নেতা ভাই

আমাদের স্কুলে ‘নেতা ভাই’ নামের এক মজার চরিত্র আছে। নিজেকে অনেক বড় নেতা মনে করে সে। তার নাম ইমতিয়াজ। সবাই ইমতিয়াজকে নেতা ভাই বলে বটে, কেউ কিন্তু ওকে নেতা হিসেবে মেনে নেয় না। কারণ, ও নিজেকে নেতা ভাবে ঠিকই, কিন্তু কোনো জায়গায় বা কারও ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে আজ পর্যন্ত সক্ষম হয়নি। বরং নেতাগিরি করতে গিয়ে উল্টো নিজেই ধরা খায় আর সবাইকে বিনোদন দেয়।

কয়েক বছর আগে সে একটা ঘটনা ঘটিয়েছিল। মূলত এরপর থেকেই ‘নেতা ভাই’ নামের উত্পত্তি।

তখন আমরা ক্লাস সেভেনে পড়তাম। একদিন ক্লাস নাইনের সিনিয়র ভাইদের মধ্যে তুমুল ঝগড়া চলছিল। কোনো একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে চড়াও হয়ে উঠেছিল একজন আরেকজনের ওপর। সে ঘটনার জের ধরে দুই গ্রুপের জন্ম। এক গ্রুপের সঙ্গে আরেক গ্রুপের মারামারি। তখনো ক্লাস শুরুর ঘণ্টা পড়েনি। তখন আমাদের অর্থাৎ ক্লাস সেভেনের ক্লাসরুমের সামনে এসে ঝগড়া করছিল ক্লাস নাইনের ভাইয়েরা। তাদের এই ঝামেলায় আমরা কেউই জড়াইনি। তবে ইমতিয়াজ স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা না করে ঝামেলার মাঝখানে গিয়ে বলে উঠল, ‘এসব কী? আমাদের ক্লাসের সামনে এত মারামারি চলবে না, যা করার তা অন্য কোথাও গিয়ে করো।’ এই মহাবচন শুনে তাদের কথা–কাটাকাটি থেমে গেল। সবাই হাঁ করে ইমতিয়াজের দিকে তাকিয়ে ছিল। ইমতিয়াজ ভাবল, ‘বাহ্‌, ভালোই বলেছি। আমার এক কথায় সব বড় ভাই দেখা যায় চুপ হয়ে গেছে!’

ক্লাস নাইনের সাফিন ভাই তখন ইমতিয়াজকে জিজ্ঞেস করল, ‘তোমার নাম ইমতিয়াজ না? তোমার কথা অনেক শুনেছি আমি।’ ইমতিয়াজ ভাবল, ‘বাহ্‌, বড় ভাইরাও আমাকে চেনে।’

জবাব দিল, ‘হুম, আমিই সেই ইমতিয়াজ।’

এবার সাফিন ভাই বলল, ‘চলো, আজ তোমাকে চকলেট খাওয়াই। আমাদের সঙ্গে আসো।’ ইমতিয়াজ ভাবল, ‘বাহ্‌,! আমার বীরত্বে নিশ্চয়ই বড় ভাইয়েরা মুগ্ধ হয়েছে। আমাকে তাদের সঙ্গে নিতে চাচ্ছে। যাওয়া যাক। এখন থেকে বড় ভাইদের সঙ্গে থাকব। তাহলে আমার ক্লাসের সবাই আমাকে ভয় পাবে।’

যেই ভাবা সেই কাজ। গর্বের সঙ্গে ক্লাস নাইনের বড় ভাইদের সঙ্গে গেল সে। আমাদের ক্লাসের সবাই বুঝতে পেরেছিল ইমতিয়াজের সঙ্গে কী হতে চলেছে, শুধু ইমতিয়াজই বোঝেনি। আধঘণ্টা পর ইমতিয়াজ ফিরে এল ক্লাসে। ততক্ষণে ক্লাস শুরু হয়েছে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ও বলল, ‘মে আই কাম ইন ম্যাডাম?’ সবাই তার দিকে তাকাল। দেখল ইমতিয়াজ চোখ কচলাতে কচলাতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ক্লাসে ঢুকছে। তার চুল এলোমেলো। মুখ লাল, চোখের নিচে লালচে কালো দাগ। এই দৃশ্য দেখে কারও বুঝতে বাকি রইল না কী হয়েছে তার সঙ্গে। পুরো ক্লাস হাসিতে ফেটে পড়ল। বেচারা ইমতিয়াজ খুবই লজ্জা পেল এই ঘটনায়। এরপর থেকে ইমতিয়াজের নাম হয়ে উঠল ‘নেতা ভাই’। এই নামে ডেকে সবাই তাকে খ্যাপাতে চায়। কিন্তু এই নামে কেউ ডাকলে ইমতিয়াজের উল্টো গর্বে বুক ভরে যায়। যদিও এখন পর্যন্ত সে যোগ্য নেতা হয়ে উঠতে পারেনি।