএনএকে আমি চেঞ্জ করে দেব। মেরে তোমার জড়তা কাটিয়ে দেব। এমনভাবে মারব, একসঙ্গে শব্দশক্তি, তাপশক্তি, চৌম্বকশক্তি, আলোকশক্তি সবই উত্পন্ন হবে। শরীরের সব গতিশক্তিই স্থির হয়ে যাবে। মারার ফলে এমন একটি তরল বের হবে, যা একটি সংযোজক কলা এবং যা ক্ষারীয় ঈষৎ লবণাক্ত ও লাল বর্ণের যোজক কলা। তোমাকে আরও এমন কষ্ট দেব যে তুমি পদার্থের চতুর্থ অবস্থা প্লাজমাতে পড়বে। তার ফলে তোমার শরীরে গলন হবে। তখন বুঝবে গলন ও গলনাঙ্ক কাকে বলে। তোকে মেরে আমি এত ছোট পরমাণু করব যে এভোগেেড্রা সংখ্যায়ও তোর জায়গা হবে না। তোমার শরীরের যোজক কলা দিয়ে অ্যাসিড বানাব আমি, তখন বুঝবি রাসায়নিক বিক্রিয়া কী!’
এত কিছু শোনার পর ভিখারি পুরোই ঘাবড়ে গেল। এরপর আর এক সেকেন্ডও দাঁড়াল না। এরপর সেই ভিখারিটিকে আর কখনো দেখা যায়নি আমাদের এলাকায়।