নিজের মতো করে নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করো

প্রিয় মনোবন্ধু,

আমি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি। পড়াশোনা, নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি, ছবি আঁকা, খেলাধুলা, সাঁতার ইত্যাদিতে খুব ভালো। তবে মা কোনো কিছুতেই কোনোভাবে সন্তুষ্ট নন। তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষায় আমার জীবন অতিষ্ঠ। তিনি সারাক্ষণ আমি কতটা খারাপ, তার কথা বলেন এবং অন্যের সঙ্গে তুলনা করেন। সম্প্রতি তিনি অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় বাসার যাবতীয় কাজের ভার আমার ওপর এসে পড়েছে। এদিকে আমার পরীক্ষাও চলমান। বাসার কাজ, ছোট বোনের খেয়াল রাখা, টুকটাক রান্না ও পড়াশোনা একসঙ্গে খুব কষ্টকর। তারপরও প্রতিদিন তাঁর অকথ্য গালাগাল শুনতে হয়। শেষ কবে উনি আমার সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলেছেন, আমার মনে পড়ে না। পান থেকে চুন খসলেই তিনি আমাকে মারধর করেন। কদিন আগে আমার হাতে বাড়ি দেওয়ায় চারটি আঙুল নাড়াতে পারছি না। আমার বাবা বড় পদের একটি সরকারি চাকরি করেন। তবু আমার মা আমার স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেন না। আমার সঙ্গে তাঁর ব্যবহারের কথা না হয় না–ই বললাম। মা আমাকে পদে পদে মিথ্যা অপবাদ দেন। আমার মা-বাবার সম্পর্কও বিশেষ ভালো নয়। আমার কোনো কিছু কিনতে চাওয়া, ঘুরতে যাওয়া তিনি পছন্দ করেন না। ফলে বেশ কয়েক মাস আমি বাসার বাইরে পা দিইনি। কারোর ওপর রাগ হলে তিনি আমাকে মারধর করে সেটার শোধ নেন। সব মিলিয়ে আমি আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনো পথ দেখতে পাচ্ছি না। আমি ধীরে ধীরে মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

বি.দ্র.: ‘মায়ের সঙ্গে আলোচনা করো, বোঝাও’ এই রকম সমাধান দয়া করে দেবেন না। এগুলো বললে আমাকে আরও মার খেতে হবে।

উত্তর: তোমার প্রতি প্রথম উপদেশ হচ্ছে মায়ের সঙ্গে আলোচনা করে ওনাকে কোনো কিছু বোঝানোর প্রয়োজন নেই। তবে তোমার প্রতি সবচেয়ে বড় উপদেশ হচ্ছে আত্মহত্যা কোনো সমস্যার সমাধান নয়, মুক্তির কোনো উপায় নয়। তুমি তোমার লেখায় একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে, সেটা হচ্ছে কারও ওপর রাগ হলে তোমার মা তোমাকে মারধর করেন এবং তোমার বাবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা বিশেষ ভালো নয়। এর থেকে আমরা বুঝতে পারি যে তোমার মা নিজেই স্বস্তিতে নেই, তিনি নিজেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমার মনে হয় তাঁর মানসিক সহায়তা খুব জরুরি। তুমি নিশ্চয়ই তোমার মাকে খুব ভালোবাসো, তাঁর ভালো চাও। সে ক্ষেত্রে তোমার নিজের সুস্থতার জন্য, মানসিকভাবে ভালো থাকার জন্য তোমার মায়ের মানসিক শান্তি জরুরি।

এ ক্ষেত্রে যেহেতু মায়ের সঙ্গে আলোচনা সম্ভব নয়, তখন তুমি তোমার বাবা বা পরিবারের অন্য কোনো সদস্যর সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করতে পারো, কীভাবে মাকে সাহায্য করা যায়। তোমার মা যদি মানসিক প্রশান্তিতে থাকেন, মানসিক চাপমুক্ত থাকেন তবে তোমার প্রতি তাঁর আচরণ অনেক স্নেহপ্রবণ হবে এবং নিশ্চয়ই তিনি তোমার প্রতি যত্ন নেবেন। আর যত দিন না তুমি মায়ের সমস্যার সমাধান করতে পারছ, তত দিন তুমি নিজেই নিজের মনের যত্ন নাও, অন্য কারও আচরণে (মা হলেও) মনে কষ্ট না পেয়ে ভাবতে শেখো এটি তোমার কোনো দুর্বলতা নয়, যিনি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছেন, সেটি তাঁর দুর্বলতা। তাই তুমি নিজের মতো করে নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করো। বই পড়ো, গান শোনো। পরিবারের অন্য সদস্য, স্কুলশিক্ষক বা একটু বড় কারও সঙ্গে বিষয়গুলো শেয়ার করতে পারো, আমাদের উপদেশগুলো তাঁদের দেখাতে পারো। তাঁরাও তোমাকে সাহায্য করতে পারবেন। আর হ্যাঁ, যারা কিআ পড়ে তারা কিন্তু সাহসী আর স্মার্ট, তারা কখনো আত্মহত্যার মতো ভুল পথে পা দিতে পারে না, এমনকি আত্মহত্যার কথা চিন্তাও করতে পারে না। ভালো থেকো, নিজের মনের যত্ন নিয়ো।

এই বিভাগে তোমরা তোমাদের মানসিক নানা সমস্যা, যা তোমার শিক্ষক, মা-বাবা বা অন্য কাউকে বলতে পারছ না, তা আমাদের লিখে পাঠাও। পাঠানোর ঠিকানা—মনোবন্ধু, কিশোর আলো, ১৯ কারওয়ান বাজার, ঢাকা। ইমেইলে পাঠাতে হলে সাবজেক্টে লিখবে - ‘মনোবন্ধু’, তারপর তোমার সমস্যাটি ইউনিকোড ফরম্যাটে লিখে পেস্ট করে দেবে মেইলের বডিতে। নাম, বয়স লিখতে ভুলবে না। তোমার সমস্যা বোঝার ক্ষেত্রে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ।