নিজের ও সাইকেলের সুরক্ষা

সাইকেল চালাতে কার না ভালো লাগে? আমরা যারা সাইকেল চালাই, তাদের কাছে সবচেয়ে বড় হুমকি হলো নিজের এবং পছন্দের সাইকেলটির নিরাপত্তা। ঢাকা বলো কিংবা পৃথিবীর যেকোনো জায়গাই বলো না কেন, পছন্দের সাইকেলটি নিজের বাসা ছাড়া আর কোথাও শতভাগ নিরাপদ নয়। কিন্তু সাইকেল তো আর বাসায় ফেলে রাখার জিনিস নয়, বলো! তাই সবার আগে যে জিনিসটি নিশ্চিত করতে হবে, তা হলো কীভাবে সাইকেলটি নিরাপদে রাখা যায়। তাহলে চলো, এখন জেনে নেওয়া যাক সাইকেলকে নিরাপদে রাখতে হলে কী কী করা এবং কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে—

ভালো মানের লক

সাইকেল নিরাপদে রাখতে হলে প্রথম তোমার থাকা চাই একটি ভালো মানসম্পন্ন লক (তালা)। বাজারে এখন অনেক ধরনের ও রংবেরঙের লক পাওয়া যায়। কিন্তু চকচক করলেই তো আর সোনা হয় না! তাই সাইকেলের যথাসম্ভব সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় লাগবে ভালো মানের একটি লক। আমাদের দেশে যারা নিয়মিত সাইকেল চালায়, তারা বেশির ভাগ মোবাজ তালা ও ৮ মিমি এস এসের (স্টেইনলেস স্টিল) শিকল ব্যবহার করে। কিন্তু অনেকে আবার সাধারণ লকের সঙ্গে ইংরেজি ডি (D) বর্ণের তালা ব্যবহার করে থাকে।

লক করে ফেলো সব!

অনেকেই ভুল করে কেবল সাইকেলের চাকায় কিংবা ফ্রেমে লক করে থাকে। আপাতদৃষ্টিতে সাইকেলটি সুরক্ষিত মনে হলেও তা কিন্তু সুরক্ষিত নয়। তখন যে কেউ চাইলেই চাকা অথবা ফ্রেমটি চুরি করতে পারে। তাই সাইকেলটি এমনভাবে লক করতে হবে, যাতে ফ্রেম এবং দুই চাকা লক হয়ে যায়। তাহলে সাইকেলটি চুরি হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।

নজরে রাখতে হবে খুঁটিনাটি জিনিসকেও

শুধু সাইকেলের ফ্রেম ও চাকার দিকে নজর রাখলে চলবে না। ভাবতে হবে ছোটখাটো জিনিস, যেমন বেল, টর্চ, ভিউ মিরর ইত্যাদির কথাও। এগুলোও কিন্তু কম মূল্যবান নয়। তাই নজর দিতে হবে এগুলোর প্রতিও।

রেখে দিয়ো চিহ্ন

এত কিছু করার পরও যদি তোমার সাইকেল চুরি হয়ে বা হারিয়ে যায়, তখন সাইকেলটি যাতে উদ্ধার করা যায়, তার জন্য রেখে দিতে পারো বিশেষ চিহ্ন। অধিকাংশ মানুষই চিহ্ন হিসেবে তার সাইকেলের চেসিস নম্বর (সাইকেলের ফ্রেমের তলায় থাকা এর প্রকার মৌলিক নম্বর) ও যে দোকান থেকে সাইকেলটি কিনেছে, তার রসিদ রেখে দেয়। সে ক্ষেত্রে তুমি চাইলেও এই উপায় অবলম্বন করতে পারো কিংবা চাইলে রেখে দিতে পারো একটি গোপন চিহ্ন, যেটি তুমি ছাড়া আর কেউ জানবে না। এবং অবশ্যই মনে রাখতে হবে নিজের সাইকেলের ব্র্যান্ড, উচ্চতা ও রং। আর নিজের সাইকেলের সঙ্গে একটি সেলফিও তুলে রাখতে পারো প্রমাণ হিসেবে।

