মিনাদের গরুটা বেশ বড় ও মোটাতাজা হয়েছে। মিনার বাবার ইচ্ছা গরুটা এবার কোরবানির হাটে বিক্রি করবে। কিন্তু মিনা তা শুনে ভেঙে পড়ল। গরুটা যে মিনার ছোট্টবেলার বন্ধু। মিনা বাবাকে তার মনের অবস্থা বোঝানোর চেষ্টা করল। কিন্তু মিনার বাবার সিদ্ধান্ত স্থির। তিনি মিনাকে বললেন, বাড়ি বসে ওকে খাইয়ে লাভ কি হবে শুনি! নিজেদের খেতে দেয় কে! বরং ওকে বেচে মোটা অঙ্কের টাকা পাব। মিনা বুঝল, কেউ তার মনের অবস্থা বুঝবে না। মিনা বুঝল তাকে কিছু একটা করতে হবে। মিনা ঠিক করল, রাতের বেলা চুপিচুপি ওর বাঁধন খুলে দেবে, যেন ও ছুটে পালাতে পারে। মিনার সব কথা ও যে বোঝে! মিনা সেদিন রাতে ঘুমাল না। সবাই যখন ঘুমিয়ে গেল, মিনা চুপিচুপি গোয়ালঘরে গেল। গরুটিকে প্রথমে কাঁদতে কাঁদতে আদর করল। তারপর বাঁধন খুলে দিয়ে বলল, যা লালু, পালিয়ে যা। গরুটির চোখ থেকেও পানি ঝরতে লাগল। এমন সময় মিনা লাঠি দিয়ে মারতে লাগল আর বলল, যা, চলে যা বলছি। লালু হাম্বা হাম্বা করে ডাকতে লাগল। কিছুক্ষণ মারার পর মিনা নিজেই কাঁদতে লাগল আর ওকে আদর করল। মিনার মা আড়াল থেকে সব দেখল। তারপর মিনার সামনে গিয়ে মিনার বাবাকে বোঝানোর আশ্বাস দিল, পরের দিন মিনার মা মিনার বাবাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করল। কিন্তু মিনার বাবা কোনো কথাই শুনল না। বরং বলল, গরুটাকে সেদিনই হাটে নিয়ে যাবে। গরুটা যত দিন থাকবে, তত মায়া বাড়বে। মিনার বাবা গরুটিকে নিয়ে হাটে চলল। হাঁটে মিনার বাবার সঙ্গে তার এক পাওনাদারের দেখা হলো। দুজনের মধ্যে অর্থসংক্রান্ত লেনদেন নিয়ে কথা–কাটাকাটি চলল। একপর্যায়ে মারামারি শুরু হলো। যেই-না লোকটি মিনার বাবাকে মারতে গেল, অমনি গরুটি অর্থাৎ লালু শিং দিয়ে লোকটিকে সজোরে গুঁতা দিল। লোকটি পড়ে গেল। তারপর কোনো রকমে উঠে দিল ভোঁ-দৌড়। মিনার বাবা হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর লালুকে বলল, লালু রে! আমি স্বার্থে অন্ধ হয়ে গেছিলাম। তুই আমার চোখ খুলে দিয়েছিস। চল, বাড়ি চল! লালুকে আবার ফিরে পেয়ে আনন্দে মিনা আত্মহারা হয়ে গেল।