এবার তো গেল সাইকেলের নিরাপত্তার কথা ভাবার পালা। এখন আসা যাক সাইকেল চালানোর সময় নিজের সুরক্ষার কথা নিয়ে। তোমাদের মনে হতেই পারে, ধুর! সাইকেল চালাতে আবার কিছু লাগে নাকি? কিন্তু না। একটি জীবন অনেক মূল্যবান। সাইকেল চালানোর সময়ও ঘটে যেতে পারে মারাত্মক কোনো দুর্ঘটনা। এবং এর কিছু কিছু দুর্ঘটনার শিকার আমিও হয়েছি। তাই সাইকেল চালাতে হলেও নিজের সুরক্ষার কথা ভাবতে হবে। তাহলে চলো, এবার জেনে নেওয়া যাক প্রয়োজনীয় কিছু সেফটি গিয়ার সম্পর্কে—

পোশাক-আশাক

পোশাক-আশাকও সেফটি গিয়ারের অংশ। সাইকেল চালানোর জন্য খুব বেশি ঢিলা অথবা খুব বেশি টাইট জামাকাপড় পরা উচিত নয়। কারণ, ঢিলা জামাকাপড় পরলে তা অসাবধানতার কারণে চেইনে বা অন্য কোথাও আটকে গিয়ে ঘটে যেতে পারে অনেক বড় কোনো দুর্ঘটনা। আবার খুব বেশি টাইট জামাকাপড় পরলে সাইকেল চালাতে অস্বস্তি লাগতে পারে। সাইকেল উজ্জ্বল রঙের জামাকাপড় পরে চালানো উচিত। তাহলে অন্যরা দূর থেকে তোমাকে দেখতে পারবে এবং দুর্ঘটনা কম ঘটবে। সাইকেল চালানোর সময় অবশ্যই জুতা বা কেডস পরে চালাতে হবে। তাহলে পায়ে ব্যথা পাওয়ার ভয় অনেকটাই কমে যায়। কিন্তু জুতা অবশ্যই মোজাসহ পরতে হবে। তা না হলে পায়ে ফোসকা পড়ে যেতে পারে কিন্তু!

হেলমেট

সাইকেল চালানোর জন্যও হেলমেট পরা জরুরি। সাইকেল চালাতে গিয়েও মাথায় মারাত্মকভাবে আঘাত লাগতে পারে। এর থেকে ঘটে যেতে পারে মৃত্যুও। পৃথিবীর অনেক মানুষই হেলমেট পরার কারণে মৃত্যুর কোল থেকে ফিরে এসেছে। তাই নিজের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে হেলমেট পরে সাইকেল চালাতে ভুলো না কিন্তু!

গ্লাভস ও সেফটি চশমা

হঠাৎ করে পড়ে যাওয়ার সময় আমরা আমাদের দেহের অন্য অঙ্গগুলোকে বাঁচাতে হাত ব্যবহার করে থাকি। সাইকেল থেকে পড়ে যাওয়ার ফলে হাতের তালু ছিলে যেতে পারে। তাই হাতের তালুকে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই গ্লাভসের কথা ভুলে গেলে চলবে না কিন্তু। চোখ হলো মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সাইকেল চালানোর সময় চোখে ঢুকে যেতে পারে নানা রকম ক্ষতিকর পদার্থ। তাই চোখের সুরক্ষার জন্যও পরতে হবে বিশেষ ধরনের চশমা, যা তোমাকে সাহায্য করবে রোদ ও ক্ষতিকর পদার্থ থেকে চোখকে বাঁচাতে।

তাহলে আর দেরি কিসের? সাইকেলটির সঙ্গে লক ও সেফটি গিয়ার পরে বেরিয়ে যাও কোনো রাইডের উদ্দেশে।